বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে মৃদুল মাহবুবের দ্বিতীয় কবিতার বই ‘কাছিমের গ্রাম’। এর আগে ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘জলপ্রিজমের গান’।
মৃদুল মাহবুব বলেন, দুটো পার্টের টোন, ফর্ম, ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাধারণত যেকোন কবিতার বই একটি নির্দিষ্ট ফর্মে বা ভাষায় গড়ে ওঠে। সেই চিরায়ত চিন্তাকে ভেঙে দেখার একটা বিষয় ছিল।
বইটি প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আামাদের মেগাসিটির জীবন, এই শহর তার মানুষের ভাষায়, চিন্তায় লিখতে চেয়েছি কাছিমের গ্রাম, মানে অর্বান পোয়েট্রি করে তোলা যায় কিনা। কবিতা হয়তো তেমন কিছুও না। এই সব ভেবে যদিও লিখি নাই। বইটা শেষ হবার পর নিজের অগণন অযুক্তিটাকে যৌক্তিক করার কসরত বলা যায়। কতটা হয়েছে তা হয়তো আরো পরে আমি বুঝতে পারব, এখনই সময় না।
সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা নিয়ে মৃদুলের ধারণাটা এরকম: আমাদের বাংলায় ট্রেন্ডি কবিতা লেখার প্রবণতা আছে। মানে বিগত ভালো কবিতার যে প্রকার, প্রকরণ, সচলতা সেই ধারাবাহিবতায় আপনি লিখতে পারলে সহজ প্রশংসা পাওয়া যাবে। মানে এই সময়ের ৯০ ভাগ কবিতার ফর্ম পুরানো ভালো কবিদের অনুকরণ। মানে বিগত ৭০ থেকে ১০০ বছরের ভালো কবিতার রুচি আর ট্রেন্ডে কবিতা লেখা হচ্ছে এখন।
কাছিমের গ্রাম প্রকাশ করেছে চৈতন্য। উদ্যানের মেলায় ১৫৬ নাম্বার ও লিটল ম্যাগাজিন চত্বরের ৫২ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাবে। ৫৬ পৃষ্ঠার এ বইয়ের বিনিময় মূল্য ১১০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী রনি আহম্মেদ।
মৃদুল মাহবুব জানান, কাছিমের গ্রাম দীর্ঘ সময় নিয়ে লেখা। প্রথম অংশ ভাষা-বাস্তবতার বিশ্ব ২০১৫’র ফেব্রুয়ারি থেকে পাণ্ডুলিপি জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে। এবং কাছিমের গ্রাম অংশ ২০০৪ থেকে ২০১০ এর মধ্যে লেখা।
কবিতাগুলো কিভাবে লেখা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভবত ২০০৪ বা ’৫ সালের কথা। বন্ধুরা মিলে সেন্ট মার্টিন গিয়েছি। আমি সারারাত একটা খোলা নৌকার মধ্যে শুয়ে ছিলাম একা, বন্ধুরা যে যার মতো ফিরে গেছে হোটেলে। আমি যাইনি বা যেতে পারিনি। সেই দ্বীপে ভোর হতে থাকে। আধো-আলো-অন্ধকারের মধ্যে আমি জেগে উঠতে থাকি। দেখি অদূরেরই একটা কাছিম উল্টে পড়ে আছে, আর একটা ব্রাউন দেশি কুকুর সেই মৃত শতবর্ষী কাছিমটাকে টানতে টানটে নিয়ে যাচ্ছে কেয়াবনের আধাঁরে। সে কী যে বীভৎস দৃশ্য! চিনের ধর্মতত্ত্ব বা ভারতীয় পুরাণ বা গ্রিক মিথলজি সবখানেই কাছিমের এক রকম ওভাররেটেড ভেল্যু আছে, পবিত্রতা আছে, অমরত্বের প্রতীকী আরোপণ আছে। সেই ধারণা যখন হোঁচট খাবে তখন মনে হবে এ কোন দৃশ্যের মুখোমুখি আমি।
মৃদুল বলেন, আমি মনে হয় এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হইনি আগে। এইটা একটা ঘটনা ছিল আমার জন্য। ঘটনা বিশ্বে এমন অগণন দৃশ্য পড়ে আছে। হয়তো কাছিমটার বয়স ছিল ২০০ বছর, এই দীর্ঘজীবী কাছিমটাকে সাত আট বছর বাঁচা একটা কুকুর টেনে হিঁচড়ে খেয়ে নেবে। হায় আমাদের অমরত্বের বোধ, অমরত্বের ক্ষয়। সেই নীরবতা থেকেই কাছিমের গ্রামের জার্নি। এই দৃশ্য পৃথিবীর যেকোন সমুদ্রপাড়ে দাঁড়ালে আমি দেখতে পারি, এই ক্ষয়ের দৃশ্য। এটা তো একটা ম্যাসেজ আমার কাছে। মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার হবার মতো ঘটনাই আমার কাছে। অমরত্ব ধসে পড়ার যে দৃশ্য, এমন দৃশ্যের পরও আশায় জেগে ওঠার যে বাসনা তাই নিয়েই কাছিমের গ্রাম।
বই প্রকাশে বইমেলার সময়টাকেই বেছে নিলেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীমিত পাঠক নিয়েই তো কবিতা লেখা হয়। বই-শিল্প তো একটা ব্যবসাই। সারা বছর যত বই এদেশে বিক্রি হয় তার থেকে অনেক বেশি বিক্রি মেলাতে। এটা আমার ধারণা। কত বেশি, পরিসংখ্যান থাকলে সুবিধা হতো আরো স্পেসিফিকালি বলতে। সেই সীমিত পাঠক আর তার সাথে বাণিজ্যের রিস্ক, অপরচ্যুনিটি, ম্যানেজমেন্ট, টাইম ভেল্যু অব মানি, লেখক-পাঠক-প্রকাশক কোলাবেরেশন, মার্কেটিং, কবিতা-ভোক্তার হাতে পৌঁছানো সব মিলিয়ে বইমেলাই ভালো।
মৃদুল মাহবুবের কাছিমের গ্রামসহ বইমেলার যেকোন বই ঘরে বসে পেতে ভিজিট করুন www.rokomari.com অথবা ডায়াল করুন 16297 নাম্বারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
টিকে/