অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে হাজারো ব্যস্ততা তার। তবু নানা বিষয় নিয়ে ১০ খণ্ডের বই এলো অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের রচনাবলী নিয়ে এ বিস্ময়। শুধু তাই নয়, আরও দু’টি বইও আছে তার এ মেলায়, সামনে আরও বিস্ময়ের অপেক্ষা।
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৩তম দিনে ‘আবুল মাল আবদুল মুহিত রচনাবলির পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠান হলো। এ রচনাবলি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন।
বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান এবং অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
শামসুজ্জামান খান বক্তব্যের শুরুতেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এতটা ব্যস্ততার মধ্যেও এভাবে ১০ খণ্ডের বই বের করা কঠিন। রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও লেখার প্রতি সীমাহীন আগ্রহ না থাকলে এ কাজ সম্ভব হতো না। বাংলাদেশকে জানতে চাইলে, দেশের উদ্ভব, বিকাশ, ইতিহাস, অর্থব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের এ রচনাগুলো পড়লেই জানা যাবে।
‘তিনি তার চিন্তাভাবনাকে যেভাবে প্রকাশ করেছেন, সেজন্য এ অসাধারণ মেধাবী মানুষকে কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাই। অর্থনীতিতে বাংলাদেশ এখন বিস্ময়। তাতে তার যে অবদান, সেই সঙ্গে এ বইয়ের প্রকাশ- সবমিলিয়ে তিনি অবাক করেছেন’- বলেন একাডেমির ডিজি।
তিনি বলেন, লেখালেখি, চিন্তায়, প্রশাসনে- সবকিছুতে তার যে কর্মকাণ্ড, তা অসাধারণ।
কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, তথ্যসমাবেশ ও মতপ্রকাশের দিকে যে বিশ্লেষণ বইতে রয়েছে, তা সবাই পারে না। কিন্তু সহজভাবে উপস্থাপিত বলে পাঠককে তার লেখা টানে।
‘বইটিতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, জেলায় জেলায় সরকার, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, মহাপুরুষদের কাছে থেকে দেখা, বাংলাদেশ জাতিখণ্ডের উদ্ভব, বাজেট স্পিচ, সামষ্টিক অর্থনীতি, উন্নয়ন সমস্যা, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ রয়েছে’- বলেন এ অর্থনীতিবিদ।
বইটিতে কিছু ছোটখাট ত্রুটি আগামী সংস্করণে শুধরে নিতেও সুপারিশ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আমার লেখা হয় ফাঁকে ফাঁকে, আর না হয় চাপে পড়ে, কোনো বিষয়ে লিখতে হবে তাই লেখা হয়। বিভিন্ন লেখার সমন্বয়ে এ রচনাবলী। কিছু ভুলত্রুটি আছে। খুব কম সময়ে হয়েছে এটি।
‘আমার অপর বই ইউপিএল, যেটি আমার ৩০ বছরের সাধনা এবং চন্দ্রবতীও অন্য প্রকাশক এবার বের করছেন’ বলেন তিনি।
নিজের বিভিন্ন বই ও লেখার আগে-পরের নানা ঘটনা বক্তব্যে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারি তার চন্দ্রবতী বইটির প্রকাশনা উৎসব হবে।
মন্ত্রী রসিকতা করেন উপস্থিত খলীকুজ্জমানকে নিয়ে। একপর্যায়ে প্রশ্ন করেন, ‘খলীকুজ্জামান, তুমি তো কখনো মাস্টারি করো নাই, তাই না?’
হেসে মাথা নেড়ে ‘না’ জানালে মন্ত্রী সবার উদ্দেশে বলেন, ‘হি ইজ অ্যা ওয়ান্ডারফুল টিচার, ইউ নো!’
‘বইটি যারা নেবেন, আশা করি, বিভিন্ন খোরাক পেতে সক্ষম হবেন তারা’- বলেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আসার বিলম্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (শনিবার) বেশ কিছুক্ষণ বক্তব্য রাখছিলেন। তাই দেরি আমার। তবে বের হয়ে অনবরত ফোন দিচ্ছিলাম ডিজিকে। তাকে তো ফোনে পাই নি, পেলাম কেবল আমার স্ত্রীকে’- বলেই তিনি সামনে বসা স্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করেন।
তার বলার ভঙ্গিতে স্ত্রী ও উপস্থিত সবাই সমস্বরে হেসে ওেঠন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, এত ব্যস্ততায় তার এত লেখা নিয়ে আমরা অবাক হয়েছি। তিনি লেখেন সহজ ভাষায়। সবাই বুঝতে পারেন। স্থানীয় সরকার নিয়ে তার লেখাগুলো নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি আমরা। কিন্তু সংসদ সদস্যদের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। এবার অর্থমন্ত্রীর এ লেখাগুলো থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানা যাবে।
‘তার রচনায় সমকালীন জীবন, বহু ব্যক্তির কথা আছে। কাউকে চেনেন, কাউকে নামে চেনেন- সবাইকে নিয়ে প্রাঞ্জলভাবে লেখা আছে। এগুলো খুব আকর্ষনীয়, পড়তে ভালো লাগবে। তার অন্তরঙ্গ উপলব্ধি পাঠকদের ভালো লাগবে’- বলেন তিনি।
প্রকাশক মোস্তফা সেলিম বক্তব্যে বলেন, মাত্র ছয় মাস আগে এই বইটি প্রকাশের আগ্রহ জানিয়েছিলাম মন্ত্রীর কাছে। প্রকাশকালে মাত্র ২০ মিনিট সময় দিতে পেরেছিলেন মন্ত্রী। তবু প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা সচেষ্ট থেকে অল্প সময়ে কাজটি শেষ করেছেন। মন্ত্রী হয়েও তার এতসব বিষয়ে মূল্যবান লেখা আমরা পাঠককে একই মলাটে উপহার দিতে চেয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
এসকেএস/এমজেড