ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

আদিবাসীদের বই কম থাকলেও আগ্রহ আছে সাধারণ পাঠকদের

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
আদিবাসীদের বই কম থাকলেও আগ্রহ আছে সাধারণ পাঠকদের

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: দেশের আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ওপর সবসময়ই একটি আলাদা আগ্রহ কাজ করে সাধারণ মানুষের। আর সেই আগ্রহ পূরণের অন্যতম জায়গা হচ্ছে বই। আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নিয়ে লেখা বইয়ের প্রতি বাঙালিদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে।

বই মেলায় আদিবাসীদের নিয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। তবে সে তুলনায় আদিবাসী লেখক সাহিত্যিক উঠে আসছে না।

সরকার এরই মধ্যে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে সরবরাহের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়ে এসব সম্প্রদায়ের মানুষরা বলছেন, সাহিত্য জগতের মূল ধারায় উঠে আসতে রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রত্যাশা করেন তারা।

একইসঙ্গে ফেব্রুয়ারির বই মেলায় নিজেদের সাহিত্য তুলে ধরতে বাংলা একাডেমির সুদৃষ্টিও চান বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব সম্প্রদায়ের লেখক ও প্রকাশকরা।

এবারের মেলায় নৃগোষ্ঠীদের ওপর লেখা বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলছে আইয়ুব হোসেনের ‘মুক্তিযুদ্ধে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’, মুস্তফা মজিদের ‘আদিবাসী সংস্কৃতি’, মাযহারুল ইসলাম তরুর ‘আদিবাসী লোকজীবন’। এর বাইরে আদিবাসী লেখকদের জনপ্রিয় বইয়ের মধ্যে রয়েছে জেমস জর্নেশ চিরানের ‘প্রান্তিক সমাজের কথা’, মিঠুন রাকসামের ‘মান্দি জাতির পানীয় ও খাদ্য বৈচিত্র্য’, এল বীরমঙ্গল সিংহ এর ‘মনিপুরি লোককাহিনি’, রূপসী চাকমার ‘নিঃশেষে আবেগ’, এ কে শেরামের ‘টোকাই কাহিনী ও অন্যান্য গল্প’, নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার ‘দূরদেশে’ ইত্যাদি। .মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আদিবাসী এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের বিষয়ে পড়াশোনা করতে বাঙালিদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ। অনেকের ভাষায়, বিদেশিদের বিষয়ে পড়াশোনা করলেও নিজেদের দেশের ভিন্ন জাতির মানুষের সম্পর্কে জানাশুনা কমই আছে এ দেশের মানুষের মধ্যে। ভালো মানের বই না থাকাকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন তারা।

তবে পরিস্থিতি ও প্রকাশকরা বলছেন অন্য কথা। এবারের মেলায় প্রায় আট শতাধিক স্টল থাকলেও দেশের আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাত্র একটি প্রকাশনা ও একটি লিটল ম্যাগ মেলায় এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মানুষ এসব সম্প্রদয়ের। সেই অর্থে তাদের কমপক্ষে আটটি স্টল থাকা উচিত ছিল মেলায়।

মেলায় আসা পাঠক আলম হোসেন বলেন, আমরা বিদেশি সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে কতই না মাতামাতি করি। কিন্তু নিজেদের দেশেও যে ভিন্ন ভাষার মানুষ আছে, তাদের নিজস্ব কৃষ্টি কালচার আছে সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হই না। আমাদের জন্য বিদেশিদের জানার চেয়ে নিজেদের মানুষকে চেনাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের মধ্যকার সৌহার্দ্যকে বাড়াবে। তবে এ সম্পর্কিত বই অনেক কম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেসআই মারমা বলেন, আমি বাংলা ভাষাকে অনেক ভালোবাসি। পাশাপাশি নিজের ভাষার জন্যও কাজ করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি সরকারের সহায়তা পেলে আমাদের ভাষাতেও অনেক ভালো মানের সাহিত্য গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এজন্য আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আমরাও কাজ করতে চাই।

কথা হয় এবারের বই মেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের একমাত্র প্রকাশনা তিউড়ি’র প্রকাশক ও লেখক মাইবর সাধনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করবো সাহিত্য, সংস্কৃতির অন্যান্য শাখায়ও ভিন্ন ভাষার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে রাজধানীসহ সারা দেশে উঠে আসতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সাহায্য করবে। একইসঙ্গে বাংলা একাডেমিও পালন করতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তারা যদি মেলার প্রবেশদ্বারে আদিবাসী বিষয়ক স্টলটি করার ব্যাপারে উৎসাহী হয়, এ ব্যাপারগুলোতে পাঠক আরও বেশি করে জানতে পারবে।

আর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আদিবাসীদের বই নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট কাজ করছে। সঙ্গে যদি বিশেষ বইয়ের প্রয়োজন হয়, তখন বাংলা একাডেমিতে বললে বাংলা একাডেমি তা প্রণয়ন করবে।

ম্রো রুপকথা:
বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে ম্রো ভাষার প্রথম বই ‘ম্রো রুপকথা’। লেখক ইয়াংঙান ম্রো এর এই বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ম্রো ভাষায় প্রকাশিত হলো বই। অমর একুশে গ্রন্থমেলার একমাত্র বিক্রেতাহীন প্রকাশনী বিদ্যানন্দতে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।

বইটি ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বান্দরবানের ম্রো পাড়ায় এরই মধ্যে বইটি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। বইটির ভেতরে সূচি থেকে শুরু করে সবকিছুই ম্রো ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায় লেখা রয়েছে। ফলে পাঠকরা অর্থও ধরতে পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯
এইচএমএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।