ঢাকা: চিতাবাঘ তার শরীরের রঙ পাল্টাতে না পারলেও কিছু কিছু জেব্রা তাদের শরীরের ডোরা কাটা দাগের রঙ পাল্টাতে পারে। বিশেষত, উষ্ণ অঞ্চলের জেব্রা।
সম্প্রতি, একটি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা বলছেন, মূলত উষ্ণ অঞ্চলে যেসব পোকা-মাকড়ের প্রকোপে রোগ ছড়ায়, সেগুলোর হাত থেকে বাঁচতে এবং শরীর ঠাণ্ডা রাখতেই রঙ পাল্টে থাকে জেব্রা। তিন প্রজাতির জেব্রার শরীরেই উজ্জ্বল সাদা এবং কালো ডোরা কাটা দাগ রয়েছে। আর এই দাগ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ডারউইনসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের ধাঁধাঁয় ফেলে রেখেছিল।
এখন বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন (hypotheses), মূলত পোকা-মাকড় থেকে বাঁচতে, অপটিক্যাল ইল্যুশন তৈরি করে পরিবেশের সঙ্গে মিশে থাকতে, শিকারী প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা পেতে, শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে এই পাঁচটি কারণে জেব্রার শরীরে এই ডোরা কাটা দাগ থাকতে পারে।
নতুন একটি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ইথিওপিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত যে ডোরাকাটাহীন জেব্রা বসবাস করে, তাদের ক্ষেত্রে শরীরের রঙের সঙ্গে তাপমাত্রার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে ডোরাকাটা দাগ সম্বলিত জেব্রার সঙ্গে যোগসূত্রতা রয়েছে। একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে, উষ্ণ অঞ্চলের জেব্রার শরীরে ডোরাকাটা দাগের সংখ্যাও বেশি থাকে।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জীববিজ্ঞানী ব্রেন্ডা ল্যারিসন একটি প্রকল্পের আওতায় ১৬টি জেব্রা দলের ওপর গবেষণা চালান।
গবেষণায় জেব্রার শরীরে থাকা ডোরাকাটা দাগের ক্ষেত্রে ২৯টি ভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ খুঁজে পান তার দল। এর মধ্যে মাটির আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, রোগ-প্রতিরোধ ইত্যাদি। এ সব কারণের মধ্যে আবহাওয়া এবং আর্দ্রতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন ল্যারিসন।
আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করেই দুই অঞ্চলের জেব্রার শরীরে থাকা ডোরাকাটা দাগের পার্থক্য খোঁজেন তিনি।
জেব্রার রঙ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গরমের সময় সাদা অংশ তাদের শীতল করে। একইভাবে শীতের সময় কালো অংশ তাদের উষ্ণ রাখে।
তার ধারণার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন দ্য ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জীববিজ্ঞানী টিম ক্যারো।
টিম ক্যারো জানান, তার গবেষণার সঙ্গে ব্রেন্ডা ল্যারিসনের পর্যবেক্ষণের অনেক মিল রয়েছে। অনেকদিন ধরেই তিনি জেব্রার শরীরে থাকা ডোরাকাটা দাগের সঙ্গে পোকা-মাকড়ের সম্পর্কের বিষয়ে গবেষণা করছেন।
অন্য মত না থাকলে হয়ত এই গবেষক দুইজনের ধারণাই সত্যি বলে বিবেচিত হবে। তবে তাদের পর্যবেক্ষণ/ধারণা বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হবে আমাদের।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৫