বইমেলা থেকে: ব্যাপক নিরাপত্তার বলয় নিয়ে শুরু হওয়া এবারের বইমেলায় যখন শেষ সপ্তাহের বিকিকিনি চলছে, ঠিক সে সময় অনাকাঙ্ক্ষিত আগুনের ঘটনা। তবে এটিকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই, বরং সতর্কতা আরও বাড়ানো উচিত বলে মত দিয়েছেন প্রকাশক-বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেলা ঘুরে পাঠকের উপস্থিতি নজর কাড়ে। যথারীতি বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া মেলা চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। এখন যারা আসছেন তাদের মধ্যে দর্শনার্থী কম, বেশি ক্রেতা।
এদিন মেলা শুরুর সময় তেমন একটা লাইন না থাকলেও দর্শনার্থী কম নেই। পুলিশের অতিরিক্ত তল্লাশি চলছে। ব্যাগ-পার্স, পকেট হাতিয়ে ঢুকতে দিচ্ছে পুলিশ। ধূমপানমুক্ত মেলা হলেও নিয়ম ভাঙার প্রবণতা তৈরি হওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ হয়েছে সে বিষয়ে।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সোমবারের (২২ ফেব্রুয়ারি) ঘটনার রেশ মঙ্গলবারে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এখন মেলার শেষ সময়ে এসে যথারীতি বিক্রি বাড়বে। কারও শঙ্কা বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, মানুষজনকে বলবো আসুন-ঘুরুন এবং দরকারি বই কিনুন।
মেলার একাডেমি অংশের পুলিশ সমন্বয়ক উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান বলেন, সোমবার প্লাটফর্মের স্টলের পেছনে আগুন লাগার সময় ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধরা পড়া দু’জনের ছবি আরও কয়েকটি সিসিতে উঠেছে। যার সবগুলো ফুটেজ সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি)। এছাড়া রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বিষয়ক মিটিং হয়েছে। এতে পুলিশ সদস্যদের আরও বেশি তৎপর থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেলার ত্রিসীমানায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে সিগারেট। ম্যাচ নিয়ে প্রবেশে লাগবে বিশেষ প্রয়োজনের কারণ এবং পরিচয় নিশ্চিতকরণ।
মধ্য বসন্তে মেলায় যখন বাসন্তী হাওয়া ঠিক সে সময় কারা এমনটি (আগুন দেওয়া) করলো তাতে ভাবনা থাকলেও, দুশ্চিন্তা নেই প্রকাশকদের। তারা এটিকে বড় করে দেখছেন না। তাদের মনোযোগ শেষ সময়ে এসে বই কেনাবেচার দিকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, মেলা বাংলা একাডেমির, এখানে তাদের ভূমিকাই বেশি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা প্রকাশকরা নিন্দা জানাই। যে কোনো আগ্রাসন থেকে আমাদের সংস্কৃতি, শিল্প মুক্ত থাক- এটাই চাই।
তিনি বলেন, বইমেলা কেন্দ্র করে সাধারণ পাঠক সমাজ আজ উজ্জীবিত, শিক্ষার্থী-প্রগতিশীল সমাজ নতুন অনুপ্রেরণায় জাগ্রত। কিন্তু এমন সময় এ ঘটনা প্রমাণ করে আমাদের অনেক কিছুই করার আছে। আরও সতর্কতা মানতে হবে। আমরা স্টল বন্ধ, প্রকাশক হয়রানি, অগ্নিকাণ্ডের চেষ্টা, গত বছর হত্যাসহ এ ধরনের সব আঘাতের নিন্দা জানাই। ইতোমধ্যে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মেলার যত অব্যবস্থাপনা রয়েছে তা জানিয়ে একাডেমিকে সমিতি একটি চিঠিও দিয়েছে। আশা করছি এবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামীবার আরও সুন্দর মেলা হবে।
শোভা প্রকাশের প্রকাশক মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যা ঘটেছে তা নিতান্তই দুর্ঘটনা। মেলার সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে, পাঠককে বিভ্রান্ত করতে এমনটি করা হয়েছে। আমি আশা করি এর কোনো প্রভাব বিপদ ডেকে আনবে না। প্রগতিশীল মানুষজন আরও বেশি বেশি আসবেন, পছন্দের বই কিনবেন।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের পুলিশ সমন্বয়ক উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন ফরাজী বাংলানিউজকে বলেন, আগুনের যে ঘটনাটি ছিল তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘটনার পরও দুই ঘণ্টা ব্যাপক বেচাকেনা হয়েছে। মঙ্গলবারও রাত ৮টা পর্যন্ত দারুণ বেচাবিক্রি হবে বলে মনে করছি।
যারা ঘটনায় জড়িত তাদের ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কাজটি করে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয়নি। পুলিশি ভাষায় তারা 'ক্রাইম ভিজিটিং কার্ড' রেখে যাবে আর আমরা তাদের ছেড়ে দেবো তা হতে পারে না। উগ্রবাদীরা নীরবে নেই, আমরাও তাদের নির্মূলে মাঠে আছি। বইমেলা প্রাণের মেলা, এখানে পাঠকরাই মূল, তারা আসবেন। আর কয়টা দিনই তো বাকি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
আইএ/এএ