নিয়ম মেনে পূর্ব নির্ধারিত সময় বিকেল ঠিক ৩টায় মেলার উভয় অংশের দরজা খোলা হয়। এর ১০ মিনিটি আগেই মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশে ঢোকার জন্য ৬টি মেটাল ডিটেক্টরের সামনে তৈরি হয় ৬টি ছোট্ট লাইন।
ওই যে বলছিলাম, মেলায় বোধ হয় সুন্দর মুখগুলোই আসে! অথবা আসার পর মুখগুলো সুন্দর হয়ে যায়! আসলে দু’টো-ই সত্য! কারণ, মেলায় আসার পরে আর কেউ অসুন্দর থাকে না। সবাইকে সুন্দর বানাতে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি আর গ্যালারিয়া ফুল নিয়ে অপেক্ষায় থাকে জেসমিন, রাসেল, ওয়াহিদুলরা।
ফলে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসা বইপ্রেমী, বইক্রেতা অথবা দর্শনার্থীরা বই’র কাছে পৌঁছানোর আগেই তাদের কাছে পৌঁছে যায় ফুল! সুতরাং নন্দনপ্রিয় মানুষগুলো নতুন বই’র গন্ধ পাওয়ার আগে তাজা ফুলের গন্ধ পেয়ে যান।
গত বছর (২০১৬ সাল) থেকে মেলা হকারমুক্ত। চায়ের দোকান, খাবারের দোকান, খেলনার দোকান, ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, চা-পান-বিড়ি-সিগারেট-কোনো কিছুই ভিড়তে পারছে না মেলার ত্রি সীমানায়।
গত বছর ফুল বিক্রেতাদেরকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি মেলা চত্বরে। ফুল পিয়াসী মানুষগুলো চার নেতার মাজার পযর্ন্ত হেঁটে গিয়ে গ্রিলের ওপাশ থেকে ফুল কিনে এনেছেন। এবার মেলা কর্তৃপক্ষ ফুল বিক্রেতারদের প্রতি সদয় হয়েছে। ফুলওয়ালারা ঢুকতে পারছেন মেলা চত্বরে।
ফলশ্রুতিতে মেলায় আসা বেশিরভাগ তরুণীই ফুল দিয়ে তৈরি টাইরা বা রিং কিনে মাথায় পরছেন। কেউ কেউ ফুল কিনে খোঁপায় গুজছেন। তবে ফুলের তৈরি রিং বেশি চলছে মেলায়। এমনকি তরুণীদের কাছে বই’র চেয়ে ফুলের কদরটাই বেশি!
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশমুখে কথা হয় ফাতেমাতুজ্জোহরা লামিয়ার সঙ্গে। মগবাজার থেকে মেলায় আসা লামিয়া এখন পর্যন্ত বই কেন নি। তবে তার মাথায় শোভা পাচ্ছে গোলাপ, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকা ও গ্যালারিয়া ফুল দিয়ে তৈরি রিং।
শুধু কি ফুল? বই কিনবেন না? নিজের নাম-ধাম পরিচয় না দিয়ে এমন প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হন লামিয়া। পরিচয় জানার পর মুচকি হেসে বলেন, এই তো এলাম। ছোট্ট বাচ্চাদের ফুল বিক্রি করতে দেখে কিনে নিলাম একটা। ভালো লাগলে বইও কিনবো।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনের পুকুর পাড়ে দেখা হয় ফারিহা এবং তার বন্ধু আবিরের সঙ্গে। ফারিয়ার মাথায়ও শোভা পাচ্ছে ফুলের রিং। বন্ধুই কিনে দিয়েছে রিংটা। বইও কি কিনে দেবে সে?
ওকেই জিজ্ঞেস করুন, অত:পর আবিরের সরল উত্তর ফুল কিনেত খরচ হয়েছে ৫০ টাকা। বই কিনেত অন্তত দেড় শ’ টাকা লাগবে। সুতরাং বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে।
মেলা চত্বরের বাইরে মূল সড়কে কথা হয় ফুল বিক্রেতা রাসেলের সঙ্গে। তার ভাষ্যমতে, প্রতিদিন ১৫ শ’ ২ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করে সে। এতে তার আয় হয় ৪/৫ শ’ টাকা। মেলা না থাকলে ফুলের তোড়া ও স্ট্রিক বিক্রি করে প্রতিদিন আয় হয় ২/৩ টাকা।
পাশেই ফুল বিক্রি করছিল ওয়াহিদুল ইসলাম। শরীর প্রতিবন্ধী এই শিশু বাংলানিউজকে বলেন, অহন তো এট্টু আসতে দেয়। গ্যাছে মেলায় তো পুলিশ ঢুকতেই দিত না। অ্যাহোনো মাঝে-মইধ্যে পুলিশে দাবড়ায়।
মেলায় আসা সব শ্রেণীর মানুষ-ই বই কিনে ঘরে ফিরুক। সঙ্গে ফুল কিনলেও দোষ নেই। ফুল আর বই দুই-ই সুন্দর। এ দু’টি বস্তুই মানুষের মন ও মননকে নির্মল করে সুন্দর করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭
এজেড/বিএস