শ্রীমঙ্গল: সাপ নিয়ে এমনিতেই মানুষের আতংকের শেষ নেই। অনেকেই সাপ নজরে আসা মাত্রই ছুটে পালান।
কালনাগিনীর পরিচয় বিষাক্ত সাপ হিসেবে। কথায় কথায় আমরা বিষাক্ত সাপের সঙ্গে তুলনায় কালনাগিনীর উদাহরণ দেই। কিন্তু সত্যি হলো এটি সম্পূর্ণ বিষহীন সাপ! এর কামড় খেলে মানুষ মরে না। তবে খানিকটা আহত হয় মাত্র। সনাতন ধর্মীয় চলচ্চিত্রে কালনাগিনীকে বিষাক্ত সাপ হিসেবে তুলে ধরে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে একবার একটি কালনাগিনীকে গাছে ঝুলে থাকতে দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পরই ওই কালনাগিনী ঠাঁই পেল শাহরীয়ার সিজার রহমানের হাতে। তিনি তখন আমাকে ডেকে বলেছিলেন, এটিই সেই বিখ্যাত কালনাগিনী। তখনই ভালো করে তাকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
তুলনামূলকভাবে অন্য সাপের চেয়ে সরু এই সাপটি বেশ রঙিন। মাথা ছোট, চ্যাপ্টা, গলা চিকন। সাদা বা সবুজাভ হলুদ দেহের উপর কালো ডোরা কাটা দাগ। তার উপর পিঠজুড়ে লাল আর কমলা রঙের ফুলের মতো সুন্দর নকশা করা। সত্যি দারুণ সুন্দর দেখতে সাপটি।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত সরীসৃপ গবেষক শাহরীয়ার সিজার রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, মানুষের একটি ধারণা রয়েছে যে, কালনাগিনী সাপ মানেই বিষাক্ত সাপ। আসলে তা একদমই সঠিক নয়। কালনাগিনী আসলে এক প্রজাতির নির্বিষ সাপ। চলচ্চিত্রসহ অন্য গণমাধ্যমে এই সাপটিকে নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে মানুষের মনে ভ্রান্ত ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সাপ দেখলেই মেরে ফেলি। এটা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। সাপ পরিবেশের উপকারী একটি প্রাণী। এখন আমরা জানি যে, বেশির ভাগ সাপই কিন্তু বিষাক্ত নয়। তবে বিষাক্ত সাপগুলোও কিন্তু মানুষকে সচরাচর মানুষ-জন্তুকে ছোবল দেয় না। তখনই ছোবল দেয় যখন তারা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
কালনাগিনী মাঝারি আকারের সাপ। ইংরেজি নাম Golden Tree Snake বা Ornate Flying Snake এবং বৈজ্ঞানিক নাম Chrysopelea ornata। এদের flying snake অর্থাৎ উড়ন্ত সাপ বলা হলেও এরা আসলে উড়তেই পারে না। কেবল এক গাছ থেকে অন্যগাছে লাফিয়ে লাফিয়ে বিচরণ করতে পারে।
এরা গাছের উপর থাকতে ভালোবাসে। ঝোপঝাড়ে, গাছের এক ডাল থেকে আরেক ডালে খুব দ্রুত চলাচল করতে পারে। গাছে বাস করে এমন ছোট প্রাণী- টিকটিকি, বাদুড়, ইঁদুর কাঠবিড়ালি, কীট-পতঙ্গ কিংবা পাখির ডিম প্রভৃতি রয়েছে তার খাদ্যতালিকায়। বাংলাদেশের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সুন্দরবন অঞ্চলে এদের দেখা মেলে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫