সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় দিব্যদ্যুতি সরকার রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’ শীর্ষক বইয়ের আলোচনা অনুষ্ঠান।
প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাশিদ আসকারী।
মূল প্রবন্ধে রাশিদ আসকারী বলেন, গণমানুষের মুক্তি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে পৃথিবীতে যে ক’জন হাতে গোনা মানুষ কায়েমি শোষকদের অধীনে দীর্ঘ কারাভোগ করেছেন বঙ্গবন্ধু তাদের অন্যতম। পাথরের দেওয়াল ও লোহার গরাদ অতিক্রম করে পৃথিবীর মানচিত্রে তিনি একটি স্বাধীন দেশ স্থাপন করেছেন।
‘লেখক দিব্যদ্যুতি সরকার বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন বইয়ে দীর্ঘ কারাজীবনে মানুষ বঙ্গবন্ধু, রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু, লেখক বঙ্গবন্ধুসহ তার আরও অনেক সত্তা আবিষ্কারের প্রয়াস পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কণ্টকাকীর্ণ বৈচিত্র্যময় জীবনের এক দুর্যোগপূর্ণ অধ্যায় তার কারাজীবন। সমকালীন ইতিহাসের আলোয় এ বইয়ের বয়ান ও অন্তর্বয়ান মুজিব জন্মশতবর্ষের এই সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক। ’
আলোচকরা বলেন, বঙ্গবন্ধু তার জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময়ই কারাগারে কাটিয়েছেন। আত্মত্যাগী এই মহান নেতার আপোষহীন সংগ্রামের কারণেই বাঙালি আত্মপরিচয়ের সংকট কাটিয়ে বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। লেখক দিব্যদ্যুতি সরকার তার ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’ গ্রন্থে শেখ মুজিবের দীর্ঘ বৈচিত্র্যময় কারাজীবনের অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করেছেন। তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে এ বই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে লেখক দিব্যদ্যুতি সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর মতো এমন মহান ব্যক্তিত্বকে নিয়ে বই বের করার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তকে ভালোভাবে যাচাই করে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। এখনও তার দীর্ঘ কারাজীবন নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা ও তাত্ত্বিক বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে। সংলাপনির্ভর সাধারণ ভাষায় লিখিত এ বইয়ের উদ্দেশ্য বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন সম্পর্কে নতুন কোনো তথ্য উপস্থাপন করা নয় বরং মানুষের কাছে তার কারাজীবনের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরা।
এ বই প্রসঙ্গে আবুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করতে হলে তার জেল জীবনের প্রেক্ষাপট ও অভিজ্ঞতাও বিবেচনায় আনতে হবে। বারবার কারাবরণ ও আপোষহীন সংগ্রামের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের উত্তরণ ঘটে এবং তিনি গণমানুষের আশা-ভরসার প্রতীকে পরিণত হন। এ নেতার কারাজীবনের পটভূমিতে রচিত দিব্যদ্যুতি সরকারের বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন বইটিতে জাতির পিতার জীবন ও ভাবনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে, যা এই মহান বাঙালির সামগ্রিক মূল্যায়নে ভূমিকা রাখবে।
এ অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় মূল মঞ্চে স্বকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন- কবি মতিন বৈরাগী, ওবায়েদ আকাশ, আলতাফ শাহনেওয়াজ ও স্নিগ্ধা বাউল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন- আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম, সুপ্রভা সেবতী ও জি এম মোর্শেদ। এছাড়া লায়লা হাসানের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন- নটরাজ নৃত্যগোষ্ঠীর শিল্পীরা। আরও ছিল সেলিম রেজার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন সংস্কৃতি মঞ্চের পরিবেশনা।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মোহাম্মদ আলী খান রচিত ‘ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক বই নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আতাউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেবেন- শ্যামসুন্দর সিকদার ও ইকরাম আহমেদ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন ফজলে কবির। এরপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০
ডিএন/এইচজে