আগের দিনগুলোর মতো এদিনও কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৫২টি। এরপর উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে ২৫টি।
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমর সেনের জন্মশত বার্ষিকীর আলোচনা সভা। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশ নেন কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান এবং কবি পিয়াস মজিদ। সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক।
‘সমর সেনের মনন ও কবিতাকৃতি’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেন, ‘যে শাহরিক স্তব্দতা-নিঃসঙ্গতা আর মধ্যবিত্তের পলায়নবাদী নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সমর সেন কবিতা শুরু করেছিলেন, যে তীক্ষ্ম ব্যঙ্গ আর বিদ্রুপ ছিল তার লেখনিতে, তা দিশা পেয়ে যায় মার্কসীয় প্রত্যয়ে সচেতনতার সরণি বেয়ে। রাতের অন্ধকার আর হলুদ চাঁদের বদলে প্রাণ ডুবে যেতে চায় ফসলের সবুজ বন্যায়’।
‘তার জন্মের এই একশ বছর পরেও দেখি, মধ্যবিত্ত আরো নিশ্চেতন, ভোগী ও ধূর্ত হয়ে উঠেছে। সবুজ ফসল ভরা ক্ষেতের আবেগপ্লাতুর বয়ান আজও মধ্যবিত্তের চেতনায় আলোড়ন তোলে। তাই সমর সেনের কবিতা প্রাসঙ্গিকভাবেই আমাদের সেই ইতিহাসবোধেরই ইমেজিস্ট অন্তর্বয়ন হয়ে ওঠে’।
আলোচকরা বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি সমর সেনের বিচার করতে হলে শুধুমাত্র কবিতা ও সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, তার দর্শন ও চিন্তা-চেতনাকেও আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। আত্মসমালোচনা ও আত্মপর্যবেক্ষণবোধ তাকে অনন্যতা দান করেছে। কলকাতার ক্ষয়িষ্ণু সমাজকে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন নাগরিক সমাজের বলয়ের মধ্যে থেকেই। সমাজের অসঙ্গতি, হতাশা দারিদ্র্য, তার কবিতায় অসামান্য শিল্পদক্ষতায় মূর্ততা পায়’।
সভাপতির বক্তব্যে আহমদ রফিক বলেন, ত্রিশের দশকের শেষ থেকে চল্লিশের দশকে সমাজতান্ত্রিক সাহিত্যের যে ধারা বহমান ছিল, সমর সেন ছিলেন সে ধারার অন্যতম কবি। ঔপনিবেশিক আমলে কলকাতার ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত সমাজ ছিল কবি সমর সেনের কবিতার উপজীব্য। বাংলা কাব্যসাহিত্যে তিনি নিজের জন্য যেমন একটি স্থায়ী স্থান তৈরি করে গেছেন, তেমনি আমাদের জন্যও রেখে গেছেন অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত’।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল গোলাম কুদ্দুছের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’র শিল্পীদের পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, আলম দেওয়ান, রুশিয়া খানম, আনোয়ার বাউল, রনজিত দাস বাউল এবং মমতা দাসী বাউল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বাবু জামান (তবলা), মো. ফায়জুর রহমান (বাঁশি), মহিন শাহ (মন্দিরা), নির্মল কুমার দাস (দোতারা) ও মো. মিজান (বাংলা ঢোল)।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭
এমএন/এএসআর