ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

বিদেশি গল্প-ছবি নির্ভর শিশুতোষ বই, হতাশ অভিভাবকরা

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
বিদেশি গল্প-ছবি নির্ভর শিশুতোষ বই, হতাশ অভিভাবকরা ছবি: দীপু মালাকার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মেলায় এসেছেন আমিনুল ইসলাম মবিন। সঙ্গে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে শামীন সাসার।

বাবা-মেয়ে একত্রে খুঁজে খুঁজে দেখছিলেন নতুন কী বই আছে। তবে স্টলগুলো থেকে বলা হলো, সবই তো প্রায় নতুন বই! কোনটা লাগবে বলেন? আমিনুল ইসলাম কিছুই বললেন না। পাশ কেটে চলে গেলেন একটু আড়ালে।

তার পিছু পিছু গিয়ে কথা বলার চেষ্টা। প্রশ্ন করতেই তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাচ্চাদের বইয়ে নতুনত্ব কম। নেই বললেও ভুল হবে না। স্টলে স্টলে খালি টোনাটুনি, গোপালভাঁড়, ঈশপের গল্প, সিনড্রেলা, মটু-পাতলু, রোবটসহ এই ঘরানার নানান বইয়ের অধিক্য।

তাহলে বাচ্চাদের কী শেখাবেন অভিভাবকরা- উল্টো প্রশ্ন রাখেন তিনি। সঙ্গে আরও বলেন, যে বইগুলো শিশু চত্বরের বিভিন্ন স্টলে এখন বিক্রি হচ্ছে এগুলো কী নতুন কোনো চরিত্র? নাতো। সবই আগেই ছিল। তাহলে এখন নতুন কী যোগ হলো! বিভিন্ন স্টলে ‘প্রকৃতই নতুন’ সাহিত্যের বই খুঁজছিলাম, কেউ উত্তর দিতে পারলো না।

তার মেয়ে শামীন বলেন, জাফর ইকবাল স্যারের ‘অন্য জীবন’ বইটি কিনলাম। এ ধরনের বই অন্য কেউ কেন লেখে না তা আমি বুঝতে পারি না। লিখলেও কেন চোখে পড়ে না। সারা মেলা ঘুরে আমি সাধারণ পাঠক- আমি তো পেলাম না। এছাড়া যারা আরেকটু ছোট তাদের জন্য মজার গল্প- হুমায়ূন স্যারের মতো বড়দের উপন্যাসকে ছোটদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা- এমন বই চাই।

চাকরিজীবী স্বপন সাহা তার দুই ছেলে-মেয়ে ঐন্দ্রিলা সঞ্চিতাকে নিয়ে মেলায় আসেন। সঙ্গে স্ত্রী লাবনী। বই কেনার বাজেট হাজার দুয়েকের মতো। কিন্তু ভালো মানের বই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করলেন। এও বলেন, বইয়ের দাম বেশ চড়া। বইয়ের মধ্যে রং লাগিয়ে পুরনো কিছু চরিত্র দাঁড় করিয়ে দিলেই যে মানুষ হুমড়ি খেয়ে কিনবে- তা ঠিক নয়।

স্বপন সাহা বলেন, শিশুসাহিত্যে কাজ হচ্ছে, কিন্তু সেটিকে পৌঁছে দিতে হবে বাচ্চাদের কাছে। তিন ধাপে সাহিত্য চাই আমরা। কেজি থেকে তৃতীয় শ্রেণি, চতুর্থ থেকে সপ্তম আর অষ্টম থেকে মাধ্যমিক- এমন বিবেচনায় দেশীয় লেখকদের বই কিনে দিতে চাই শিশুদের। কিন্তু এবার প্রকাশিত বইপত্রের মধ্য দিয়ে সে উদ্যোগ তো দেখি না।

দুই-বোন, ভাই ও সন্তানকে নিয়ে মেলায় আসেন উর্মি হোসেন। বোন ফারজানা হোসেন ও ভাই রিয়ান হোসেন। সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মুস্তাকিম। তারা জানান, গ্রন্থমেলা ঘুরলাম, তবে বাচ্চাদের জন্য শিক্ষামূলক বই নেই বললেই চলে। সিসিমপুর বের করেছে, যার মূল্য অনেক চড়া। আবার সেট আকারে না নিলে খুচরা কেনা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শিশু উপন্যাস বা গল্প, বিভিন্ন মজার মজার বিষয় নিয়ে ছোট গল্প একান্ত প্রয়োজন।

এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বই, ঘুমানো বা ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের কী কী করতে হবে, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার শিক্ষা, বাসায় পড়তে বসার শিক্ষা বিষয় নিয়েও তো গল্প হতে পারে, মত দেন তারা। এ ধরনের গল্প অভিভাবকদের বেশ কাজে দেবে, কারণ সে গল্প পড়েই তার সন্তান শিখবে এবং তা অনুসরণ করবে।

মেলায় ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেনিফার জাহানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কেজি-টুতে পড়ুয়া ছেলে কিয়ানকে নিয়ে মেলায় এসেছি। ভালো বই খুঁজতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। শিশুদের গল্প ও পড়াশোনার আলাদা বই চাচ্ছি। একত্রে এমন বই পাওয়াটা দুষ্কর।

সপরিবারে মেলায় ঘুরতে আসা সাংবাদিক মানিক মুনতাসিরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়ভিত্তক বইয়ের অভাব রয়েছে। বরাবরই এ অভাবটা লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া শিশুদের বইয়ে বৈচিত্র্য নেই। তবুও আমরা বাধ্য হয়ে ভিড় জমাচ্ছি মেলায়, রোজই ঘুরতে আসছি। শিশুসাহিত্যে ভালো কাজ হলে আরও আসবে মানুষ। ঐতিহাসিক বিষয়গুলো নিয়ে শিশু সাহিত্যের চরম সংকটও একটি বড় বিষয়। এক্ষেত্রে লেখক-প্রকাশকদের দায়িত্ব অনেক।

এ থেকে বেরিয়ে না এলে আমাদের শিশুরা প্রকৃত শিক্ষা পাবে না বলে মনে করেন তিনি।

মানিক মুনতাসির আরও বলেন, শুধু তাই নয়, শিশুদের বইয়ের মানও বেশ খারাপ। বাচ্চাদের জন্য হওয়া উচিত শক্ত-পোক্ত বই, যাতে ছিঁড়ে না যায়। অথচ দেখছি তার উল্টো চিত্র।

বিদেশি সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে বইগুলো এখন শিশুদের নামে চালানো হচ্ছে তার অধিকাংশই আমাদের নয়, বিদেশি সংস্কৃতির। প্রশ্ন রাখেন তিনি, ধার করে আর কত দিন!

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
আইএ/এএ

** শিশুদের সব বায়না পূরণের দিন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।