শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এ প্রসঙ্গে কথা হয় নন্দিত শিশু সাহিত্যিক সৈয়দা আনোয়ারা হকের সঙ্গে।
তার মতে, যেকোনো সাহিত্য একটি বাচ্চাকে গড়ে তুলবে।
সৈয়দা আনোয়ারা হক বলেন, আমাদের বাচ্চারা এখন ক্লাসিক বই খুব কম পড়ে। ক্লাসিক বই তো সবসময় লেখা হয় না। যুগে যুগে ক্লাসিক বই একটা বা দুটো লেখা হয়। আমি মনে করি বাচ্চাদের জন্য উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আমাদের বাচ্চাদের ভালোমানের বই কিনে দিতে হবে। যা ইচ্ছে তাই বা সুন্দর রঙিন মলাট দেখে কিনে দিলাম, ভেতরে দেখা গেলো কিছুই নেই, একটি শিশুর শিক্ষণীয় কিছুই নেই, তাহলে তো হবে না। আমাদের অভিভাবকদেরও তাদের হাতে বই তুলে দেবার ক্ষেত্রে অনেক সচেতন থাকতে হবে।
বাচ্চাদের বই কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে সৈয়দা আনোয়ারা হক বলেন, এমন নয় যে, বইটি উপদেশমূলক হবে। বইয়ে একটি গল্পের মাধ্যমে শিশুকে তার পরিবেশ, পরিবার, সমাজ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এমন ভাবে যেন সে টেরও না পায় সে সচেতন হচ্ছে। আর এখানেই লেখকের মুন্সিয়ানা।
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে এবারের বইমেলার প্রথম সাত দিনে শিশুসাহিত্যের বই প্রকাশ পেয়েছে মোট ৩০টি। তবে প্রকাশকদের হিসেব অনুযায়ী এ সংখ্যা আরো বেশি এবং তা আরো বাড়বে। আর তুলনামূলকভাবে এবারে শিশুসাহিত্যের বই বিক্রিও হবে বেশি বলে মনে করছেন প্রকাশকরা। তবে শিশুদের মনের মতো বই করার পাশাপাশি তারা নান্দনিকতা এবং মানের বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলানিউজকে।
আদিগন্ত প্রকাশনীর প্রকাশক মোস্তাক রায়হান বলেন, শিশুদের বইয়ের ক্ষেত্রে যেকোনো একটি বিষয় নয়, আমাদের সকল বিষয়েই গুরুত্ব দিতে হয়। বিশেষ করে বানানেন ক্ষেত্রে। এরপর যে বিষয়টি থাকে, তা হলো সহজ ভাষায় বই করা।
মানসম্পন্ন বই এবং রংচঙে বইয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা আসলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে করা। বাচ্চারা কি চাইছে, কেমন চাইছে, কতটা রং চাইছে, সবগুলো মিলিয়ে এর সাথে আরো ভালোকিছু দিয়ে একটি বই করার বিষয়টিই আমাদের মাথায় রাখতে হয়। শুধু রং দিলে তো হবে না, রঙের সাথে ভালোকিছুও তাদের দিতে হবে। আর সেক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের এবং অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে আরো বেশি।
পাতাবাহার প্রকাশনীর প্রকাশক মোস্তফা মান্না বলেন, সবাই জ্ঞানের বই করে, আমরা করি আনন্দের জন্য। একটু হলেও শিশু যেন পড়ে আনন্দ পায়, ছবি দেখে আনন্দ পায়। থাকে কিছু বিজ্ঞানসম্মত দিকও। ওর বয়স অনুযায়ী ও যেন বইটা ধরতে পারে, নাড়াচাড়া করতে পারে, আকার, আয়তন, ওজন—সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়। যারা শিক্ষিত, নতুন যারা মা-বাবা হয়েছেন, তারা এই বইগুলো নিয়ে খুব আগ্রহী।
তিনি বলেন, আমরা চাই তিন বছরের একটি শিশু অন্তত ৫০টি বই পড়ে ফেলুক। আর বড় কথা যেটা সেটা হলো—সবসবময় যে গল্প বলতে হবে তা নয়, কিন্তু গল্পের মতো করে বলতে হবে। বড় লেখক হলেই শিশুদের জন্য লেখা সম্ভব এমনটা নয়, তার জন্য প্রয়োজন গবেষণা।
এদিকে মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেদের সন্তানদের পছন্দ অনুযায়ীই বই কিনে দিচ্ছেন। তবে অনেকেই আছেন, যারা সন্তানদের পছন্দকে প্রাধান্য দিলেও তার জন্য রাখছেন নিজেদের পছন্দও।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভিকারুননেছা নূন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আদিবা খাতুনের বইগুলো কেনা হয়েছে তার পছন্দতেই। এ নিয়ে তার মা শাম্মি আক্তার বলেন, বাচ্চাদের বইগুলো তো মোটামুটি ভালোই দেখলাম। বাচ্চারা বিজ্ঞানভিত্তিক বা কমিক্স টাইপের মজার হাসির কিছু বই পছন্দ করলো, ওগুলোই কিনে দেওয়া হয়েছে। আশা করি সামনে তো আরো দিন আছে, সেখানে আরো প্রচুর ভালো বই পাবো আমরা। আর বাচ্চাদের এই মেলাতে আনতে পেরে ভালো লাগছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. তানভীর ইসলাম বলেন, বাচ্চার বয়সটা যেমন তাতে আসলে সায়েন্স ফিকশন বইগুলোই ওদের জন্য বেশি মানানসই। সেরকমই কিনেছি। আর বাচ্চারা তো একটু ভূতের গল্প বেশি পছন্দ করে, তাই কিনেছি তেমনটাও। আর ওদের জন্য আমার পছন্দে একটা কিশোর ক্লাসিক বই কিনেছি, যেটা আসলে আমরা ছোটবেলায় পড়েছিলাম, যুগ-যুগান্ত ধরে চলে আসছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে ওদের পছন্দকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
নতুন বই সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বই নেড়েচেড়ে যা দেখলাম তাতে আমার মনে হয় গতবারের তুলনায় এবার ভালো বই আসছে। আশা রাখছি আরো অনেক ভালো বই পাবো শিশুদের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৯
এইচএমএস/এমজেএফ