ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

পাঠকের জন্য ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে লেখকের গল্প, লেখার গল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯
পাঠকের জন্য ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে লেখকের গল্প, লেখার গল্প ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে আনিসুল হক-ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: আমি ছোটবেলা থেকেই লিখতাম। আমরা লিখিনি, এমন তো কেউ নেই। বাংলাদেশের ছেলেরা ফুটবল খেলেনি এবং ছেলেমেয়েরা কবিতা লিখেনি, এমনটা হওয়া অসম্ভব। তো আমি যখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে শুরু করেছি, তখন আমায় খুব কবিতার নেশায় পেয়ে বসলো। সেটা নিশ্চয় নারী চিত্ত জয়ের আকাঙ্খায়।

বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজের লেখালেখির শুরুর কথা এভাবেই বলছিলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।

তিনি বলেন, আমাদের সময়তো আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতো মোবাইল ফোন ছিল না।

আর আমি যখন কারমাইকেল কলেজে পড়ি, তখন আমরা ১২০ জন ছেলে পড়তাম, পাঁচটি মেয়ে পড়তো। আর আমি যেহেতু জেলা স্কুলে ভালো ছাত্র ছিলাম, কারমাইকেল কলেজের স্যাররা ষড়যন্ত্র করে আমকে সেই সেকশনে রেখেছিলেন, যে সেকশনে কোনো মেয়ে নেই। ফলে রবীন্দ্রনাথের মতো আমরাও বড় হয়েছিলাম নারীবর্জিত পৃথিবীতে। বুয়েটে এসেও আমাদের সেকশনে সাতটা ছেলে, পাঁচটা মেয়ে; আরেকটি সেকশনে কোনো মেয়েই নেই। এখন নাকি বুয়েটে মেয়ের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে।

আনিসুল হক হেসে বলেন, আমরা কিভাবে মেয়েদের কাছে পৌঁছাবো, দেখলে তো ভালো লাগে! প্রকাশ তো করতে হবে। তখন আমি চিন্তা করে দেখলাম, আমি যেহেতু গান পারি না, তাই প্রকাশের একমাত্র বৈধ উপায় হচ্ছে কবিতা। তাই আমি কবিতা লিখতে শুরু করলাম খোলা চিঠি সুন্দরীর কাছে।

এসময় তিনি পাঠ করেন- ‘তুই কি আমার দুঃখ হবি?/ এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল/ রুখো চুলে পথের ধুলো/ চোখের নিচে কালো ছায়া। / সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি। / তুই কি আমার দুঃখ হবি?’

এবার গ্রন্থমেলার নতুন এই সংযোজনে প্রতিদিন বিকেলে পাঁচজন লেখক মুখোমুখি হন পাঠকদের। কথা বলেন নিজের লেখার গল্প এবং পাঠকদের আগ্রহ নিয়ে। পাঠকরাও বেশ উচ্ছাসভরে শোনেন তাদের কথা। সাধুবাদ জানান গ্রন্থমেলার নতুন এই সংযোজনের।

`লেখক বলছি’ মঞ্চ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির সহযোহী ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও এই মঞ্চের সমন্বয়ক খালিদ মারুফ বলেন, ধারণটা আগেই ছিল, তবে শুরু হয়েছে এবারই। আমাদের নতুন মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী এবং মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ এটা করেছেন। এটার উদ্দেশ্যের জায়গা হলো লেখকদের পাঠকের মুখোমুখি করা।

তিনি বলেন, লেখক এবং পাঠকের মধ্যে যে দূরত্বটা আছে সেটা দূর করার একটা প্রয়াস এই মঞ্চ। আমরা একজন লেখককে তো সবসময় মুখোমুখি পায় না, তার বইটাই পড়ি। এই মঞ্চটা তাই লেখক এবং পাঠকের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ঘটানোর জায়গা। এছাড়া বইয়ের যে বাজার, সেটা নিয়ে অনেক কথা আছে, বইয়ের বাজার পড়ে যাচ্ছে কি না, পাঠক কমে যাচ্ছে কি না, এই বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করা। আমরা মনে করছি যে, এই মঞ্চের ভেতর দিয়ে সেই জায়গাটাই একটি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।

আয়োজনটি পাঠক এবং লেখক, দু’পক্ষই বেশ স্বতস্ফূর্তভাবেই নিচ্ছেন বলেও জানান এই কর্মমর্তা।

আর এ মঞ্চ নিয়ে আনিসুল হক বলেন, উদ্যোগটা খুবই ভালো। আমরা যদি এটাকে একটু যত্ন করতে পারি, তাহলে একটা সময় এটা বইমেলার উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে যাবে। বাংলা একাডেমির মঞ্চে আমরা সিরিয়াস আলোচনা করি, কিন্তু লেখকরা যদি সরাসরি পাঠকের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সেই অনুষ্ঠানটা ওই অনুষ্ঠানের থেকে একটু বেশি প্রাণবন্ত হবে। ফলে আজ যেটা ছোট্ট আঙ্গিকে, সেটা আস্তে আস্তে বইমেলার জন্য বড় উল্লেখযোগ্য একটা অংশ হবে বলে আশা করছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৯
এইচএমএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।