ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বাজেট

বাজেট আকার নয়, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় সিপিডির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৫
বাজেট আকার নয়, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় সিপিডির ছবি: দীপু মালাকার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটের আকার নয়, এর অর্থায়ন ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
 
শুক্রবার (০৫ জুন) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে জাতীয় বাজেট ২০১৫-১৬ সিপিডি’র পর্যালোচনা শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংশয় প্রকাশ করা হয়।


 
এতে সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাইজ নয়, বাজেট ফাইনেন্সিং ও মিসিং নিয়ে আমাদের চিন্তা।
 
তিনি বলেন,  বাজেটে যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জন নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে, বাজেটের লক্ষ্য অর্জিত হবে না।
 
বাজেট ঘাটতি বাজেটের আয়তনের তুলনায় বড় নয় জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, প্রতিবছর বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে হয়। এবার সাড়ে ৪ শতাংশের মতো আছে।
 
তিনি বলেন, এবার জিডিপি’র আয়তন একটু বাড়াতে হবে। এটা আদৌ বড় দুশ্চিন্তার বিষয় নয়। তবে অভ্যন্তরীণ উৎসের ঋণ নির্ভরতা কমাতে হবে।
 
ব্যাংক ঋণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বৈদেশিক রিজার্ভ রেকর্ড অতিক্রম করার পরও বাজেটে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতার প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
তিনি বলেন, বাজেটে সুদ পরিশোধ হিসেবে ৩১ শতাংশ ব্যয় নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সুদ পরিশোধ দেখিয়ে বড় বাজেট ‘লাভের গুড় পিঁপড়ায়’ খাওয়ার মতো।
 
প্রকল্প বরাদ্দ ও ব্যয় নিয়ে মূল্যায়ন থাকলেও জনগণ তার সুফল কতটা পায় তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
 
মোবাইলে কথার ওপর ভ্যাট প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, নূন্যতম মাত্রাকে ছাড় দিয়ে ভ্যাট আরোপ করলে যারা নূন্যতম কথা বলেন, তারা উপকৃত হন। সরকার রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বেপরোয়া হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে কারণ, তাকে রাজস্ব আদায় করতে হবে। নূন্যতম মাত্রাকে ছাড় দিয়ে ভ্যাট বসাতে পারে।

‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ’ বাজেট স্লোগান সম্পর্কে দেবপ্রিয় বলেন, সমৃদ্ধির সিঁড়িকে মসৃণ করতে হবে, সিঁডি কিছুটা পিচ্ছিল হয়ে গেছে।
 
বাজেটে আয়-ব্যয় কাঠামো বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে যে প্রাক্কলনগুলো করা হয়েছে, তা করা হয়েছে সংশোধিত বাজেট কাঠামোর ভিত্তিতে।
 
প্রকৃত অর্জনের ভিত্তিতে আয়-ব্যয় কাঠামো করা হয়নি। আরও ৩ মাস পর পরিষ্কার হবে, সংশোধিত বাজেটের ক্ষেত্রে যে মান ধরা হয়েছে তার অর্জন একটু নিচে।
 
সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার হার ধরলে প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে যাবে। গতবছরও বলা হয়েছে, এ বছর ৩০ হাজার কোটি টাকা অনর্জিত থাকবে।
 
আগামী অর্থবছরেও যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তার একটি বড় অংশ অনর্জিত থাকবে বলে জোর দেন এ অর্থনীতিবিদ।
 
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ২৭ শতাংশ থেকে ৩৫-৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। প্রবৃদ্ধি গড়ে ৩ বছর ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।
 
দেশের প্রয়োজনে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশজ আয়ের যে ১৭ শতাংশ রয়েছে তা ২০-২২ শতাংশে অবশ্যই নিতে হবে।
 
দেশের ১০-১১ শতাংশ রাজস্ব থেকে আসে। রাজস্ব বাড়াতে সরকার যে সংস্কারের কথা বলেছে, তা দ্রুত করার পক্ষে মত দেন তিনি।
 
বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারে মনোযোগী হওয়া উচিত। প্রকল্প সাহায্য ব্যবহার হলে এডিপি ব্যবহার বাড়বে, বাড়বে কর্মসংস্থান।
 
সিপিডির গবেষণা তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ২০১৬, বড় জোর ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। এর জন্য ২০২১ সালের অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
 
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব পড়বে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক ঐক্যমত থাকলে বাজেট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব।
 
পাঁচটি কমিশন সম্পর্কে দেবপ্রিয় বলেন, পরিসংখ্যান, স্থানীয় সরকার, কৃষি, সরকারি ব্যয় ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার কমিশন করার কথা বলা হয়েছে।
 
আগামী বাজেটে ব্যাংকিং খাত সংস্কার বিষয়ে কমিশন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন করতে সিডিপি’র পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়।
 
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৫/আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা
আরইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।