ঢাকা: মোস্তফা কামাল যে রম্য লেখেন তা নাকি তার স্ত্রী নিজেও বিশ্বাস করতে চান না! বিষ্ময়ভরা তার জিজ্ঞাসা থাকে, ‘এগুলো তুমি লেখো কেমন করে!’ অথচ অনেক পাঠক মোস্তফা কামালের রঙ্গব্যঙ্গের লেখালেখি দিয়েও চেনেন। দৈনিক কালের কণ্ঠের এই নির্বাহী সম্পাদকের রঙ্গব্যঙ্গ ধারাবাহিকভাবেই প্রকাশিত হয়।
তবে সে আলোচনা ফাঁদতে নয়, মোস্তফা কামাল বই মেলায় এবার পুরো একটি হাসির ও মজার কাহিনীভিত্তিক উপন্যাস নিয়ে এসেছেন। নাম তেলবাজ। কথা হচ্ছে বই নিয়ে। তেল দেওয়ার হেন পথ-পদ্ধতি নেই যা তার এই উপন্যাসে উঠে আসেনি তেলায়েত নামের চরিত্রের মধ্য দিয়ে। ধ্রুব এষের আঁকা টেবিল চামচের এক চামচ তেলের মলাটে তেলায়েতের তেলবাজির তাবত কাহিনী জানতে এবারের বই মেলার রম্য পাঠকদের যেতে হবে অনন্যা প্রকাশনীর স্টলে।
কিন্তু যারা মোস্তফা কামালের রম্যে নয়, মজে আছেন গদ্যে-উপন্যাসে তারা হতাশ হবেন না। লেখালেখির জগতে টানা ২৫টি বছর পার করে দিয়ে এবারের রজতজয়ন্তীর মাইল ফলকে মোস্তফা কামাল চেয়েছিলেন বড় একটি কাজ করে তা পাঠকের সামনে হাজির করবেন। নিজেকে দেওয়া কথা রেখেছেন। আর তাই লিখেছেন ‘পারমিতাকে শুধু বাঁচাতে চেয়েছি’।
লেখকের সঙ্গে কথপোকথনে জানা গেলো তিনি সত্যিই পারমিতাকে বাঁচাতে চেয়েছেন। পারমিতার ক্যান্সার। আর সে মধ্যবিত্ত ঘরের নারী। টিকে থাকার লড়াইয়ে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যাঁতাকল আবার পুরুষেই শ্রেষ্ঠ বন্ধুত্ব। বিয়ে, বিচ্ছেদ, দহন, নিগ্রহ, রোগ-বালাই এসবের মাঝেই এগিয়ে যাওয়ার কাহিনীর মাঝেও রয়েছে প্রাণখুলে শ্বাস নেওয়ার মতো স্বাধীনতা, চেতনা।
ঢাকার কোনও এক নারী মোস্তফা কামালের ‘জননী’ পড়ার পর তাকে খুঁজে বের করে তবেই নিজের গল্পটি বলেছেন। আর তা দীর্ঘ সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে শুনে তবেই রচনা করেছেন এই উপন্যাস-‘পারমিতাকে শুধু বাঁচাতে চেয়েছি’। আটপৌড়ে শাড়ি পরে আকাশের পানে দৃষ্টি পেতে মুখের দুই দিক চেপে পারমিতা মুক্তিই খোঁজেন সমাজের সব জঞ্জাল থেকে। প্রচ্ছদে বুঝি সেটাই এঁকেছেন ধ্রুব এষ। পাওয়া যাচ্ছে মেলায় পার্ল পাবলিকেশন্স’র স্টলে।
‘রাশেদের রাতদিন’ মোস্তফা কামালের এবারের কিশোর উপন্যাস। কিশোরদের জন্য কেনো লেখেন? সে প্রশ্নে বললেন, কিশোররা তাদের নিজেদের কথা বেশি বেশি শুনতে ও পড়তে চায়। তাই ওদের মতো চরিত্র সৃষ্টি করে ওদের নিজেদেরই কাহিনীগুলো গল্প আকারে তুলে ধরলে কিশোর-কিশোরীরা খুশি হয়। ‘রাশেদের রাতদিন’ এ ওদের ভেতরে পরোপকারে আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা রয়েছে। লেখক আশা করছেন কিশোররা পড়ে মজাই কেবল পাবে না, তাদের ভেতর এ নিয়ে শিক্ষাটিও তৈরি হবে।
আর বরাবরের মতো এবারও একটি সায়েন্স ফিকশন বই মেলায় এনেছেন। তবে এটি একটি সমগ্র। এ নিয়ে ১০টি সায়েন্স ফিকশন লেখা হলো মোস্তফা কামালের এটি দ্বিতীয় সমগ্র। প্রথমটির মতো এটিতেও রয়েছে পাঁচটি উপন্যাস এক মলাটে। এবার ‘মিরাকুলাস নাম্বার’, ‘সায়েন্টিস্ট শায়লার যত কাণ্ড’, ‘অন্ধকার গ্রহে লিরা’, ‘সায়েন্টিস্ট শায়লা’ ও ‘বিমান রহস্য’ স্থান পেয়েছে। সায়েন্স ফিকশন লিখতে মোস্তফা কামাল মনে করেন স্কাই ইজ দ্য লিমিট। আকাশে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাবেন। তো নতুন কোনও গ্রহ আবিষ্কৃত হলে সেটাই হবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর প্লট। তবে নিজেও এক দুটি গ্রহ আবিষ্কার করে নেওয়া যায়। আগামিতে সেই পরিকল্পনাই রয়েছে মোস্তফা কামালের।
পঁচিশ বছরে মোট ৮৫টি বই লিখেছেন মোস্তফা কামাল। এত লেখালেখি, তার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে? সে প্রশ্নে বললেন, লেখাই লেখকের অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখি। আর লেখাটাকে ধর্ম মেনে লিখে যাই। তাই এগিয়ে যায়। বছর শেষে কয়েকটি বইয়ের কনটেন্ট জমা পড়ে কম্পিউটারে। ফলে চার-পাঁচটা বই হয়ে যায়।
পঁচিশ বছর লেখালেখিতে পূর্ণ করে এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ, আরও সাহিত্যনির্ভর লেখালেখিতে বেশি বেশি মনোনিবেশ করার প্রত্যয় জানালেন মোস্তফা কামাল।
বাংলাদেশ সময় ২০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬
এমএমকে