ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

বইমেলায় মোস্তফা মামুনের ৬ বই

সাহিত্যে চাইলেই সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারি

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
সাহিত্যে চাইলেই সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারি

ঢাকা: “আমরা যারা ক্রিকেট লিখি, তাদেরও কষ্ট-আনন্দ থাকে। দেশের খেলোয়াড়রাতো বটেই দেশের বাইরেও অনেক প্রিয় খেলোয়াড় থাকে যাদের মাঠের পারফরম্যান্স আমাদের খুশি করে আবার কষ্ট দেয়।

প্রিয় ক্রিকেটারের মাঠের পারফরম্যান্সে আমার কোনও ভূমিকা থাকে না, রাখতেও পারি না। কিন্তু আমার গল্পের কিংবা উপন্যাসের ক্রিকেটার স্রেফ আমার। আমি যেমন চাইবো সেতো তেমনই খেলবে। চাইলেই তার হাতে সেঞ্চুরি হাকিয়ে দিয়ে পারি, গুগলিতে ভাংতে পারি উইকেট, গালিতে সুপার ডাইভে ক্যাচ ধরিয়ে দিতে পারি কিংবা পারি আরও কোনও সেরা পারফরম্যান্স করাতে। ক্রিকেট রাইটার হয়ে যে স্বাধীনতাহীনতায় থাকি, ক্রিকেট সাহিত্যিক হিসেবে সে স্বাধীনতা পুরোই উপভোগ করতে পারি। এ নিয়ে মনের ভেতর এক ধরনের আনন্দ খেলা করে। ”

ক্রীড়ালেখক মোস্তফা মামুন আর সাহিত্যিক মোস্তফা মামুন- এই দুইয়ের পার্থক্য কিভাবে টানবেন? সে প্রশ্নের জবাবে এমনটাই বললেন তিনি।

দৈনিক কালের কণ্ঠের স্পোর্টস এডিটর (ডেপুটি এডিটর) মোস্তফা মামুন দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতা জগতে পরিচিত নাম। তবে তিনি সমধিক পরিচিত একজন লেখক হিসেবেও। বললেন, কিশোর লেখক হিসেবে পরিচয়টা একটু বেশি। কারণ কিশোর সাহিত্য রচনা দিয়েই তার এই জগতে প্রবেশ। আর সেভাবেই নাম ছড়িয়েছে। তবে ইদানিং অন্য ধাচের লেখাও লিখছেন। প্রাপ্তমনস্ককদের জন্যও আসছে তার গল্প-উপন্যাস।

এবারের বই মেলায় এসেছে তার ছয়টি বই। এবারের সেরা কাজটি তার ‘অন্ধ গলিতে ফুলের গন্ধ’। পার্ল পাবলিকেশন্সের আনা এটি একটি উপন্যাস। লিখেছেন দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে। গুম হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার যে ভয়াল চিত্র রয়েছে তারই প্রতিপাদ্যে এর গল্প এগিয়েছে বাবা আর ছেলেকে ঘিরে। বাবাকে ধরে তা মুক্তিযুদ্ধে যেমন চলে গেছে, ছেলেকে ধরে তা চলে এসেছে এই অস্থির রাজনৈতিক সময়েও। তবে তারই মাঝে গৌরবান্বিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, গৌরব পেয়েছে খেলাধুলা, সঙ্গীত। এসেছে হাস্যরসের উপকরণও।

মুখে হাসি ছড়িয়ে মোস্তফা মামুন বললেন, এই হাস্যরসের দিকটি নিয়ে একটু কথা আছে। আমি মনে করি লেখার ভেতরে হাস্যরসের ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। পাঠককে লেখায় আটকে রাখতে পাশাপাশি তাকে একটু স্বস্তি দিতে, দুই কারণেই এর ব্যবহার করা জরুরি।

‘কোনও ঘটনা যখন বর্ণনা করি তখন এর মধ্যে হাস্যরসের জায়গাটি আমি সহজেই খুঁজে পাই আর রিলেট করতে পারি,’ বেশ দাবির সঙ্গেই বললেন মোস্তফা মামুন।

প্রশ্ন ছিলো এটা কী বাস্তব জীবনেও ঘটে? জানালেন, ঘটে। সিরিয়াস প্রেস কনফারেন্সেও সবাইকে হাসিয়ে দিয়েছি এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে। সেন্স অব হিউমার এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যাকফায়ার যে হয়নি তা নয়। বাস্তবে ব্যাকফায়ার হতে পারে কিন্তু গল্প উপন্যাসে আমার নিয়ন্ত্রণেই সবকিছু তাই এখানে হাস্যরস কৌতুক যাই করি, আমি করে যেতে পারি।

পুরোপুরি হাসির বই মোস্তফা মামুনের এবছর একটিও নেই। তবে হাসির কথাবার্তা সবগুলোতেই রয়েছে।

১৯৯৫ সালে লেখালেখির জগতে ঢুকেছেন। প্রথম কিশোর উপন্যাস ছিলো ‘ক্যাডেট নং ৫৯৫’। ক্যাডেট কলেজ জীবন থেকে বইটি লিখেছিলেন ক্যাডেটের কিশোর মনের নানা কাহিনী দিয়েই। শুরুতেই হিট। এরপর এলেন ক্রীড়াজগতে। সেখানে খবর লেখাই কাজ। কিন্তু মোস্তফা মামুন মনে করেন, ক্রীড়া লেখকদের সাহিত্য জানতে হয়। আর সে কারণে তার দুই ধরনের কাজের একটি অন্যটিকে বেশ সহযোগিতা করে।

এবারের বই মেলায় মামুন এনেছেন ‘ভালোবাসার কালিতে ক্রিকেটের গল্প’। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট বিশ্বকাপ কাভার করতে গিয়ে লেখা স্টোরিগুলোই এতে স্থান করে নিয়েছে। এই বিশ্বকাপে তার উপলব্দি ছিলো বাংলাদেশের ভালবাসাই হচ্ছে এর ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তুলনা থেকেই তিনি সেটা বুঝে নেন। আর ভালোবাসার কালি দিয়েই তিনি রচনা করেন একের পর এক ক্রিকেটের গল্প। এই বইটি মেলায় এনেছে অনন্যা প্রকাশনী।

‘আবরার শিশির ও জয়িতা’ মোস্তফা মামুনের নির্জলা প্রেমের উপন্যাস। ছোট্ট কিন্তু কাহিনীর গাঁথুনি, ভাষার ব্যবহারে দারুণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। সে অবশ্য সবগুলো লেখার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে জয়িতার দৃঢ়তায় প্রেম প্রাণ পেয়েছে, আর শিশিরের হাতে বেঁচেছে প্রেমিকের প্রাণ সে কাহিনী পাঠককে আটকে রাখবে উপন্যাসটি শেষ না করা পর্যন্ত।

‘রাজা জহিরের টি স্টল’ একটি গল্পের শিরোনাম। আবার এই নামেই বইটি প্রকাশিত। গল্প সমগ্র। স্থান পেয়েছে ১০টি গল্প। এনেছে জয়তী প্রকাশনী।

গল্প লিখতে বেশি মজা পান মোস্তফা মামুন। তবে উপন্যাস লেখেন বেশ স্বস্তিতে, এমনটাই বললেন। এনিয়ে তার চারটি গল্পের বই আর একটি গল্প সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে।

গল্প-উপন্যাসের তুলনা নিয়ে আরও কথা হলো এই তরুণ লেখকের সঙ্গে। বললেন, কোনও কোনও গল্প পরে উপন্যাসে রূপ নিয়েছে।

এমনকি হয়েছে একটি উপন্যাস লিখতে চেয়েছেন, কিন্তু গল্প হয়ে গেলো আর এগুলো না? সে প্রশ্নে মোস্তফা মামুন জানালেন, না তেমন হয়নি।

কিশোর সাহিত্যিকের তকমা নিয়ে ঘুরছেন আর কিশোর উপন্যাস লিখবেন না, তাই কি হয়! বই মেলায় মোস্তফা মামুন এবার নিয়ে এসেছেন ‘দুষ্টু একাদশ’।

একাদশ মানে কি ১১ জনের টিম?  

‘না তা নয়। এই গল্পেও একজন মামা আছেন। সেই মামাকে ঘিরেই দুষ্টু বালকদের কাহিনী আর কাণ্ড কারখানা। সেই মামারই মত- তার একাদশে এগারোজন লাগেনা। ’

এই উপন্যাসে সমাজের নিচু সারির মানুষের মধ্যেও যে সুপ্ত প্রতিভা থাকে তা তুলে আনার একটি প্রয়াস রয়েছে। অ্যাডভেঞ্চারাস কিশোরদের দুরন্তপনার সঙ্গে তাদের জন্য শিক্ষণীয় রয়েছে অনেক কিছু। আর প্রতিপাদ্য হয়ে এসেছে দেশে কিশোর-তরুণদের মধ্যে জঙ্গিপনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য শিক্ষামূলক উপস্থাপনা। এটি বইমেলায় এনেছে অনন্যা প্রকাশনী।

মোস্তফা মামুন এ পর্যন্ত ৮০টি বই প্রকাশ করেছেন। তবে তার অধিকাংশেই খেলাখুলা ও কিশোর সাহিত্যের। প্রাপ্তমনষ্ক পাঠকদের জন্য তিনি লিখতে চান আরও বেশি বেশি। তবে নিশ্চয়ই ছাড়ছেন না কিশোরদের জন্য লেখা। আর ক্রীড়ালেখা, সেতো প্রাণের টানেই লেখেন।

বললেন, সাহিত্যমন থেকেই তার ক্রীড়ালেখায় আকর্ষণ।  

বাংলাদেশ সময় ২১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।