ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে, 'মেলায় সহজ বই কি আছে'?

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬
ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে, 'মেলায় সহজ বই কি আছে'? ছবি: দীপু/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: আরিক-জারিফ-জাওয়াদ, তিন ভাই। রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

আরিক ‘সেভেন’, জারিফ ‘থ্রি’ এবং জাওয়াদ ‘টু’তে পড়ে। বাবা-মার হাত ধরে মেলায় আসা। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত বইগুলো কেনার আগ্রহ থাকলেও বাবা-মার অনিহায় নেওয়া হলো না।

আরিকের বক্তব্য, বাংলা সহজ বই পড়তে বলেছেন তার অভিভাবক। কারণ তাদের বলা হয়েছে ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রদের এতো কঠিন কিছু না পড়াই ভালো!

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মেলা ঘুরে কথা হয় এই তিন ভাইয়ের সঙ্গে। সন্তান ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র হওয়ায় ‘বিস্তৃত বাংলা সাহিত্যে’ তাদের অভিভাবকের উৎসাহ কম। কেবল স্কুলের ইংরেজি পড়াশোনার দিকেই নজর দেওয়ার জোর বাবা-মা’দের! এরই মধ্যে পাশের এক স্টল থেকে কানে আসে এক অভিভাবকের কণ্ঠ। তিনি কথা বলছিলেন, ...ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে, সহজ বই কী আছে?...।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বাংলানিউজকে বলেন, এটি নিতান্তই ভাষাগত সমস্যা। যা কাটিয়ে ওঠা আমাদের জন্য একান্ত জরুরি। নইলে আমাদের সাহিত্য এসব ইংরেজি মাধ্যমের বিশাল অংশের পাঠকদের পাবে না।

ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, ভাষা টিকে থাকে মানুষের কথা, লেখা, সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে। আমরা আমাদের পাঠককে সংকচিত করে ফেলছি, এর দায় রাষ্ট্রেরও। আর প্রাথমিকভাবে বড় দায় বর্তায় অভিভাবকদেরও। ইংরেজি মাধ্যমে সন্তান পড়ে বলে বাংলা সাহিত্য পড়ার উৎসাহ অভিভাবকরা দেবেন না- তা হতে পারে না।

এদিকে, দাদির সঙ্গে মেলায় এসেছে আবির ও আদিবা। বাংলা ভালো বই যা আছে সেগুলোর দাম দাদির অর্থিক সামর্থ্যের বাইরে। তাই ছোট ছোট বিদেশি কার্টুন নির্ভার বই কম দামে কিনে দিয়েছেন। দাদি হাসিনা জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমি পেনশনের টাকা এখনও পাইনি, তাই ওদের দাম দিয়ে ভালো বই কিনে দিতে পারলাম না। আর বইয়ের যা দাম; মাথা খারাপ করা অবস্থা! একদিকে ওদের বায়না অন্যদিকে বইয়ের দাম- সব মিলিয়ে ভালো কিছু কিনে দেওয়া মধ্যবিত্তের জন্য সমস্যাই।

হাসিনা জামান আরও বলেন, এমনিতেই মেলা ঘুরে দেখলাম; ভালো মানের শিশুতোষ বইয়ের বড্ড অভাব। তার ওপর আবার বিদেশি চরিত্রের বইয়ের আধিক্য। এমন যদি চলতে থাকে তবে আমাদের ভাষা নির্ভর, গল্প নির্ভর কাজের কদর অন্তত শিশু মহলে কমে যাবে। কারণ বিদেশি চরিত্রের বই দেখতে ভালো-রঙিন, তা দেখেই আকৃষ্ট হয় শিশুরা।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিশিষ্ট লেখক-উন্মাদ ম্যাগাজিন সম্পাদক আহসান হাবীবের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শিশুদের বই কেনার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের একটা চাপ থাকে। বাবা-মা চান সহজ-সরল বই দিয়ে তাদের ভুলিয়ে বাড়ি নিতে, কারণ সৃজনশীল পড়াকে এখনও অনেকে বাড়তি চাপ মনে করেন। তাদের কাছে সন্তানের স্কুলের পড়াই গুরুত্বপূর্ণ। আর শিশুরা নিজে পছন্দ করতেও পারে না। মূলত প্রচ্ছদ দেখে নিতে আগ্রহী হয়। ফলে বিদেশি বইয়ের কাটতি হয়ে যায়, যা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

মেলায় একটু মাঝারি দামের মধ্যে রয়েছে সব বিদেশি সংস্কৃতির বই, আর ভালো মানের সাহিত্য, শিশু-কিশোর উপন্যাস যাও বা রয়েছে তার দাম অনেক বলে অভিযোগ করলেন একাধিক অভিভাবক। এছাড়া বিভিন্ন শিশু-স্টলে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি সংস্কৃতির বই। যার মধ্যে মটু-পাতুল-সিনড্রেলা ঘরানার বই অন্যতম- যেন দেখার কেউ নেই।

মেলা ঘুরে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকাশনী শিশুসাহিত্য সমগ্র করেছে। তবে তার পাঠক খুব একটা নেই, বিশেষ করে শিশুরা।

জ্ঞান-সৃজনশীল ভিত্তিক অন্য প্রকাশকরা বলছেন, এই চল (বিদেশি চরিত্রের বইপত্র) অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। যা রোধে গোড়া থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিজেদের চরিত্র তৈরি করে, বইয়ে রঙ-বেঙের রূপ দিতে হবে। তবেই শিশুরা নিজস্ব ধরণ অর্থাৎ বাঙালিয়ানা পাবে। প্রকৃত কিছু শিখবে।

মেলার শিশু চত্বরের স্টলগুলো ঘুরে দেখা যায়, পান্তাবুড়ি পপ আপ (প্রগতী), আলী ইমামের কিশোর অ্যাডভেঞ্চার (আরো প্রকাশন), নাজিয়া জাবীনের পুষি আর আয়শা (রাতুন গ্রন্থপ্রকাশ), মটু-পাতলু আদর্শলিপি (হলি প্রকাশনী), চলছে আমার গাড়ি (পাতাবাহার), সিসিমপুরের-২০১৬ সালের ১৭ সেট বেশ কাটতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬
আইএ/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।