ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

সিসিমপুর আর দৈত্য-দানোর গল্পে মুগ্ধ শিশুরা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮
সিসিমপুর আর দৈত্য-দানোর গল্পে মুগ্ধ শিশুরা সিসিমপুরে মুগ্ধ শিশু-কিশোররা/ছবি: কাশেম হারুন

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ছুঁই ছুঁই করেও যেন সাহস হচ্ছিলো না হালুমের হাতে হাত মেলাতে। যদি বাঘে ধরে নেয় এই ভয়ে। তবে শেষ পর্যন্ত অনেক সাহস জমিয়ে বাবার কাঁধে উঠে হালুমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে গুলতেকিন মারিয়া।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে ছোট্ট মারিয়া বলে, হালুমের সঙ্গে হাত মেলাতে ভয় হচ্ছিলো। হালুম তো বাঘ, যদি ধরে খেয়ে ফেলে!

মঞ্চে এক এক করে যখন হালুম, টুকটুকি, ইকরি আর শিকু এলো, তখন প্রায় সব শিশুই চিৎকার করে ডাকতে লাগলো তাদের নাম ধরে।

এসময় অনেকে তো আবার বাবা-মাকে পরিচয়ও করিয়ে দিলো, ওটা হালুম, শুধু মাছ খায়। ওটা ইকরি, শুধু প্রশ্ন করে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার শিশু চত্বর ততক্ষণে মুখরিত শিশুদের পদচারণায়। সকাল সাড়ে ১১টায় সিসিমপুর মঞ্চে হালুম-টুকটুকি আসার কথা থাকলেও তারা এলো ১২টার একটু পর। তবে এ অতিরিক্ত সময়ের অপেক্ষা শিশুদের মনে তাদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রগুলোর জন্য আরো ভালোবাসা বাড়িয়েছে।

মেলায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত জনপ্রিয় কার্টুন সিরিজ ১২৩ সিসিমপুরের চরিত্রগুলোই আনা হয় এখানে। এ চরিত্রগুলোই শিশুপ্রহরে প্রধান আকর্ষণ থাকে শিশুদের কাছে।

টিভিতে দেখা কার্টুনগুলো বাস্তবে শিশুদের সামনে, তাদের স্পর্শে, এ অনুভূতি যেন শিশুদের আনন্দকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। সিসিমপুর মঞ্চে এসময় শিশুদের সঙ্গে আনন্দ-হাসিতে মেতে ওঠে চরিত্রগুলো। তারা শিশুদের স্পর্শ করে কোমল হাত বাড়িয়ে।

হালুম, ইকরি, টুকটুকি আর শিকুর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগির পর স্কুলব্যাগ ভর্তি করে রূপকথার দৈত্যদানোর গল্প কিংবা রহস্য-রোমাঞ্চে ঠাঁসা বইগুলো লুফে নিলো খুদে পাঠকের দল; বাবা-মায়ের হাত ধরে ওরা ঘুরে বেড়ালো বইমেলা প্রাঙ্গণ।

মেলা নিয়ে কথা হয় ছোট্ট মারিয়ার সঙ্গে। বলে, মেলায় কত্ত বই! সিসিমপুরও দেখেছি আমি। আর এবার বাবার সঙ্গে ঘুরে বই কিনবো। ' তা কি কি বই কিনবে শুনি? প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হেসে কুটিকুটি হয় সে। তারপর আলতো ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে, 'অনেক বই কিনবো। তোমায় বলবো না!'

বইমেলার শিশু প্রহর নিয়ে কথা হয় বিভিন্ন শিশুর অভিভাবকের সঙ্গেও। এ প্রসঙ্গে মারিয়ার বাবা মামুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাচ্চাদের মেলায় আনতে পেরে ও সিসিমপুর দেখাতে নিয়ে এসে ভালো লাগছে। সিসিমপুরে কার্টুন চরিত্রগুলো কীভাবে ব্যবহার করে, কীভাবে সবার সঙ্গে মেলামেশা করে, তা দেখে বাচ্চারা অনেক কিছু শিখতে পারবে।

তিনি বলেন, আমরা বাবা-মায়েরা তো সকালে বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে এসে আর সময় দিতে পারি না। স্কুলে কি শেখাচ্ছে সেটিও অনেক সময় সঠিকভাবে খোঁজ নিতে পারি না। এখানে এসে বাচ্চাদের সময় দিতে পেরে ভালো লাগছে। ওরাও অনেক কিছু শিখছে, নতুন বই দেখছে, ভালো লাগলে কিনছে। বইয়ের এই মলাট ওল্টানোটা ওদের জন্য অনেক বড় কিছু।

আরেক অভিভাবক সায়মা আক্তার বলেন, মেলায় শিশুদের যেরকমটা বই আশা করছিলাম, প্রায় সেরকমটা পাচ্ছি। বাচ্চারা সাধারণত গল্প আর কার্টুন পছন্দ করে, তবে ডিকেটটিভ আর সাধারণ জ্ঞান, শিক্ষামূলক গল্প-কবিতা আর মহান মানুষদের নিয়ে বইগুলোও বেশ ভালো।

ছুটির সকালে শিশুদের পদভারে মুখর হয় গ্রন্থমেলা। প্রযুক্তির দুনিয়ায় শিশু-কিশোররা এখন আর বই ছুঁয়ে দেখে না- এমন তির্যক মন্তব্যকে তুড়ি মেরে শিশু-কিশোরেরা চলে এসেছে এবারের বইমেলায়। গ্রন্থমেলার মাত্র দ্বিতীয় দিনে তারা বাবা-মার হাত ধরে বা কোলেপিঠে চড়ে মেলা প্রাঙ্গণ চষে বেড়িয়েছে, হাতে তুলে নিয়েছে পছন্দের বইটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।