বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মেলা প্রাঙ্গণে এসে ঘুরে ঘুরে বইগুলো কিনেছেন। কিন্তু বিপত্তিটা হয় মনিরুল যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান তখন।
এই যুবককে দেখা যায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বইমেলার শিশু চত্বরের পূর্বপাশে এক টয়লেট থেকে আরেক টয়লেটে বদনা (পানির পাত্র) হাতে ছোটাছুটি করতে। কিন্তু কোথাও পানি নেই। শেষ পর্যন্ত সমস্ত লজ্জা ভুলে বদনা হাতে টয়লেটের উত্তর পাশে নামাজ ঘরের অজুর স্থানে যান পানির খোঁজে। সেখানেও একি অবস্থা। এতোবড় আয়োজন আর সেখানে এই অবস্থা! বিস্ময় প্রকাশ করেন মনিরুল। মনিরুল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সব থেকে বড় বইমেলা, এখানে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা আসেন। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। আবার যাও আছে সেখানেও পানি নেই।
এদিন মেলা প্রাঙ্গণে কেবল মনিরুলই নয় এমন প্রায় অর্ধশত দর্শনার্থীকে দেখা গেছে পানির জন্য ছোটাছুটি করতে। একইভাবে টয়লেটের সামনে ওয়াসার একটি পানির গাড়ি রাখা হয়েছে। সেখানেও অনেকে পানির খোঁজে যায়, কিন্তু কোথাও পানি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
একই সমস্যায় পড়তে হয় নামাজ ঘরে নামাজ পড়তে আসা দর্শনার্থীদের। অজুখানায় পানি না থাকায় তারা অজু করতে না পারায় নামাজ না পড়েই ফিরে যায়।
রাজধানীর লালবাগ মাদ্রাসার ছাত্র নাইম আফ্ফান বই কেনাকাটা শেষ করে এসেছেন যোহরের নামাজ আদায় করতে। কিন্তু পানি না থাকায় অজু করতে পারেননি তিনি। এভাবে সেখানে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কর্তৃপক্ষকে পানির ব্যবস্থা করতে দেখা যায়নি। এছাড়া যোহের পর থেকে টয়লেট এবং অযুখানায় পানি ছিলনা বলেও জানা গেছে।
মাদ্রাসা ছাত্র নাইম বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় বই কিনে নামজে আসতে দেরি হয়েছে। কিন্তু এসে দেখি পানি নেই। এখন নামাজ না পড়েই ফিরে যাচ্ছি।
এদিকে প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসলেও সেখানে মাত্র ছয়টি প্রসাবখানা এবং ছয়টি টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে পুরুষের জন্য। ফলে সেখানে সব সময় মানুষের সিরিয়াল লেগেই থাকে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক দর্শনার্থীরা।
বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আমিনুল বাংলানিউজকে বলেন, কর্তৃপক্ষ অনেকটা দায়সারাভাবেই টয়লেট স্থাপন করেছেন। এতোগুলো মানুষের জন্য মাত্র ছয়টি টয়লেট। তাতে আবার পানি থাকে না। অজুর পানি থাকে না। কিন্তু ফোয়ারার পানিতো শেষ হয় না। যেখানে দরকার সেখানে পানি নাই, অন্য সবখানে আছে।
বিষয়টি নিয়ে মেলার নামাজ ঘরের ইমাম হাফেজ আব্দুল হালিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি সকাল ৮ টায় এসে দেখি পানি নেই। পরে কর্তৃপক্ষকে জানালে যোহরের সময় পানি ছিলো। এরপর আবার পানি শেষ হয়ে গেছে। এদিকে বইমেলা প্রাঙ্গণে ধুমপান নিষিদ্ধ হওয়ায় নামাজ ঘর এবং টয়লেটের সামনের ফাঁকা জায়গাকে ধুমপানের জন্য বেছে নিয়েছেন ধুমপায়ীরা। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে নামাজি এবং অধুমপায়ী ব্যক্তিদের। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শানার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ধুমপানের জন্য মানুষ টয়লেট আর নামাজ ঘরের পাশে আসছে। এটা কোনো ধরনের বিবেক? কিন্তু ধুমপায়ীদের কথা বাদ দিলাম, বিষয়টি বন্ধে ব্যবস্থা নেবে কে? কাউকে তো দেখলাম না। পুলিশের কিছু সদস্য এদিক সেদিক দাঁড়িয়ে আছে আবার কেউ কেউ দেখলাম নিরবস্থানে বসে দাবা খেলছেন।
সার্বিক বিষয় নিয়ে অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ ধুমপান মুক্ত, এখানে কেউ ধুমপান করে এটা আমার জানা ছিলো না। তাদেরকে বুঝিয়ে হোক আর আইনি প্রক্রিয়ায় হোক ধুমপান বন্ধ করা হবে।
পানির বিষয়ে তিনি বলেন, আজকে মানুষের চাপ অনেক বেশি। তারপরেও কিছু মানুষ কষ্ট পেয়েছেন এজন্য আমি দুঃখিত। আজকে মেলায় চারবার ব্যবহারের পানি দেওয়ার কথা তার মধ্যে তিনবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পানি ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৩ হাজার টন হওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। আর টয়লেট ৬টি সেটা ঠিক নয়। মুক্তমঞ্চের পাশে আরো অনেক গুলো টয়লেট রয়েছে। তবে এমন সমস্যা আর যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করছি। এসময় তিনি মোবাইল ফোনে মুক্তমঞ্চের পাশের টয়লেটের অবস্থান সম্পর্কে ঘোষণা দিতে তথ্য কেন্দ্রে নির্দেশ দেন এবং পানির সমস্যা সমাধানের জন্য ইঞ্জিনিয়ারকে নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি, ২১, ২০১৮
এসআইজে/এএটি