শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টায় শেষ হলো ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে যে যাত্রা শুরু হয়েছিলো, তা শেষ হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর লেজার শো’র মধ্য দিয়ে।
এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে চার হাজার ৯১৯টি। গতবারের তুলনায় যা ২৩৪টি বেশি। তবে এ হিসেব বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়া বইয়ের। এর বাইরে মেলায় হাজারের বেশি নতুন বই এসেছে।
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এ বছর সর্বোচ্চ বই প্রকাশিত হয়েছে কবিতার। যা সংখ্যার হিসেবে এক হাজার ৫৮৫টি। এ ছাড়া এ বছর গল্প ৬৪৪, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, গবেষণা ১১২, ছড়া ১১১, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনী ১৪৯, রচনাবলি ৮, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২, নাটক ৩৪, বিজ্ঞান ৮৩, ভ্রমণ ৮২, ইতিহাস ৯৬, রাজনীতি ১৩, স্বাস্থ্য ৩৬, রম্য ৪০, ধর্মীয় ২০, অনুবাদ ৫৭, অভিধান ১৪, বৈজ্ঞনিক কল্পকাহিনী ৬৭, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ১৪৪ এবং বিবিধ বিষয়ে বই এসেছে ২৬৮টি।
বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘ সময়ের এ মেলার শেষ দিনেও ভিড় ছিলো বইপ্রেমীদের। মেলার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিল বইপ্রেমীদের ভিড়। মেলা শেষের এ ভালোলাগা আর আনন্দের নির্যাস নিতে ভোলেননি আগতরা। কিনে নিয়েছেন বাকির খাতায় জমে থাকা পছন্দের বই। আর অন্য দিনের মতোই শেষ দিনেও দর্শনার্থীরা আড্ডা আর ঘোরাঘুরি করে কাটিয়েছেন সময়। সবমিলিয়েই লেখক-পাঠক-প্রকাশক আর দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিতে মুখর ছিল মেলার দু’প্রাঙ্গনই।
শনিবার বিকেলে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের পাঠকেরা ছুটে আসেন মেলা প্রাঙ্গনে। সন্ধ্যার পর পাঠকের এ ভিড় আরও বাড়তে থাকে।
গ্রন্থমেলার শেষ দিন সন্ধ্যা হতেই নতুন বইয়ের গন্ধে মেতে থাকা অগণিত মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গন। শেষ দিনের মেলায় বিদায়ের সুর স্বত্ত্বেও তালিকা ধরে কেনাকাটা, হাসিঠাট্টা, দল বেঁধে স্টলে গিয়ে বইয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়া, সবই ছিল মেলা চত্বরে। যারাই এসেছেন, বাড়ি ফিরেছেন ব্যাগভর্তি বই নিয়ে।
মেলায় আসা পাঠক হাসনাত নাঈম বলেন, লেখক-পাঠকদের যে মিলনমেলা, তা আজ ভাঙবে। সারাবছরতো আর এভাবে প্রিয় লেখকদের সান্নিধ্য পাওয়া যায় না, তাই শেষ সময়ে আবারো এলাম। শেষ সময়ে কিছু বই কিনেই ফেরার ইচ্ছে আছে।
শেষ সময়ে মেলার বিক্রিও ছিল অনেক ভালো। এ বিষয়ে বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, মেলায় শেষ সন্ধ্যায় পাঠকের সংখ্যা অনেক বেশি। বই বিক্রির পরিমাণও বেড়েছে। যারা আসছেন, প্রায় সবাই ফিরছেন বই কিনে।
ছুটির দিন হওয়ায় শনিবার সকাল থেকেই মেলার দ্বার খুলে যায় সকলের জন্য। সকাল ১১টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ছিল শিশু প্রহর। সকালে শিশু চত্বরে শিশুদের সমাগম প্রথমদিকে কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। এসময় শিশু চত্বর মঞ্চে সিসিমপুরের ইকরি ও হালুমদের বিশেষ পরিবেশনা উপভোগ করে বিভিন্ন বয়সের শিশুরা।
সকালেই মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় শিশু সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, এবার মেলা অন্য বারের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। প্রত্যাশা থাকবে এমন পরিবেশে আবার মেলা আয়োজনের।
বাংলাদেশ সময় ২২০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২০
ডিএন/এইচএমএস/এবি