এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ-মেলার দুই অংশেই ছিলো ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। বড় প্রকাশনী তো বটেই, ছোট প্রকাশনীর স্টলেও পাঠক ও ক্রেতার ভিড়।
বাংলা একাডেমির মূল চত্বর ও একাডেমিসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে প্রায় ৪ লাখ বর্গফুট জায়গা নিয়ে এবারের গ্রন্থমেলার আয়োজন। বিশাল পরিসরে আয়োজিত মেলার দুই অংশই শুক্রবার বিকেল ছিলো পরিপূর্ণ।
একাডেমি চত্বরে ১শ’ ১৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫শ’ ৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৬ শ’ ৬৩টি ইউনিটের প্রত্যেকটি স্টলে লোকে লোকারণ্য। বাংলা একাডেমিসহ ১৬টি প্রকাশনা সংস্থার ১৫টি প্যাভিলিয়নেও ছিলো প্রচণ্ড ভিড়। এ ছাড়া বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারেও পাঠক, দর্শনার্থী, লেখক ও প্রকাশকের ভিড় মেলার মেলার অতীত রেকর্ড ভেঙেছে বরে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেলার ভিড় কমিয়ে পাঠক, লেখক, প্রকাশক, ক্রেতা, বিক্রেতা, দর্শনার্থীদের চলা-ফেরা আরামদায়ক করার জন্য ২০১৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ থেকে মেলা গিয়ে হাজির হয় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৃক্ষশোভিত ছায়া-বীথিতলে।
কিন্তু তাতেও আর শেষ রক্ষা হলো কই? পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও এর আগে পাওয়া ৪টি ছুটির দিন জানান দিচ্ছিলো বিস্তৃত এ পরিসরেও বইপ্রেমীদের প্রয়োজনীয় জায়গার সংকুলান হবে না। মেলার ১৭তম দিনে এসে সেই সেটিই বাস্তবে রূপ নিলো।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার কিছু পরে দোয়েল চত্বর দিয়ে মেলায় ঢোকার সময় রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি অবস্থা। এখান থেকেই শুরু হয়ে গেছে মেলার ভিড়। সব বয়সী মানুষ মেলায় ঢোকার জন্য সামনের দিকে অগ্রসরমান। কে কার আগে যাবে, তাই নিয়ে প্রতিযোগিতা!
বিপরীত দিক টিএসসি চত্বরের অবস্থা আর বেগতিক। ধাক্কা-ধাক্কি করে সোহরাওযার্দী উদ্যানের প্রবেশদ্বারে এগোচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। সবাই মেলা চত্বরে পৌঁছানোর পর মানুষের মাথা ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত মেলায় আসা বইপ্রেমীদের ভাষ্যমতে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে শুক্রবারের ভিড়।
রামপুরা থেকে মেলায় আসা একটি আইসিটি ফার্মে কর্মরত তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মিতই মেলায় আসি। গত দুই/তিন দিন মেলায় ছিলো প্রচণ্ড ভিড়। কিন্তু আজকের ভিড় অতীতের সব ভিড়কে হার মানিয়েছে। এটা লেখক-প্রকাশক ও আয়োজকদের জন্য ভালো খবর।
ভালো খবর তো বটেই। মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার– এই তিনদিন বিশেষ দিবস হওয়ার কারণে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই ছিলো বেশি। এদের বেশিরভাগের লক্ষ্য ছিলো প্রেম বিনিময়! বই কেনার ‘ঝামেলা’র মধ্যে তারা যায়নি।
কিন্তু মেলার ১৭তম দিন শুক্রবার যারা এমুখো হয়েছেন, তাদের ৮০ ভাগের লক্ষ্য ছিলো বই কেনা। বই বিক্রিও হয়েছে বেশ। সঙ্গত কারণেই লেখক-প্রকাশকরা এমন একটি দিন পেয়ে বেজায় খুশি!
কথা হয় তাম্রলিপি প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম রনির সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, যে কোনো প্রকাশকের জন্য আনন্দ দর্শন হলো পাঠকের হাতে বই। সেটি আজ দেখা যাচ্ছে; ভালো লাগছে।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) অন্যতম পরিচালক মারুখ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পাঠকদের জন্যই বই প্রকাশ করা হয়। সেই বই যখন পাঠকের হাতে হাতে পৌঁছে যায়, তখন তা দেখতে ভালোই লাগে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৭তম দিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। শেষ হবে রাত সাড়ে ৮টায়। এদিন নতুন বই এসেছে ২৪১টি। এর মধ্যে ৪৬টি বই’র মোড়ক উন্মোচন হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্ব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী সুবীর নন্দী।
এছাড়া শুক্রবার শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ক শাখায় অনুভা হালদার, মিনহাজ জামান শান, মানহা মারনিয়া জামান, খ শাখায় তাসনিম সুলতানা মহীয়সী, ফারহাত লামিয়া, অতন্দ্রীলা পদ্য দে, গ শাখায় আর্নিকা তাহসীন, নাহিয়ান মাইশা অয়মী এবং কানিজ ফাতেমা বিয়জী হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি এদের সবাইকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আশির দশকের কবিতা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি কুমার চক্রবর্তী। আলোচনায় অংশে নেন ড. মাসুদুল হক ও ড. আমিনুর রহমান সুলতান। সভাপতিত্ব করেন কবি রুবী রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
এজেড/এএ