ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

কবি জুয়েল মাজহারের ‘দূরের হাওয়া’ বইমেলায়

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
কবি জুয়েল মাজহারের ‘দূরের হাওয়া’ বইমেলায়

সীমানার ওপারেও থাকে শাশ্বত মানবিক আবেগ, সেই আবেগই স্থান পায় কবির কবিতায়। সবাই বুঝতে না পারলেও কবির আবেগ কবি অবশ্যই বুঝতে পারেন।

তাই কবিকেই করতে হবে অন্য কবির কবিতা অনুবাদ।

বাংলাসাহিত্যে এ সময়ের শক্তিমান কবি হিসেবে নাম কুড়ানো কবি জুয়েল মাজহার ঠিক এমনটাই মনে করেন। জানালেন, সে কারণেই গেলো বছরটি তিনি  খুব মন দিয়ে কিছু কবিতা অনুবাদ করেছেন। তাতে সা’ফো, অভিদ, প্রপার্তিয়াস হয়ে হাইনে, এলিয়ট, ফ্রস্ট, ইয়েটসরা যেমন আছেন আদুনিস, বোর্হেস, ট্রান্সট্রোমার, গুন্টার গ্রাস, লোরকারাও রয়েছেন। বিশ্বের দেশে দেশে যারা তাদের কবিতাকে ব্রহ্মাণ্ডের সমান ব্যাপ্তিতে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন, তাদের কবিতাই স্থান পেয়েছে জুয়েল মাজহারের অনুবাদে।

‘দূরের হাওয়া’ নামে এক মলাটে ৫৩ জন বিশ্বখ্যাত কবিকে জুয়েল মাজহার বেঁধেছেন প্রাণের বাংলাভাষার শব্দ গাঁথুনিতে। তাতে মোট ২০০ কবিতা স্থান পেয়েছে। এসেছে ১১টি ভাষার কবিতা।

বাংলায় এমন কাজ খুব কম হয়েছে সে কথা দায়িত্ব নিয়েই বলা যায়। আর এও বলা চলে, এবারের বইমেলাকে উপলক্ষ করে জুয়েল মাজহারের এমন একটি এক অনুপম সৃষ্টি বাংলার অনুবাদ সাহিত্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছে।

সৃষ্টি বটেই! কবিতা কবির সৃষ্টি কিন্তু তা যখন অন্যভাষায় রূপান্তর হয় অন্য কোনও কবির মাধ্যমে, তখন তাও কম কোনও সৃষ্টি নয়। একটি ভিন্নভাষায় এ এক পুনঃসৃজন। যা সৃজনেরই আনন্দ দেয়, বললেন জুয়েল মাজহার।

বইয়ের মলাট উল্টে চট করে ফ্লাপের কথাটি পড়ে নেওয়া যাদের অভ্যাস তারা ‘ত্রাদুত্তুরে, ত্রাদিতোরে- অনুবাদক বিশ্বাসঘাতক’ কথাটি পড়ে থমকে যাবেন ঠিকই কিন্তু এখানেই কবি লিখেছেন- অনুবাদ নিজেকে আবিষ্কার করার একটা বিনীত উপায়। সেক্ষেত্রে কবি নিজেকে কিভাবে আবিষ্কার করেছেন তা পড়তে আগ্রহ জন্মাবে।   

এরপর হাজার পাঁচেক শব্দে বইটির একটি ভূমিকা লিখেছেন ‘দূরের হাওয়া: আগুন ও গন্ধকের নদী পাড়ি দিয়ে’ শিরোনামে। সেটি আর কোনও ভূমিকা হয়ে থাকেনি হয়ে উঠেছে এক আস্ত নিবন্ধ যাতে কবিতার অনুসৃজন সম্পর্কে খুব স্পষ্ট করেই নিজের ভাবনাগুলো তুলে ধরেছেন জুয়েল মাজহার। পাঠককে ভূমিকা পড়েই কবিতায় ঢুকতে হবে। তাতে তারা ঠিক ঠিক বুঝে নেবেন কি শপথ নিয়েই এই কবি তার প্রতিটি কবিতার অনুবাদে হাত দিয়েছেন।

শুরুতেই লিখেছেন- আজ থেকে তিন দশক আগে কবিতা অনুবাদে হাত দিয়েছিলাম কাঁচা বয়সে। সে কবিতা ছিলো- রালফ হগসনের টাইম ইউ ওল্ড জিপসি ম্যান। আমার জীবনের সঙ্গে জিপসিদের, সদা-ভ্রমণশীল আর ভবঘুরে মানুষদের জীবনের কতো না আশ্চর্য মিল!

প্রশ্ন ছিলো, কবিতার অনুবাদে এখনো কি নিজের জীবনের মিল খোঁজার চেষ্টা করেন? ‘না, করি না!’ উত্তর কবি জুয়েল মাজহারের। তবে সেই কবিতাই অনুবাদ করি যাতে জানা মানুষের জীবনের কোনও না কোনও মিল খুঁজে পাই।

কবির কবিতায় শ্বাশ্বত মানবিক আবেগ থাকে, সীমানার ওপারেও তা এক সর্বজনীন রূপ পায়, আর সেগুলোকেই নিজের দেশে নিয়ে আসা এই অনুসৃজন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, বলেন তিনি।

জুয়েল মাজহার এ পর্যন্ত সাড়ে চার শ’র মতো কবিতা অনুবাদ করেছেন। তার মধ্যে শ’ দেড়েক ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা লিটলম্যাগে। এবারের ‘দূরের হাওয়া’য় তার যে ২০০ কবিতা এসেছে তার মধ্যে ৭০টি কবিতা আগেই অনুদিত ছিলো। গোটা পঞ্চাশেক ছিলো খসড়া অবস্থায় সেগুলোকে ঘষামাজা করে নিয়েছেন, আর এবার আনকোড়া অনুবাদ করেছেন ৮০টি কবিতা।

সব মিলিয়ে বাংলা অনুবাদে ২০০ বিশ্বকবিতা বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। বইমেলাকে একটি বাড়তি ওজন দিয়েছে।

বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকা থেকে দূরের একটি প্রকাশনা সংস্থা। সেটি সিলেটের চৈতন্য। প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন তৌহিন হাসান। বইমেলায় চৈতন্যের ১৫৬ (সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) স্টলে ও ৫২ (লিটলম্যাগ চত্বর) বইটি পাওয়া যাচ্ছে ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে। বইয়ের দাম ধরা হয়েছে ৪৮০ টাকা। জুয়েল মাজহার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে কর্মরত।

বাংলাদেশ সময় ২০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।