মেলা ঘুরে জানা যায়, প্রকাশকরা বিক্রির দিক থেকে খুশি হলেও নতুন লেখকদের বই তেমন বিক্রি না হওয়ায় অনেকটা হতাশ। তাদের মতে, মেলায় ভৌতিক, কমিক, শিশুদের যে কোনো বই আর সিরিয়াস টাইপের বই বেশি চলে।
পাঠকরা হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালসহ কিছু নামকরা লেখকদের বইয়ের মধ্যেই ডুবে আছেন। তাদের বইগুলোই বাবা-মা কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে এসে নিচ্ছেন। আবার বাবা-মাও তাদের সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বইগুলোই কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু নতুন লেখকদের বই কেবল তাদের পরিচিতজনরাই নিচ্ছে। এতে একজন সম্ভাবনময় লেখকের বিকাশের সুযোগ কমে যায়।
চারুলিপি প্রকাশনের প্রকাশক হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, মেলা প্রায় শেষ। এখন দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতার বেশি। তবে তরুণ লেখকদের বই চলে না। সবাই প্রতিষ্ঠিতদের পেছনে পড়ে আছেন। এটা বিরাট অশুভ দিক। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, সবসময় সিরিয়াসধর্মী বিষয় আর শিশুদের জন্য লেখা যে কোনো বই ভালো চলে। কিন্তু গল্প-উপন্যাস-কবিতার বইয়ের ক্ষেত্রে গণ্ডির বাইরে যেতে পারেনি পাঠক।
বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আহসান উল্ল্যাহ বই কিনতে এসে প্রতিষ্ঠিত সব লেখকদের বইগুলোই নিয়েছেন। বাংলানিউজ তার মুখোমুখি হলে বলেন, নতুন লেখকদের মধ্যে ভরসা করার মতো তো তেমন নেই। তাদেরও আরও ভালো ভালো লেখা আনা উচিত। আমরাও অন্যদের বই পড়তে চাই। কিন্তু নতুনদের মধ্যে ভালো লেখা আসার তেমন খবরও আসছে না। ভালো লেখা এলে পাঠক যেখানেই থাকুক, সেখানেই ছুটে যাবে।
গ্রন্থমেলার শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ২৫তম দিনে মোট ১৬৩টি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। আর মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৪১টি গ্রন্থের। যেসব বই প্রকাশ হয়েছে এগুলোর মধ্যে গল্প ২৪টি, উপন্যাস ২২টি, প্রবন্ধ ৮টি, কবিতা ৫৪টি, গবেষণা ৩টি, ছড়া ৬টি, শিশুসাহিত্য ৭টি, জীবনী ৫টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৪টি ও নাটকের বই ১টি। এছাড়া রাজনীতির ওপর ২টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্যের ওপর ২টি, কম্পিউটার বিষয়ক ১টি, রম্য/ধাঁধাঁ বিষয়ক ১টি ও ধর্মীয় ১টি বই এসেছে।
এসব তথ্য জানান বাংলা একাডেমির পরিচালক (জনসংযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ) অপরেশ কুমার ব্যানার্জী।
২৫তম দিনে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকুর রশিদ। আলোচনায় অংশ নেন আমীরুল ইসলাম এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন জাকির তালুকদার।
আলোচকরা বলেন, বাংলার আবহমান ঐতিহ্যের সঙ্গে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমন্বয়ের ফসল হয়ে উঠেছে বলেই বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য ভিন্নতর উচ্চতা ও উজ্জ্বলতা লাভ করেছে। প্রযুক্তির বিস্ফোরণ মানুষকে পাঠবিমুখ করে তুলেছে। যোগ্য শিশুসাহিত্য রচনায় এগিয়ে এলে সাহিত্যের এ শাখাটি আরও সার্থক ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
সভাপতির বক্তব্যে জাকির তালুকদার বলেন, শিশুসাহিত্য জাতিগঠনের ভিত। সারা পৃথিবীর সব চিন্তাবিদ অনুভব করেছেন জাতি গঠনে শিশুসাহিত্যের প্রয়োজনীয়তা। ম্যাক্সিম গোর্কি থেকে রোমা রঁলা একই কথা বলেছেন। কিন্তু শিশুসাহিত্যে যতখানি মনোযোগ দেওয়ার কথা ততখানি মনোযোগ আমাদের লেখকরা দিচ্ছেন না। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
রোববারের (২৬তম দিন) কর্মসূচি
রোববার বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আত্মজীবনীমূলক সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনায় অংশ নেবেন ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী, ড. এএসএম বোরহান উদ্দীন। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। আর সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, ফেব্রয়ারি ২২, ২০১৭
ইইউডি/এএ