অল্প-স্বল্প দ্বিমত থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিচিত জন, ফেসবুক বন্ধু ও ভক্তরা নতুন কিংবা তরুণ লেখক, কবি এবং সাহিত্যিকদের বই বিক্রিতে প্রধান ভরসা। লেখার পরিচিতির ক্ষেত্রে এই পরিচিতজনরাই তাদের সাঁকো।
কেউ কেউ বলছেন, গণমাধ্যমে বইয়ে প্রচারণা ও বই নিয়ে ইতিবাচক খবর বই বিক্রিতে বড় ভূমিকা রাখে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য গণমাধ্যমের সেই খবরও লিংক হয় ফেসবুক দিয়েই ঘুরে। তাই শুধু বই নয়, বর্তমান সময়ের অধিকাংশ পণ্য বা সেবার প্রচার, প্রসার ও বিক্রির ক্ষেত্রে ফেসবুকের তুলনা মেলা ভার।
বইমেলায় এ বছর দু’টি বই এসেছে তরুণ কবি হাবীবাহ নাসরীনের। একটি উপন্যাস, ‘তুমি আছো, তুমি নেই’, আর একটি শিশুতোষ গল্পের বই, ‘টুম্পা ও তার বিড়ালছানা’।
তিনি বলেন, নতুন লেখকদের লেখা দ্রুত পাঠকের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আগে পত্র-পত্রিকায় পাঠকের কাছে বইয়ের খবর যেতো, এখন যেহেতু পত্র-পত্রিকার জায়গাটা ফেসবুক নিচ্ছে, সেহেতু এই ফেসবুকই প্রচারণার মাধ্যম হয়ে উঠছে।
প্রথম ভ্রমণ বিষয়ক ‘উইথআউট বর্ডার’ বইয়ের লেখক মাজেদুল নয়ন বলেন, নতুন লেখকদের বই বিক্রির ক্ষেত্রে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, পরিচিতরাও আগ্রহ নিয়ে বই কেনেন। যদি পড়ে ভালো না লাগে, তাইলে কিন্তু বিপত্তি। পরের মেলায় তারা লেখককে দেখলে এড়িয়ে যেতে চাইবেন।
তরুণ কবি ও লেখক আখতারুজ্জামান আজাদ সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে বলেছেন, পাঠক এখন যারা বই কেনেন, তারা লেখকের প্রোফাইল ঘেঁটেঘুটে লেখক সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নিয়েই বই কেনেন। এখনকার পাঠক অনেক সচেতন, যাচ্ছে-তাই বই কিনে প্রতারিত হতে চান না।
ফেসবুকে জনপ্রিয় হওয়ায় গতবার প্রথম গল্পের বই ‘তনিমার সুইসাইড নোট’ ভালোই বিক্রি হয়েছে তরুণ গল্পকার ও সাংবাদিক মাহতাব হোসেনের। এবার তার দ্বিতীয় গল্পের বই ‘ঈশ্বরদী বাইপাস’ও বেশ চলছে।
বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে হরর উপন্যাস ‘মানুষখেকো’। এ বইয়ের লেখক রাজীব চৌধুরী বলেন, দেখুন, প্রথম বই যখন বেরিয়েছিলো পরিচিতদের কাছে তখন ব্যাপারটা ছিল অনেকটা উৎসবের মতো। ওরা আমার বই কিনেছে। প্রকাশক খুশি হয়েছে। আমিও খুশি হয়েছে। পিঠ চাপড়ে দিয়েছে অনেকেই। কিন্তু এখন পরিচিত পাঠকের চেয়ে অপরিচিত পাঠক অনেক বেশি মূল্যবান আমার কাছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে পরিচিতরা বই কিনছে। তবে অপরিচিত একজনের কাছে আমি পরিচিত হতেই পছন্দ করছি।
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ফেসবুকে যারা জনপ্রিয়। যাদের পোস্ট বা স্ট্যাটাস বেশ লাইক-শেয়ার হয়, তাদের বই কেনাতে মানুষের আগ্রহ থাকে। এই যেমন এবারের বইমেলায় রাজীব হাসান ও ফখরুল আবেদীনের বই বেশ ভালো চলছে। ফেসবুকে তারা জনপ্রিয় হওয়ায় তাদের বইয়ের বিক্রি বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, ফেসবুক একটা উন্মুক্ত জায়গা। গণতান্ত্রিক ও সাম্যবাদের জায়গা। এখানে সবাই যে যার মতো লিখতে পারেন। এই লেখা দ্বিতীয় কোনো হাতের মাধ্যমে এডিট করা হয় না। তাই ফেসবুকের লেখাকে উৎকৃষ্ট বলা যায় না। তবে এটাও সত্য ফেসবুকে অনেকেই ভালো লিখছে। বইয়ের প্রচারণা ও বাজারজাতে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলেও মন্তব্য করেন আনিসুল হক।
একদিকে, ফেসবুক যেমন লেখক ও বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে, এর উল্টো চিত্রও আছে। ফেসবুকেই অনেক চমৎকার লেখা, অনুভূতি, মতামত প্রকাশ হচ্ছে, ফলে অনেকে বই কেনার চেয়ে বরং ফেসবুক ব্যবহারে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
অন্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিজ্ঞাপনের বিষয়টি অনেক ব্যয়বহুল। প্রকাশকের পক্ষে সবসময় সব বইয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই নতুন লেখক বা তরুণ লেখকদের জন্য ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানোটা সহজ হয়। যা বই বিক্রিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শুধু নতুন লেখক নয়, বই বিক্রিতে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের ক্ষেত্রেও ফেসবুক বিশেষ ভূমিকা রখছে বলেও জানান তিনি।
মেহেরুল আমিন ও সুপর্ণা দত্ত নামে দুই চাকরিজীবী বলেন, সারাদিন এতো ব্যস্ত থাকি, ফেসবুক পড়েই শেষ করতে পারি না, বই পড়বো কখন?
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭
টিআই/এইচএ/