নিজের কাছে আমার নিজেরও প্রশ্ন, আমাদেরতো একটা সমৃদ্ধ ইতিহাস ছিলো, তাহলে আমাদের বর্তমানটা এতো ঘোলাটে কেন? সেকি ওই ইতিহাসকে নিজের অজান্তে ভুলে যাওয়ার জন্যে? নাকি অন্যকোনো কারণে?
অর্নবের এ প্রশ্নটাই উপন্যাসের আলোয় তুলে ধরেছেন লেখক সিনহা আবুল মনসুর। তার ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস 'এক মুক্তিযোদ্ধার না বলা কথা'র নায়ক অর্নবের মুখ দিয়ে তিনি প্রশ্নটি করেছেন নিজেকে, করেছেন আমাদেরকেও।
এই ইতিহাস ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ পর্যন্ত। বইয়ের শুরুতেই লেখক সিনহা আবুল মনসুর বলেছেন:
'গল্পটা আমার নয়। গল্পটা এক মুক্তিযোদ্ধার। আমি তার হয়ে গল্পটা আপনাদের বলবো। এই গল্প ওই মুক্তিযোদ্ধার বেড়ে ওঠার গল্প। এই গল্প তার শৃঙ্খলিত হওয়ার গল্প। এই গল্প তার শৃঙ্খল মুক্তির গল্প!
এই গল্প শুনতে শুনতে যে কেউই খুব সহজেই প্রবেশ করবেন বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সেই সব উত্তাল দিনগুলোতে। সেখান থেকে চুয়ান্নর যুক্ত ফ্রন্ট নির্বাচনে। তারপর এক সময় শৃঙ্খলিত হবেন আইয়ুব খানের সামরিক শাসনে!
এর কিছু পরেই রয়েছে পাক-ভারত যুদ্ধ। ছয় দফা'র আন্দোলন। উনসত্তুরের গণঅভ্যুত্থান। গল্পের নায়কের তখন প্রথম যৌবন! তার কানে হেলাল হাফিজের উদাত্ত আহ্বান:
'এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। ’
এলো আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ। বাঙালির জীবনে শ্রেষ্ঠ সময়।
এক মুক্তিযোদ্ধার না বলা কথা একাধারে উপন্যাস, স্মৃতিচারণ এবং বাঙালির জীবনের অখণ্ড ইতিহাস।
যে ইতিহাসেকে আমরা ভুলতে বসেছি অবলীলায়!
এক মুক্তিযোদ্ধার না বলা কথা বীর বাঙালির সংগ্রামের গল্প, বাঙালির অর্জনের গল্প! এই প্রজন্ম সেই সংগ্রাম আর সেই অর্জনকে যতো বেশি করে জানতে পারবে, আমাদের জন্য ততই মঙ্গলজনক!
সিনহা আবুল মনসুরের 'এক মুক্তিযোদ্ধার না বলা কথা' বইটি আমাদের কথা সাহিত্যে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বইটি বের করেছেন অগ্রজ সাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের তার দিব্য প্রকাশ থেকে। প্রচ্ছদ করেছেন তানভীর রনি। এরকম একটি মূল্যবান বই উপহার দেওয়ার জন্য লেখক সিনহা আবুল মনসুরকে সাধুবাদ জানাই।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭
এসএনএস