লেখকের অভিজ্ঞতা আর প্রাঞ্জল ভাষায় যখন কোনো কিছু উপস্থাপিত হয়, তখন সেটি পাঠকের কাছে হয়ে ওঠে হৃদয়গ্রাহী। আর ভ্রমণবিষয়ক বই এখন শুধু অভিজ্ঞতা বা ঘটনার বর্ণনা নয়, হয়ে উঠেছে ভ্রমণসাহিত্যও।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রচুর পাঠক রয়েছেন, যারা উপন্যাস বা কবিতা পছন্দ করেন না, কিন্তু ভ্রমণের বই পেলেই কাছে টেনে নেন। তাইতো মেলায় প্রতিবছর প্রচুর ভ্রমণকাহিনীর বই প্রকাশ হয়। সেগুলোর কাটতিও বেশ ভালো। এবারও মেলায় বেশকিছু মানসম্মত ভ্রমণ কাহিনীর বই এসেছে।
এ বছর এখন পর্যন্ত মেলায় প্রকাশ হয়েছে ৭২টি ভ্রমণ কাহিনীর বই। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার দেখা নয়া চীন’ ঐতিহ্য থেকে বুলবুল সারওয়ারের ‘কবিতার মুসাফির’, নালন্দা থেকে সুধাংশু শেখর বিশ্বাসের ‘মস্কোর ঘণ্টা’, সময় প্রকাশন থেকে সঞ্জয় দে’র ‘স্তালিনের বাস্তুভিটা’, বর্ষাদুপুর থেকে এসএম সাজ্জাদ হোসেনের বই ‘ভ্রমণবিলাস’, সূচীপত্র প্রকাশনী থেকে ফেরদৌসী পারভিনের বই ‘গাইরিং থেকে মেঘবাড়ি', উত্তরণ থেকে দেবাশিস সরকারের ‘বিশ্ব ভ্রমণের ফেরিওয়ালা', অধ্যয়ন প্রকাশনী থেকে লেখক শামীর মোন্তাজিদের বই ‘উড়ছে হাইজেনবার্গ’, অন্যধারা প্রকাশনী থেকে হুমায়ূন কবির ঢালীর ‘ব্রিজ টু কানাডা’, নালন্দা থেকে তানিয়া হাসানের ‘ভ্রমণকাহন: তুরস্কের গাঁয়ে গঞ্জে শহরে বন্দরে’, ভূমি প্রকাশ থেকে আফরোজা মামুদের ‘মধ্যবিত্তের বিদেশ ভ্রমণ’, প্রথমা থেকে মহিউদ্দিন আহমদের ‘বাঙালির জাপান আবিষ্কার’ ও অন্যপ্রকাশ থেকে হাসনাত আব্দুল হাইয়ের ‘কলকাতা-রাণাঘাট’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া অনন্যা থেকে উৎপল শুভ্রর ‘ক্যারিবিয় কড়চা’, কাকলী থেকে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ‘দেশের বাইরে দেশ’, অনুপম থেকে কাজী শফিকুল আযমের ‘ভ্রমণ সমগ্র’, সংকর প্রসাদ দে’র ‘কৃষ্ণসময়’, আগামী প্রকাশনী থেকে বেলাল আহমেদের ‘ওয়েস্ট টু ইস্ট কোস্ট’, শরিফুল ইসলামের ‘৬৪ জেলায় কী দেখেছি’, অক্ষর প্রকাশনী থেকে শামসুজ্জামান খানের ‘দূরে-দূরান্তরে’, ইত্যাদি থেকে শেখ নেছারুদ্দিন আহমেদের ‘পৃথিবীর পথে পথে’ ইত্যাদি বইগুলোও পাঠক নন্দিত হয়েছে এবারের বইমেলায়।
একটি আদর্শ ভ্রমণ কাহিনীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে বলতে গিয়ে খ্যাতিমান লেখক বুলবুল সরওয়ার বাংলানিউজকে বলেন, উপন্যাস হচ্ছে জীবনের স্থিরচিত্র। সেই প্রেক্ষাপটে ছোটগল্প হচ্ছে জীবনের একটা মুহূর্ত। সেই বিবেচনায় এই দুয়ের মিশেল পাওয়া যায় ভ্রমণকাহিনীতে। গল্প-উপন্যাসের কাহিনীর মতো এখানেও আসে বিবরণ। যেখানে থাকে পরিবেশ, প্রকৃতি, ইতিহাস, ভূগোলসহ নানা বিষয়। ভ্রমণকাহিনীর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর তির্যক বলার ভঙ্গি। রসবোধের কথাই বলা হবে কিন্তু সেখানে একটা শালীনতার সীমানা থাকবে।
কোন ধরনের ভ্রমণসাহিত্য পাঠককে বেশি টানে জানতে চাইলে আরেক খ্যাতিমান ভ্রমণ কাহিনীর লেখক শাকুর মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, গেলাম, দেখলাম, কী খেলাম- এমন বর্ণনার ভ্রমণকাহিনী পাঠক খুব একটা পছন্দ করে না। ভ্রমণ কাহিনীর লেখককে হতে হবে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণকারী। কোন এলাকার মানুষ কোন ধরনের খাবার পছন্দ করে, সেটা তারা কেন পছন্দ করে, তা জানতে হবে। থাকতে হবে ভূগোল আর ইতিহাসের ব্যাপক জানাশোনাও। সবচেয়ে বড় কথা বর্ণনা এমন হতে হবে, যেন পাঠকও লেখার সঙ্গে একাত্ম হয়ে দৃশ্যগুলো দেখতে পারে, অনুভব করতে পারে।
ভ্রমণকাহিনীর বইয়ের পাঠক ও বাজার নিয়ে বলতে গিয়ে আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, কিছুদিন আগেও আমাদের এখানে ভ্রমণকাহিনীর পাঠক ছিল খুব কম। কিন্তু ভ্রমণসাহিত্য এবং পাঠক দুটোর বিস্মৃতিতেই এখন বেড়েছে এবং ক্রমেই বাড়ছে। এ কারণে উপন্যাস বা গল্পের লেখকদের চেয়ে ভ্রমণসাহিত্যের অনেক লেখক এখন বেশি জনপ্রিয়। আর এসব বইয়ের পাঠক চাহিদাও অনেক বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
এইচএমএস/টিএ