ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

সফলতায় হিংসে ফাল্গুনী বৃষ্টির

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
সফলতায় হিংসে ফাল্গুনী বৃষ্টির বৃষ্টিতে কিছুটা ম্লান হয়েছে বইমেলা

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: বসন্ত, ভালোবাসার পর টানা দু’দিন সরকারি ছুটি। সবকিছু মিলিয়ে চারদিন বেশ খোশ মেজাজেই ছিলেন প্রকাশকরা। আশাতীত বিকিকিনিতে সফলতার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলো গ্রন্থমেলা। তবে সে সফলতায় একটু হিংসেই দেখিয়েছে ফাল্গুনের বৃষ্টি।

রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজেছে বিভিন্ন প্রকাশনীর হাজারো বই। দিনব্যাপী সেসব ভেজা বই শুকিয়ে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টারও কমতি ছিল না এদিনের মেলায়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায় বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। এই প্রকাশনীতে কর্মরত এ কে এম কামরুজ্জামান জানান তাদের প্রকাশনা সংস্থার প্রায় তিন হাজারের বেশি বই বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। এতে লোকসান হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকার।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বই ভিজেছে অন্যপ্রকাশের। এই প্রকাশনীর পরিচালক সিরাজুল কবির চৌধুরী কমল জানান, তাদের প্যাভিলিয়নের দুই হাজারের বেশি বই ভিজেছে। আর প্রায় সাত থেকে আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়াও বৃষ্টিতে গ্রন্থমেলার প্রায় অর্ধশত প্যাভিলিয়ন-স্টল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যার্ডন পাবলিকেশন্স, কথাপ্রকাশ, শিকড়, ত্রয়ী প্রকাশন, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, বাবুই, একুশে, আদিত্য অনীক, আদর্শ, কমল, শ্রাবণ, বাসিয়া প্রকাশনী, নালন্দাসহ আরো বেশ কিছু প্রকাশনী।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্টলগুলোর ওপরে টিনের ছাউনি থাকলেও কোথাও কোথাও তা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে গেছে। যার কারণে পাশ থেকে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ওপর থেকে ছাউনি ফাটল ধরে পানি পড়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এছাড়াও দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে কোথাও কোথাও স্টলের কাঠামো নষ্ট হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলা একাডেমি অংশের স্টলগুলোতে ছিল একই চিত্র। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বরে প্রচুর পরিমাণ পানি জমায় সেচ দিলেও কাদার ভোগান্তি পোহাতে হয় দর্শনার্থীদের।

সন্ধ্যা পর্যন্ত স্টলের সামনে বই মেলে তা শুকিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন বাবুই প্রকাশনীর প্রকাশক মোর্শেদ আলম হৃদয়। কথা হলে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ১৯-২০ তারিখের দিকে বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি হওয়ায় কিছুই গোছাতে পারিনি। প্রায় ৫০ হাজার টাকার বই নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ভেজা বই পাঠক কিনতে আগ্রহী হননা। স্টলের ওপরে টিন এবং ত্রিপল থাকলেও এগুলোর মাঝে ফাঁকা ছিল। সেই জায়গা দিয়েই পানি ঢুকে এত ক্ষতি হয়েছে।

উৎস প্রকাশনের প্রকাশক মোস্তফা সেলিম জানান, তার প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া স্টল অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো যাচ্ছে না।

পিয়াল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের সৈয়দা নাজমুন নাহার বলেন, বইয়ের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্টলের সৌন্দর্য। বৃষ্টির কারণে পাঠকের সমাবেশ কম থাকায় বিক্রিবাট্টাও কম।

সার্বিক বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ বলেন, আমরা যতটা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করেছিলাম, তার তুলনায় ক্ষতি কম হয়েছে। সকাল ও বিকেল দুই দফায় পরিদর্শন করেছি আমরা। কয়েকটি প্রকাশনীর ক্ষতি বেশি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপরে কারো হাত নেই। বিমা করা আছে। সেই আওতায় নানা দিক থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের।

একই সুরে বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকদের সামগ্রিক প্রস্তুতির ফলে এবারের বৃষ্টিতে বইমেলায় অন্যবারের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে বলে জানান বাংলা একাডেমির পরিচালক ও গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ফাল্গুনের প্রথম ভাগে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস থাকায় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই সতর্ক করে দিয়েছিল প্রকাশকদের। এছাড়া মেলায় অংশগ্রহণ করা সকল প্রকাশকদেরই বলা হয়েছে ‘ঝড়-বৃষ্টি ও অগ্নি-বীমা’ করতে এবং তা সবাই করেছে।  

বৃষ্টির পর দু’দফায় মেলা প্রাঙ্গণে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য ফায়ার সার্ভিস কাজ করেছে। আর সবমিলিয়ে ৯০ শতাংশ স্টল মালিক সতর্ক ছিলেন। ফলে তাদের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এছাড়া ছাউনি হিসেবে টিনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, সবগুলো টিন নতুন দেওয়া এবং লটারি হওয়ার দিন (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্তও প্রকাশকরা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি বলেও জানান তিনি।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এমন উন্মুক্ত একটি স্থানে, অস্থায়ী একটি কাঠামোতে ঝড়-বৃষ্টিকে শাসনে রাখাটা কঠিন। তারপরও আমাদের চেষ্টা থাকবে। আর আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী আগামী ২৩, ২৪ ও ২৫ তারিখেও বৃষ্টির আশংকা আছে। এটি মাথায় রেখে আমাদের পাশাপাশি প্রকাশকরাও যদি ব্যবস্থা নেন, তবে তা সবার জন্যই ভালো হবে।

এদিকে বিকেলে বইপ্রেমীদের আগমন ও আশাতীত বিকিকিনিতে শঙ্কাটা মোটামুটি কেটে গেছে বলে মনে করছেন অনেক প্রকাশনী। এ ব্যাপারে অন্বেষা’র ফাতিমা মুনমুন বলেন, সকালের বৃষ্টির পর বিকেলে লোক সমাগম খুব কম ঘটেছে। তবে লোক সমাগম কম থাকলেও বিকিকিনি ছিলো আশাব্যঞ্জক। সত্যিকারের পাঠকরা মেলায় এসেছেন এবং বই কিনেছেন। বইপ্রেমীদের কাছে বৃষ্টি কোনো বাধা হতে পারে না এটা প্রমাণ করেছেন বইপ্রেমী পাঠকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।