অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: টানা দু’দিন শিশুপ্রহর ও ছুটির ভিড় সামলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ভিড় তাই কিছুটা কম।
রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) মেলার সপ্তম দিনের বিকেলেই যথারীতি দুয়ার খুলে মেলার। ফটক খোলার আগে থেকে ছিল অপেক্ষা কারও কারও। সন্ধ্যায় ভিড় বাড়ে। আলোচনা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, মোড়ক উন্মোচন, নতুন বইয়ের সংখ্যা ঘোষণা- সব মিলিয়ে কর্মদিবসের চেনা রূপ পাওয়া যায়।
বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী অংশে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের কাছে দেখা মেলে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সুভাষ সিংহ রায়ের।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে কলকাতার বইমেলার তুলনা করেন নিজের তৃপ্তির কথাই যেন বলতে চাইলেন।
বাংলানিউজকে সুভাষ বলেন, কলকাতা বইমেলাটি বারোয়ারি মেলা হয়ে গেছে। সেখানে মানুষের ঘোরাফেরায় আগ্রহ বেশি। এখানে যারা আসছেন, তারাও আড্ডা দিচ্ছেন, ঘুরছেন, তবে অন্তত একটি হলেও বই কিনছেন তারা। গত কয়েকদিনের চিত্র তাই বলে।
‘পৃথিবীর অনন্য ও অভূতপূর্ব একটি মেলা এটি’- বলেন সুভাষ। বাংলা একাডেমিতে দেখা মেলে শিশু সাহিত্যিক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আলী ইমামের।
তিনি এতোটা উচ্ছ্বসিত না হলেও হতাশ নন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ৭০ শতাংশ আগত আসেন ঘুরতে, বাকিরা কিনতে। ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এটি বলছি।
স্টলে বসা প্রকাশক ও কর্মীরা মেলার চিত্রকে স্বাভাবিক বলছেন। প্রতিবছরই মেলার চিত্রে মিল থাকায় তারা আগে থেকেই অনুমান করতে পারেন, কোনদিন চিত্রে কী পরিবর্তন আসতে পারে। কর্মদিবসে বাঁধভাঙা জোয়ারের আশা তারা কখনোই করেন না বলে জানান।
প্রগতী প্রকাশনীর আসরার মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, আজ বিক্রি খারাপ হচ্ছে না। গত দু’দিন ছুটি থাকায় আমাদের প্রত্যাশা বেশি বেড়ে গেছে। কিন্তু আজ সাধারণ দিন-এটা ভুলে গেলে চলবে না। সে অনুসারে খারাপ নয় দিনটি। ‘মেলা জমতে শুরু করেছে, আর পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই’- বলেন তিনি।
মেলার সপ্তম দিনে নতুন ১১৮ বই
বাংলা একাডেমির তথ্য বলছে- গ্রন্থমেলার সপ্তম দিনে ১১৮ নতুন বই জমা পড়েছে তথ্যকেন্দ্রে। মোড়ক উন্মোচন হয়েছে উল্লেখযোগ্য ৩টি নতুন বইয়ের। এ নিয়ে চলতি মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৯২।
এর মধ্যে গল্পগ্রন্থ ১৪, উপন্যাস ২০, প্রবন্ধ ০৮, কবিতা ৩৩, গবেষণা ৯, ছড়া ৩, শিশুসাহিত্য ৩, জীবনী ২, মুক্তিযুদ্ধ ৪, ভ্রমণ ২, ইতিহাস ২, রম্য/ধাঁধা ৪, ধর্মীয় ২, সায়েন্স ফিকশন ২ এবং অন্যান্য গ্রন্থ এসেছে ১৯টি।
নতুন আসা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে শামসুর রাহমানের ‘নির্বাচিত সেরা সাত’, আল মাহমুদের ‘নির্বাচিত সেরা সাত’, নির্মলেন্দু গুণের ‘নির্বাচিত সেরা সাত’ ও হরিশংকর জলদাসের ‘কসবি’, অবসর; যতীন সরকারের ‘সাকোঁ বাঁধার প্রত্যয়’ ও মুনতাসীর মামুনের ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দুই’, কথা প্রকাশ; হাসান আজিজুল হকের ‘দ্য ফায়ার বার্ড’ ও শাকুর মজিদের ‘মাহিউবার গেন্দাকুল কিংবা ফৌজদারের হাটের মেরিগোল্ড’, পাঞ্জেরি; আখতার হোসেনের ‘ভোজের ভোজবাজি’, ময়ূরপঙ্খী; আলম তালুকদারের ‘ষোলো কোটির ভোট’ ও সাইদ হাসান দারার ‘উপাখ্যান: মুজিব ইয়াহিয়া ভুট্টো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ’, পারভেজ চৌধুরী অনূদিত ‘কানাডার সমকালীন কবিতা’, সময় প্রকাশন; আমিনুর রহমান সম্পাদিত ‘পৃথিবী সেরা সমকালীন চার কবির কবিতা’, অ্যাডর্ন; আনিসুল হকের ‘গুড্ডুবুড়ার হাসির কা- গুড্ডুবুড়ার দারুণ কীর্তি’, ফরিদুর রেজা সাগরের ‘টেলিভিশনে ছোট কাকু’, অনন্যা; সুমন্ত আসলামের ‘বাউন্ডুলে ১৫’ ও তৌহিদুর রহমানের ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’, পার্ল পাবলিকেশনস; ইজাজ আহ্মেদ মিলনের ‘কোনখানে রাখবো প্রণাম’, বিভাস, বিকাশ সিএইচ ভৌমিকের ‘পরিচয় হীনা’ কাকলী প্রকাশনী থেকে।
বাংলা একাডেমির নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
বাংলা একাডেমি থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত সালাহ্উদ্দীন আহমদ সংবর্ধনাগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান বিকেল সাড়ে ৪টায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের হুমায়ূন আহমেদ চত্বরে।
এতে অংশ নেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এবং বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক ড. গোলাম মুরশিদ।
গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী মামুন কায়সার, মূল্য রাখা হয়েছে ৭০০ টাকা।
এছাড়া কালি কলম প্রকাশনা থেকে এম আর ইমনের ‘শেষ চিঠি’ এবং কবি প্রকাশনী থেকে আলাউদ্দিন শিকদারের ‘নিঃশব্দে বিড়ালের পায়ে’ বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।
রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী: অনুবাদ কার্যক্রম, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম।
আলোচনায় অংশগ্রহণ নেন ড. নিয়াজ জামান, অধ্যাপক কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, ড. ফকরুল আলম এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, প্রয়োজন একাডেমির অভিধান বিভাগের সঙ্গে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যক্তি পর্যায়ে বুদ্ধিজীবী ও অনুবাদকদের সংযোগ স্থাপন করে একটি সুনির্দিষ্ট অনুবাদ নির্দেশনা প্রণয়ন করে অনুবাদ কার্যক্রমকে গতিশীল এবং একই সঙ্গে মানসম্পন্ন করে তোলা।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অনুবাদের বিষয়টি কেবল ভাষাগত নয়, একই সঙ্গে দার্শনিকও বটে। তাই বাংলা একাডেমিকে তার অনুবাদ কার্যক্রমের সংখ্যাগত দিকের পাশাপাশি এর অর্ন্তবস্তুর দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গোলাম কুদ্দুছের পরিচালায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’র শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। কণ্ঠশিল্পী লিলি ইসলাম, ফাহিমা হোসেন চৌধুরী, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, অণিমা রায়, শরীফ মো. সজীবের পরিবেশনায় মুগ্ধ হন আগতরা।
যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), সুনীল কুমার সরকার (কী- বোর্ড), আবু কামাল (বেহালা) এবং নাজমুল আলম খান (মন্দিরা)।
এছাড়া যারা এলেন
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, গবেষক ও অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ, প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান, ড. ইকবাল আর্সলান, ড. তপন বাগচী প্রমুখ মেলা ঘুরে গেলেন এদিন।
অষ্টম দিনের (সোমবার) আয়োজন:
মেলার অষ্টম দিনে বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী: পাঠ্যপুস্তক রচনা, অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুব্রত বড়ুয়া। আলোচনায় অংশ নেবেন রতন সিদ্দিকী, মলয় ভৌমিক ও নূরুন্নাহার মুক্তা। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক অজয় রায়।
সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মতোই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে বলে একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
এসকেএস/আইএ/এসএইচ