খাগড়াছড়ি: এক সপ্তাহ ধরে চলা টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত পাহাড়বাসীর জীবন। তিন পার্বত্য জেলার হ্রদ, নদী ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু এলাকা তলিয়ে গেছে।
বন্যার সঙ্গে পাহাড় ধস নিয়ে সমান আতঙ্কে ভুগছেন স্থানীয়রা। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানে ছোট বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।
বান্দরবানের ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট কৌশিক দাশ জানান, বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বান্দরবান মূল শহর প্রায় তিন ফিট পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন আলীকদম, রুমাসহ বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ছয়জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। নেটওয়ার্কও তেমন কাজ করছে না।
বান্দরবান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফিন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নাজমুল আলম বলেন, বন্যার কারণে আমাদের যাতায়াত করা কঠিন হচ্ছে। তারপরও আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, এটি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। আমরা জেলায় ২০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। সেখানে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মেডিকেল টিমসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীও মাঠে কাজ করছে।
টানা বর্ষণের ফলে রাঙামাটির ১০ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাপ্তাইয়ে মাটি ধসে কয়েকটি বসতঘর ধসে পড়েছে। রাইখালী রিফিউজি পাড়া, বড় ঝিরিপাড়া ও রাইখালী বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে টিুট, ভট্ট, জাহাঙ্গীর আলম, আজিম, আবদুর রশীদ, হারুন ও নেজামের আটটি ঘর পাহাড় ধসে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বড়ইছড়ি কাপ্তাই ক্লাবের পাশের অনিল তনচংগ্যা ও চিৎমরম সিড়িঁঘাট এলাকার আরও দুটি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাঙামাটি ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মাইন উদ্দিন বাপ্পী বলেন, টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ছোট বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হলেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন জানান, রাইখালীর ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের খবর জানতে পেরেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে রাজস্থলী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বহু মাছের প্রজেক্ট এবং পুকুর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানের রাস্তা-ঘাট, পুকুর-জলাশয়।
জুরাছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দুমদুমম্যায় বন্যায় ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত লোকজন।
এদিকে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে গাছ ও পাহাড়ের মাটি পরে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অবশ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের ওপর পড়া মাটি ও গাছ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
তিনি জানান, জেলার সর্বত্র যেখানেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। সেখানে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিতে থাকা ও পানিবন্দি লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে কাজ করছে প্রশাসন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২৩
এডি/এএটি