বইমেলা থেকে: ‘মাগো, ওরা বলে সবার কথা কেড়ে নেবে। তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না।
সত্যিই তাই, কথার ঝুড়ি নিয়ে এবার খোকার বাড়ি ফিরতে একটু বেশ দেরিই হয়ে গেল। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে এবার সে কথার ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরলো স্বাধীনতার মার্চে। তবে সে কথা রাখলো, মাকে ভালোবেসে ভাষার সঙ্গে মায়ের জন্য নিয়ে ফিরলো স্বাধীনতাও।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) বাঙালির এক ঐতিহাসিক দিন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হিসেবে দিনটি যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, শোকের; ঠিক তেমনি আনন্দেরও। একইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতির জন্য এবার অমর একুশে বইমেলা পা রেখেছে মহান মার্চে। সেদিক থেকে আজ বইমেলার দ্বিতীয় ছুটির দিন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব, বইমেলার প্রাণচঞ্চলতা আর ছুটির আমেজের মেলবন্ধন বাঙালিকে যেন আজ সত্যিই স্বাধীনতা দিয়েছে প্রাণ খুলে পথ চলার। তাইতো সকাল পেরিয়ে বিকেল গড়াতেই বইমেলায় জেগে ওঠে মানুষের সমুদ্রের ঢেউ।
বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় ছোট্ট শিশু তাহিয়ার সঙ্গে। ছড়া-কবিতা আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গল্পের বইয়ের পাশাপাশি মায়ের জন্যও সে কিনে নিয়েছে একটা লাল টুকটুকে মলাট বাঁধা বই।
কথা হলে তাহিয়া বলে, আমি আর আব্বু অনেকগুলো বই কিনেছি। আর আম্মু তো বাসায়, শুধু আমার বই পড়তে চায়, তাই আম্মুর জন্যও একটা গল্পের বই কিনেছি।
মেলায় আসা রঞ্জু রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন, আমি ছোট থেকেই বাচ্চাদের বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছি। ফলে ওরাও এখন বইয়ের প্রতি আগ্রহী। নিজেরাই এখন বইয়ের লিস্ট করে তা পড়তে আগ্রহী।
তিনি বলেন, আমি নিজেও টুকটাক লেখাপড়া করি। ইতিহাস আমার পছন্দের বিষয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ স্টাডি করেছি। এবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের কিছু বই প্রকাশ পাওয়ার কথা আছে। ভাবছি ওগুলোও পড়বো। এতে তাদের দিক থেকেও মুক্তিযুদ্ধটাকে বোঝা যাবে।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে সব বয়সের মানুষ ভিড় জমান বইমেলায়। স্টলে স্টলে ঘুরে, বিভিন্ন লেখকদের অটোগ্রাফ নিয়ে, পছন্দের বই কিনে এবং গল্প আড্ডায় সময় পার করেছেন তারা।
মেলায় এদিন বইয়ের বিক্রিও হয়েছে বেশ ভালো। অন্তত আট দিনের বিক্রির হিসেব ছাড়িয়ে গেছে বলেই মন্তব্য অধিকাংশ প্রকাশক ও বিক্রয় কর্মীদের। আর তাতে সায় দিয়েছেন ছোট-বড় সব ধরনের প্রকাশক।
বিজিবির ব্যান্ড দলে পরিবেশনায় মুগ্ধ মেলার দর্শক
বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিয়ে বইমেলার প্রবেশপথে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ব্যান্ড পার্টি দেশাত্মবোধক গান বাজিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। দলের ৩৩ জন সদস্য এ সময় দেশাত্মবোধক নানা গানের সুর পরিবেশন করে। তাদের ঘিরে সেখানে উৎসুক মানুষের বিরাট জটলা সৃষ্টি হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন বিজিবি সদস্য বলেন, ‘আমাদের বাহিনীর ৩৩ জন সদস্য এখানে অংশ নিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসে এমনভাবেই আমরা আমাদের অনুশীলন করি। ’
নতুন বই
শুক্রবার মেলায় ২৭৬টি নতুন বই এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গল্প ৩৭টি, উপন্যাস ৪৭টি, প্রবন্ধ ১২টি, কবিতা ৯৫টি, গবেষণা ৭টি, ছড়া ৪টি, শিশুসাহিত্য ৩টি, জীবনী ৯টি, মুক্তিযুদ্ধ ১১টি, বিজ্ঞান ৪টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ১টি, রাজনীতি ২টি, বঙ্গবন্ধু ৮টি, রম্য/ধাঁধা ৪০টি, ধর্মীয় ২টি, অনুবাদ ২টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি ও অন্যান্য ২৪টি।
নতুন বইগুলোর মধ্যে কথাপ্রকাশ এনেছে মো. আবদুল হামিদের ভূমিকায় ও মুস্তাফিজ শফি সম্পাদিত প্রবন্ধ ‘মুজিব কেন জরুরি’, সেলিনা হোসেনের শিশু কিশোরদের ‘ছোটদের বঙ্গবন্ধু’, রামেন্দু মজুমদারের প্রবন্ধগ্রন্থ ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু ও বিবিধ ভাবনা’, অনুপম এনেছে ধ্রুব এষের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাস সমগ্র’, নালন্দা থেকে নওশাদ জামিলের উপন্যাস ‘প্রত্যাবর্তন’, আগামী থেকে আবদুল গাফফার চৌধুরী, মোনায়েম সরকার ও সৈয়দ জাহিদ হাসানের যৌথ সম্পাদনায় প্রবন্ধগ্রন্থ ‘একাত্তরের ঐতিহাসিক মার্চ শতপ্রবন্ধ’, আবদুল গাফফার চৌধুরীর রাজনৈতিক কলাম ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনীতি’, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে সঙ্গীতা ইমামের কিশোর উপন্যাস ‘স্বাধীনতা ও আত্মজার গল্প’, প্রহেলিকা প্রকাশন থেকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাব্যগ্রন্থ ‘হাওয়া কলে জোড়া-গাড়ি’, সাহিত্যবিকাশ থেকে হাসান টুটুলের গল্পগ্রন্থ ‘যুদ্ধ জয়ের পর’, ‘ভৌতিক গল্প অদ্ভুতুড়ে’, ‘সায়েন্স ফিকশন ক্লোরোডা’, নির্মলেন্দু গুণের কাব্যগ্রন্থ ‘চুমুর নূপুর’, কাকলী এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘শর্টকাট প্রোগ্রামিং’, সময় থেকে আনিসুল হকের উপন্যাস ‘সুবেদার ওহাব আব্বা আব্বা বলে কাঁদেন’, এডর্ণ এনেছে গুলতেকিন খানের কাব্যগ্রন্থ ‘আজ তবে উপনিবেশের কথা বলি’ অন্যতম।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২১
এইচএমএস/আরবি