প্রফুল্ল চিত্তেই ছিলেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। কিন্তু হঠাৎ করেই বিকেল সাড়ে ৪টার হঠাৎ বৃষ্টি ভিন্নরূপ এনে দেয় পরিচিত এই মেলার।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মেলার দ্বার খোলার ঘণ্টাখানেক পরেই বৃষ্টি এসে হানা দেয় মেলার মাঠে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ধীর গতিতে শুরু হওয়া বৃষ্টি ক্রমেই বাড়তে থাকে।
এ সময় মেলার দর্শনার্থীরা যেমন এদিক-ওদিক ছুটেছেন নিজেদের একটু শুকনো রাখতে, অনেকেই বেরিয়ে গেছেন মেলা প্রাঙ্গণ থেকে। ফলে বৃষ্টি শুরুর অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই হাজার প্রাণের উচ্ছ্বাসে জমে ওঠা মেলার মাঠ প্রায় পুরোটাই জনশূন্য হয়ে যায়।
এদিকে বৃষ্টি শুরু হতেই স্টলের বিক্রয়কর্মীরাও গুছিয়ে নেন তাদের সব পসরা। মেলা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মেলার প্রায় অধিকাংশ স্টলই বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় বৃষ্টির পানি নিরোধক কাপড় ও পলিথিন দিয়ে তারা স্টলের বইগুলোকে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আর সেই কাপড় বা পলিথেনের নিচেই আশ্রয় নেন গ্রন্থমেলায় থেকে যাওয়া অল্প কিছু মানুষ।
তবে বৃষ্টি বাদ সাধতে পারেনি এই অল্প শ্রেণীর বইপ্রেমীদের। বৃষ্টির মধ্যেও বইপ্রেমীরা ছাতা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন মেলা প্রাঙ্গণ। ত্রিপলে ঢাকা স্টল-প্যাভিলিয়ন থেকে বইও কিনেছেন। বৃষ্টির মধ্যে প্রায় দুই ঘন্টা অন্যপ্রকাশ, ঐতিহ্য ও ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্যাভিলিয়নে অবস্থান করতে দেখা গেছে পাঠকদের। তবে শেষ পর্যন্ত টানা বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে এদিনের মেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে মেলায় বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে না পারায় মেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মেলা মাঠের বিভিন্ন স্থানে পানি জমেছে। যা নিষ্কাষণ করতে হবে বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে। সেজন্য মেলা নির্ধারিত সময়ের আগে শুরু করা সম্ভব নয়।
এদিকে রাতে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্টলের সামনেই জমে আছে পানি। বন্ধ হয়ে আছে বৈদ্যুতিক সংযোগও। কিছু স্টলের বই ভিজে গেছে বলেও জানিয়েছেন অনেকে। আর শেষ সময়ের আগে এমন দূর্যোগে পড়ায় তা পুষিয়ে নিতে মেলার সময় বাড়ানোর কথাও বলেছেন বেশকিছু প্রকাশক।
তবে আগে থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বৃষ্টিতে বই সেভাবে ভেজেনি বা স্টলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে বলে ধারণা বাংলা একাডেমির। আর মেলার মূল বিক্রির সময়ে বৃষ্টির এই বিড়ম্বনায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রকাশকরা।
সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনের কারণে যান চলাচল সীমিত হওয়ায় মেলার সময় বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, মেলার সময়সীমা বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক। ব্যস্ত এই শহরের বাসিন্দারা বইমেলায় আসেন শুক্রবার ও শনিবার। চার শুক্রবারের মধ্যে প্রথমটা গেলো উদ্বোধনে আর শেষ বৃহস্পতিবার যাবে উত্তরের নির্বাচনে। সেই সঙ্গে বুধবারের বৃষ্টিতে মেলা বন্ধ। সব মিলিয়ে মেলার সময় বাড়ানো শুধু যৌক্তিক নয়, মানবিকও।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী (সিইও) মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মেলা বাড়ানোর বিষয়টি কঠিন হলেও বৃহস্পতিবারের মেলা অন্তত সকাল থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বাংলা একাডেমি।
তবে প্রকাশকদের এ দাবি নাকচ করে দিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বাংলানিউজকে বলেন, মেলা বাড়ানোর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। মেলা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, বিদ্যুত, পানি, জনবল কোথা থেকে আসবে! সুতরাং চাইলেও মেলা বাড়ানো সম্ভব না। প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। তবে ক্রেতাদের দিকটি লক্ষ্য করে মেলা নয়টার বদলে ১০টায় বন্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু সেটিও পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯
এইচএমএস/এমএ