বইমেলা থেকে: হাটি হাটি পা পা করার মতো একদিন দুই দিন করে এক সপ্তাহ পার করলো অমর একুশে বইমেলা ২০২১।
বুধবার (২৪ মার্চ) বইমেলার সপ্তম দিন মেলা ঘুরে দেখা যায়, করোনাকালের বইমেলা হিসেবে এ কদিনের প্রাপ্তিটা একেবারে মন্দ কিছু নয়।
এছাড়া অনেকখানি গুছিয়ে উঠেছে প্রাণের এ মেলা। গত এক বছরে মানুষ অনেকটা গৃহবন্দি ছিল। আর মধ্যবিত্তের প্রাণের জায়গা আবেগের জায়গায় বইমেলা থাকলেও আয়োজন না হওয়ায় তারা হতাশ ছিল। সেই জায়গায় মার্চের বইমেলা নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে। তাইতো বিকেল হলেই একদল মানুষ বইকে ঘিরে আনন্দে মেতে উঠছেন। প্রাণ খুলে ঘুরছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, বই কিনছেন, লেখকের সান্নিধ্যে নিজেকে শাণিত করছেন।
বিকেলে মেলার প্রথম সপ্তাহ নিয়ে কথা হয় আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনির সঙ্গে। তিনি বলেন, বইমেলা শুধু একটি মেলা নয়, এখন এটি বাঙালির সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক আয়োজন। সেটি যে হচ্ছে এবং তা করোনা পরিস্থিতিতেও এক সাপ্তহ ভালোভাবে পার করলো, এটা অবশ্যয় ভালো বিষয়। তবে আমাদের প্রাপ্তিটা তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন আমরা এটিকে মাসব্যাপী নিয়ে যেতে পারবো।
অন্বেষা প্রকাশনীর স্বতাধিকারী শাহাদাত হোসেন বলেন, করোনাকালে সৃজনশীল প্রকাশনা পুরোপুরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাই বইমেলাটি প্রকাশকদের কাছেও কাঙ্ক্ষিত। গত এক সপ্তাহের মেলা মন্দ নয়। আমরা আশা করছি মেলার সামনের দিনগুলো আরও ভালো হবে।
তাম্রলিপি প্রকাশনীর প্রকাশক তারিকুল ইসলাম রনি বলেন, করোনার মধ্যে বইমেলা হলে যেমনটা ভেবেছিলাম, তেমনটা হয়নি। বরং এক সপ্তাহের মেলা সেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। মানুষ আসছে, বই কিনছে, মেলা জমজমাট হচ্ছে। আমরা আশা করছি মেলার সামনের দিনগুলো আরও ভালো হবে।
এদিকে প্রথম এক সপ্তাহের মেলা নিয়ে সন্তুষ্ট বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষও। তবে পরবর্তী সময়গুলোও যেন আরও ভালোভাবে পার করা যায়, সেটিই প্রত্যাশা তাদের।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বাংলানিউজকে জানান, আমরা এখন একটা অস্থির সময় পার করছি। যেহেতু আমরা এক সপ্তাহ সুন্দর করে মেলা পরিচালনা করতে পেরেছি, সেহেতু আমরা আনন্দিত। আমরা চাই সামনের দিনগুলোও যেন সুন্দর ভাবে কাটে।
তিনি বলেন, করোনাময় সময়ে বইমেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একাডেমির পক্ষ থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি প্রকাশনীকে মাস্ক ব্যতিত ক্রেতাদের কাছে বই না বিক্রি করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। একইসঙ্গে ক্রমবর্ধমান করোনা-পরিস্থিতিতে বাংলা একাডেমি, প্রকাশকরা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে মেলায় আগতদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ এবং মাস্ক ছাড়া বই বিক্রি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে সপ্তাহের শেষ দিনে মেলার মাঠে স্টল/প্যাভেলিয়ন নির্মাণে হাতুড়ি-পেরেকের ঠুকঠাক শব্দ শোনা গেলেও তা অনেকটাই শেষ পর্যায়ে। নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে লিটলম্যাগ চত্বরও। খুব শিগগিরই সেখানেও লিটলম্যাগের স্টলগুলো জমজমাট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর শেষ হয়েছে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজও।
এবার বই প্রকাশেও এগিয়ে মেলার প্রথম সপ্তাহ। সপ্তম দিনে নতুন বই প্রকাশের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৭০০ এর ঘরে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, ভ্রমণ, ইতিহাসসহ বিবিধ বিষয় মিলিয়ে বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য মতে সংখ্যাটি ৬৯১। এভাবেই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নতুন বইয়ের প্রকাশনা।
এমন বাস্তবতায় সংশ্লিষ্টজনরা বলছেন, ভালো হোক, মন্দ হোক মহামারির মেলা হওয়াটা যেমন বড় প্রাপ্তি। তেমনি নতুন বইয়ের প্রকাশনা অব্যাহত থাকাও আরেক প্রাপ্তি। এতে নতুন লেখক তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রটি আরও বিস্তৃত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২১
এইচএমএস/আরআইএস