প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অমর একুশে গ্রন্থমেলার অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) মেলায় দর্শনার্থী ছিল তুলনামূলক অনেক কম। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে গ্রন্থমেলার দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও অন্যান্য দিনের তুলনায় দর্শনার্থী ছিল একেবারেই কম।
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, জনসমাগম কম হওয়ার কারণে বই বিক্রিও একেবারে কম ছিল বৃহস্পতিবার। বিএনপি চেয়ারপারসনের রায়কে কেন্দ্র করেই পাঠক-দর্শনার্থী কমেছে বলে সবার বক্তব্য। তবে শিগগির এই প্রভাব কেটে যাবে বলে আশাবাদী তারা।
এ ব্যাপারে প্রিয়মুখ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আহমেদ ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে উদ্বেগ, তারই ফল পাঠক-দর্শনার্থীশূন্য বইমেলা। তবে আশা করি খুব দ্রুতই এ সংকট কেটে যাবে।
এদিকে, মেলার দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিনে নতুন বই এসেছে ৬৪টি। এদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘এ বি এম হবিবুল্লাহ: মমতাজুর রহমান তরফদার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। আলোচনায় অংশ নেন ফিরোজ মাহমুদ, সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পারভীন হাসান।
ড. এ বি এম হবিবুল্লাহ’র ওপর প্রবন্ধে আকবর আলি খান বলেন, ড. হবিবুল্লাহর গবেষণা থেকে দেখা যায় তুর্কি সুলতানরা ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। দিল্লির সুলতানদের সাফল্য সম্পর্কে তিনি যে চিত্র এঁকেছেন তা আজও প্রাসঙ্গিক। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো দিল্লির সুলতানদের রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে দেশ চালালে অনায়াসেই সুশাসনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ইতিহাসচর্চার প্রচণ্ড হুমকির কাছে ড. হবিবুল্লাহ আত্মসমর্পণ করেননি। তিনি প্রগতিশীল চেতনার আলোকবর্তিকাকে লালন ও রক্ষা করেছেন। তার লেখা শুধু বিভাগপূর্ব ভারত বা পাকিস্তানি প্রজন্মের জন্যই প্রাসঙ্গিক নয়, তার বক্তব্য আজকের প্রজন্মের জন্যও সমভাবে সত্য। ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে তিনি অজ্ঞানতার তিমিরকে চূর্ণ করেছেন।
মমতাজুর রহমান তরফদার’র প্রবন্ধে মেসবাহ কামাল বলেন, ইতিহাসচর্চার গতানুগতিক ধারাকে অতিক্রম করে বিজ্ঞানসম্মত ও প্রগতিশীলতার আলোকে মধ্যযুগের ইতিহাসকে পুনর্গঠন করেছেন মমতাজুর রহমান তরফদার। মধ্যযুগের কাব্যচর্চা থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিচর্চাও ছিল তার ইতিহাস-গবেষণার বিষয়বস্তু।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক পারভীন হাসান বলেন, এ বি এম হবিবুল্লাহ ও মমতাজুর রহমান তরফদার দু’জনই ইতিহাসচর্চায় যে প্রগতিশীল ধারার সৃষ্টি করেছেন, তা অতুলনীয়। তারা দেখিয়েছেন অতীতকে কেবল তথ্যমূলকভাবে উপস্থাপন করাই ইতিহাস নয়, বরং বর্তমানের সঙ্গে অতীতের ঘটনার প্রাসঙ্গিকতা সৃষ্টি করাই একজন ঐতিহাসিকের দায়িত্ব। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, কান্তা নন্দী, মো. নূরুল ইসলাম, নবনীতা রায় বর্মণ, সঞ্জয় কুমার দাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বাবু জামান (তবলা), মো. মামুনুর রশিদ (বাঁশি), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কি-বোর্ড)।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থমেলার নবম দিন। এদিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এরমধ্যে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। এছাড়া অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। উদ্বোধন করবেন চিত্রশিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন।
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘রশীদ উদ্দিন ॥ উকিল মুন্সী ॥ বারী সিদ্দিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুমনকুমার দাশ। আলোচনায় অংশ নেবেন কামালউদ্দিন কবির এবং সাইমন জাকারিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নূরুল হক। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৮
এইচএমএস/এইচএ/
** বইমেলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ