শুক্রবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ছুটির দিনে মেলায় ছুটে এসেছেন বইপ্রেমীরা। ব্যক্তিগত, সপরিবারে ও দলবেঁধে এসে অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে গেছেন তারা।
মেলায় আগতরা পছন্দের বই কেনার পাশাপাশি স্টল ও প্যাভিলিয়নে ঘুরে ঘুরে ক্যাটালগও সংগ্রহ করেছেন। একইসঙ্গে শুধু নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেননি তারা, বরং প্রিয় লেখকের পছন্দের বইটি কিনেই বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো বিকিকিনিতে ব্যস্ত সময় কাটালেও অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশকরা বিকিকিনি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাদের মতে স্টল বিন্যাসে ত্রুটি থাকার কারণে একশ্রেণীর প্রকাশকরা ব্যবসা করেই যাচ্ছে আর অন্যশ্রেণীর প্রকাশক অবসর সময় কাটাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে জোনাকী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকার মঞ্জুর হোসেন বলেন, প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের মধ্য দিয়ে বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের মধ্যে একধরণের বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। প্যাভিলিয়নের কারণে স্টলপ্রাপ্ত প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্যাভিলিয়নের চারপাশ খোলা থাকার কারণ পাঠকরা চারপাশ ঘুরেই বই কিনতে পারে।
তবে সামনের দিনগুলোতে এই বিড়ম্বনা কাটিয়ে বিক্রি আরও বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন অনেক প্রকাশক।
শুক্রবার বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগের তথ্য মতে মেলায় নতুন বই এসেছে ৩০৮টি। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সৈয়দ শামসুল হকের ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’ এবং এর অনুবাদ নিয়ে আলোচনা।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। আলোচনায় অংশ নেন খায়রুল আলম সবুজ এবং আনিসুল হক। অনুবাদকের বক্তব্য দেন সৈয়দ শামসুল হকের মূল গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা-এর অনুবাদ-গ্রন্থের প্রণেতা ড. ফকরুল আলম। সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির হাজার বছরের কোনো এক পুণ্য-বলেই বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা জন্ম নিয়েছিলেন বাঙালির ঘরে। হতদরিদ্র, নিপীড়িত এক মানবগোষ্ঠীকে একটি জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছেন বাংলার বীর সন্তান বঙ্গবন্ধু। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জীবনকথা নিয়ে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের রচিত বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা গ্রন্থের মাধ্যমেই শিশু-কিশোররা বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুকে চিনতে শুরু করবে এবং তার মতো আত্মবিসর্জন ও ত্যাগের মহিমায় দেশের প্রয়োজনে নিজেদের নিবেদিত রাখবে।
আলোচনা শেষে কবি কণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি হাসান হাফিজ, গোলাম কিবরিয়া পিনু, নুরুন্নাহার শিরীন, রেজাউদ্দিন স্টালিন। আবৃত্তি করেন মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, আলোক বসু এবং কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্য সংগঠন ‘বুলবুল একাডেমী অব ফাইন আর্টস’ (বাফা)-এর নৃত্যশিল্পীরা। সংগীত পরিবেশন করেন আজগর আলীম, নারায়ণ চন্দ্র শীল, শান্তা সরকার, আল মনসুর।
এর আগে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সময়কে শিশুপ্রহর ঘোষণা করে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। এ প্রহরে বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলায় আসেন ছোট্ট সোনামণিরা। কচিমুখের কলতানে, দুরন্তপনা ও বইকেনার দৃশ্য মেলাজুড়ে অন্যরকম এক ভালোলাগার পরিবেশ সৃষ্টি করে। সিসিমপুরে হালুম, টুকটুকির সঙ্গে দুষ্টুমির পাশাপাশি বাবা-মায়ের কাছ থেকে আবদারকৃত প্রিয় বইটিও কিনে নিতে কার্পণ্য করেনি ক্ষুদে পাঠকরা।
এছাড়া অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা সস্ত্রীক পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার।
শনিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) মেলার দ্বিতীয় শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ প্রহরে থাকবে শিশুদের কোলাহল ও দুরন্তপনা।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২০
এইচএমএস/জেআইএম