নিউটনের ছেলেবেলা কবিতার বইটি মেলায় এনেছে প্রকাশনা সংস্থা- আগামী। এর প্রচ্ছদ করেছেন লেখক নিজে।
কবিতার এ বইয়ের উপজীব্য জানতে চাইলে সেলিম রেজা নিউটন বলেন, শুকিয়ে সোনালি হওয়া কাঁচা বাঁশের সাথে ঘাসফড়িঙের প্রেমের ভেতর আঁকা থাকে কাল-পাত্র-দূরত্বের জ্যামিতি। পিক্সেল-বুনন তার ছোপানো থাকে কর্পোরেট মার্কেটের প্লাস্টিক-রঙে— যথা যুগের নিয়মে। ইউক্লিড বা ম্যাকলুহান না-হয়েও তা দিব্যি দেখা গেল। বন্ধুদেরও দিব্যদৃষ্টি জুটলো কপালে। সেহেতু পাতাল খুঁড়ে ছেলেবেলা তুলে এনে কাটাকাটি ঘাঁটাঘাঁটি করে, সব গুছিয়ে-টুছিয়ে, এখন পেছন ফিরে দেখি: যে যাত্রা শুরু হয়েছিল অনাথ ইনোসেন্সের ক্রন্দন থেকে, দশ বছরের মাথায় তার মুখ ঘুরতে শুরু করেছে অন্তহীন এক্সোডাসের দিকে। এভরিথিং হ্যাজ ইটস টাইম। সব-কিছুরই নিজের একটা সময় থাকে। থাকে রোদনের কাল, আর দুঃখকে উপলব্ধির দিন। ‘ফলত যে বই আমার কবিতার প্রথম বই, যা ছাপা হতে পারতো হয়তো ২০০১ সালে, তা বেরুচ্ছে এখন বছর কুড়ি পরে, তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ হিসেবে। লেখাগুলো সবই আমার কবিতা লেখালেখি শুরুর প্রথম দশ বছরের: ১৯৯২–২০০১ পর্বের। অর্থাৎ এ বইয়ের প্রথম রচনাটা সাতাশ বছর আগের। ’
অন্যদিকে নিউটনের অনুবাদে নোম চমস্কির ‘গভর্নমেন্ট ইন দ্য ফিউচার’ গ্রন্থের ভাষান্তর ‘ভবিষ্যতের সরকার’ বইটি মেলায় এনেছে প্রকাশনা সংস্থা- পেন্ডুলাম পাবলিশার্স। এ বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন- আনজুম শেখ উচ্ছ্বাস। মেলায় পেন্ডুলামের ২৭১ নম্বর স্টলে মিলছে এ বই।
‘ভবিষ্যতের সরকার’ বইটির বক্তব্য জানতে চাইলে সেইম রেজা নিউটন বলেন, প্রায়ই প্রশ্ন তোলা হয়: মানুষ কি আসলেই স্বাধীনতা চায়? স্বাধীনতার সাথে যে দায়দায়িত্ব এসে পড়ে, সেটা কি তারা চায়? নাকি তারা দয়ালু একজন প্রভুর শাসন চায়? এরই সাথে তাল মিলিয়ে, ক্ষমতার বিদ্যমান বিন্যাসের সমর্থকেরা আসলে সুখী দাস নামক ধারণাটারই কোনো-না-কোনো ভাষ্য নিয়ে পড়ে থাকেন। দুইশ' বছর আগে চতুর রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে নালিশ তুলেছিলেন রুশো। তার মতে, তারা এই সত্য আড়াল করার জন্য ফন্দি খোঁজেন যে, মানুষের মৌলিক ও নির্ধারক ধর্ম হচ্ছে তার স্বাধীনতা: 'দাসত্বের প্রতি স্বাভাবিক ঝোঁককে তারা মানুষের ধর্ম বলে চালাতে চান... তারা ভেবে দেখেন না যে, স্বাধীনতার প্রতি এবং নির্মলতা ও সৎকর্মের প্রতি স্বাভাবিক ঝোঁকও মানুষের ধর্ম। ততক্ষণই এসবের মূল্য বোঝা যায়, যতক্ষণ মানুষ তা উপভোগ করে। আর যখন সে এগুলোকে হারিয়ে ফেলে, তখনই এসবের প্রতি রুচি নষ্ট হয়ে যায় তার। ' (Rousseau, 1964: 164)
‘‘এই মতধারার প্রমাণ হিসেবে তিনি সেইসব বিস্ময়কর কাজকর্মের কথা উল্লেখ করেন, নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচার জন্য সমস্ত স্বাধীন মানুষই যা করে থাকে। তিনি বলেন: 'এ কথা সত্য যে, স্বাধীন মানুষের জীবন যাঁরা পরিত্যাগ করেছেন, তারা তাদের শেকলের মধ্যে উপভোগ করেন শান্তি এবং বিশ্রাম। আর সে ব্যাপারে অবিরাম গর্ব বোধ করা ভিন্ন তারা আর কিছুই করেন না ...। কিন্তু আমি অন্যদেরকেও দেখি। দেখি তারা তাদের সুখ, বিশ্রাম, সম্পদ, ক্ষমতা এবং খোদ জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে দিচ্ছেন [স্বাধীনতা নামক] এই একটা মাত্র শুভবস্তুকে বাঁচানোর জন্য। (এ বস্তু অবশ্য ঐসব লোকের কাছে অতি-ঘৃণিত, যাঁরা সেটা হারিয়ে ফেলেছেন)। ... আমি দেখি বিপুল সংখ্যক সম্পূর্ণ নগ্ন বর্বর মানুষ তাচ্ছিল্য করছেন ইউরোপীয় ইন্দ্রিয়পরায়ণতাকে। সহ্য করছেন ক্ষুধা, আগুন, তরবারি এবং মৃত্যু। স্রেফ তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। এসব দেখে আমার মনে হয়, স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তিতর্ক দাসের পক্ষে শোভা পায় না। (Rousseau, 1964: 165) এটা এমন একটা মন্তব্য, সম্ভবত আমরা যার সমকালীন ভাষ্যও দাঁড় করাতে পারি। ' Rousseau, Jean-Jacques (1964). First and Second Discourses. Edited by R. D. Masters. New York: St. Martin’s Press’’
সেলিম রেজা নিউটন ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে নীলফামারির সৈয়দপুরে জন্মগ্র্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা করছেন ১৯৯৪ সাল থেকে। ছাত্র ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। সিপিবি করতেন। আশির দশকে সামরিক-শাসন-বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন এবং বলশেভিক-বামপন্থার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়েছিলেন ছাত্রজীবনেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনাক্যাম্প-স্থাপন ও সেনা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদী মৌন মিছিল সংগঠিত করার ‘অপরাধে’ জরুরি অবস্থা লঙ্ঘনের দায়ে সহকর্মীদের সাথে জেলও খেটেছেন তিনি।
সম্পাদনা করেন মানুষ ও প্রকৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ- মানুষ। সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষায়তনিক জার্নাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড সোসাইটিও (অ্যাডকমসো জার্নাল) সম্পাদনা করতেন। সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম, রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সেলিম রেজা নিউটন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
এইচজে