অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিন অতিবাহিত হতে চললেও মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশনা সংস্থা জাগৃতি-শুদ্ধস্বরের খোঁজ কেউ রাখছে না বলে মন্তব্য করেছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
গ্রন্থমেলায় বাংলানিউজের সঙ্গে ক্ষণিকের আলাপচারিতায় এ বিষয়ে নিজের মন্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই দুই প্রকাশনা সংস্থা (জাগৃতি-শুদ্ধস্বর) আক্রমণের শিকার। নির্মমভাবে তাদের আক্রমণ করা হয়েছে। যা আমাদের কলঙ্ক। আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এবার মেলায় এসে এই দুই প্রতিষ্ঠানের স্টলের সামনে আমি দাঁড়িয়ে থেকেছি, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে বলবো- এতো বড় একটি আয়োজন গ্রন্থমেলার, তবে কেউ তো তাদের কথা বলছেন না, খোঁজ নিচ্ছেন না! শুদ্ধস্বর স্টল সাজিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একবারে শেষ প্রান্তে আর জাগৃতি মাঝখানে একলা পড়ে আছে। এটি তো কর্তৃপক্ষের অবহেলা মনে করি।
প্রশ্ন ছিল এ বিষয়টিকে বড় করে দেখবার কারণগুলো কী? উত্তরে তিনি বলেন, আক্রমণগুলো শুধু একটি সাধারণ ঘটনাই নয়। মত প্রকাশের বিরুদ্ধে আঘাত করে দমানোর অপচেষ্টা এগুলো। আমি তাদের সহানুভূতি দিতে এবং তারা যেন শোক কাটিয়ে সাহস পায় সে জন্য বারবার তাদের স্টলে যাচ্ছি। কিন্তু আমি মেলা কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে অবহেলা দেখেছি। বাংলা একাডেমি এবং প্রশাসনের আরও মূল্যায়নের দরকার ছিল। শুধু লটারিতে স্টল দিয়েই নয়- বিশেষ বিবেচনা থাকতে পারতো তাদের বেলায়।
এসব বিষয়ে তো আপনি বইও লিখেছেন এবার, তাই কি? উত্তরে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অনন্ত আমরা চুপ থাকবো না’ শিরোনামে একটি বই এলো এবার। মত ও পথ প্রকাশনী বের করলো গ্রন্থটি। বিষয় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশের ওপর লেখা। আসলে কণ্ঠরোধ করে কিছু হবে না, আমি সেটিই বলতে চাই।
তিনি যোগ করেন, এছাড়া ‘চক্রবর্তীর ঘরে ফেরা’ শিরোনামে এ বছর একটি ছোট গল্পের বইও প্রকাশিত হলো তার।
দেশের সমকালীন লেখালেখি এবং তরুণদের নিয়ে নিজস্ব মতবাদ তুলে ধরে এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, অতীতে ভালো কাজ হতো আর এখন হচ্ছে না, এমনটি সঠিক নয়। তবে এখন তরুণদের দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যা থেকে বেরিয়ে এলে আরও ভালো কাজ করা সম্ভব, শুধু চাই নিষ্ঠা।
গুলতেকিনের কাব্যগ্রন্থের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কবিতায় তিনি খুবই ভালো কাজ করেছেন। অন্য তরুণরাও অসাধারণ করছে। এছাড়াও গবেষণা কার্যক্রম ভালো হচ্ছে। আমি খুবই আশাবাদী, কারণ তরুণরাই এই সাহিত্যকে এগিয়ে নেবে। আগাছার আধিক্য থাকলেও সৃষ্টিশীল কাজও কম হচ্ছে না।
বর্তমান প্রজন্ম বা তরুণরা সাহিত্য চর্চার চেয়ে প্রযুক্তির বিষয়ে বেশি আগ্রহী নয় কি? এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ, প্রযুক্তির বিস্ফোরণ চলছে। তাই সময়টি তথ্যের অবারিত সুযোগের। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তথ্য নিতে হবে, জানতে হবে। শুধু বুঝতে হবে কোনটি সঠিক এবং সত্য তথ্য। ইতিহাস-ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে কোনো আপোস নয়। তবেই আমরা এগিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, অনলাইন মিডিয়া অর্থাৎ নিউ মিডিয়া এখন প্রিন্ট ভার্সনকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলানিউজ বাংলাদেশে যার একটি বড় উদাহরণ। বাংলানিউজ জনপ্রিয়তার দিক দিয়েও সব অনলাইনের চেয়ে এগিয়ে। নতুন এই ধারাকে আমি স্বাগত জানাই। প্রযুক্তির কল্যাণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। সাহিত্যের কল্যাণে এই ধারাকে আমাদের ব্যবহার করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
আইএ/এমজেএফ