ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

প্রকৃতিতে মুখর এখন কুনো ব্যাঙের ছানা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্পেশালিস্ট এনভায়রনমেন্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
প্রকৃতিতে মুখর এখন কুনো ব্যাঙের ছানা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল: প্রকৃতিতে বৃষ্টি আসে আশীর্বাদ হয়ে। এমন কিছু প্রাণি রয়েছে যাদের বংশবিস্তার সরাসরি বৃষ্টিধারা উপর নির্ভরশীল।

বৃষ্টি ফোঁটার পরশ তাই পুরো একটি বছরের প্রতীক্ষা। বৃষ্টি না হলে বিপন্ন হয় তাদের প্রজনন। এমনই একটি পরিচিত প্রাণির নাম কুনো ব্যাঙ।

আমাদের চারপাশ এখন মুখর কুনো ব্যাঙের ছানায়। শত-সহস্র ছানা এখন ঘুরাঘুরি করছে এদিক-ওদিক। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে – আমাদের পায়ের কাছেই হয়তো ধীরে ধীরে লাফিয়ে চলেছে ক্ষুদ্রাকৃতির ওই শিশুরা। কী মারাভরা ছোট্ট ছোট্ট লম্ফ তাদের!

এখন প্রায়শই মাটিতে পা রাখতেই দেখি কুনো ব্যাঙের ছানাগুলো প্রায় আমার পা ঘেঁষে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। যেন আমার পায়ের তলায় এখুনি এসে পিষ্ট হবে! একটা নয়  দুটা নয়, শত শত! অসাবধানতার ফলে তাদের কতগুলোই যে মানুষের পা এবং যানের চাকার নিচে পড়েছে কে জানে! এভাবেই ওরা নতুন পৃথিবীর সাথে পরিচিত হয়ে উঠছে।

ব্যাঙ উভচর শ্রেণির মেরুদণ্ডী প্রাণি। কুনো ব্যাঙের দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি। এদের শরীরে আঁচিলের মতো ছোট ছোট দাগ রয়েছে। এদের ইংরেজি নাম Asian Common Toad এবং বৈজ্ঞানিক নাম Duttaphrynus melanostictus। আমাদের বাসা-বাড়ির আনাচে-কানাচে এরা বছরের পর বছর ধরে দিব্বি বসবাস করে চলেছে।

দিনের বেলা এরা মাটির গর্তে, ঘরের কোণে, মালপত্রের স্তূপের নিচে, গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকে। অন্ধকার নেমে এলে এরা খাবারের সন্ধানে বের হয়। লাল পিঁপড়া, কালো পিঁপড়া, মশা-মাছি ও নানা ধরনের পোকা-মাকড় খেয়ে এরা বেঁচে থাকে।

বর্ষা মৌসুম এদের প্রজননকাল। বৃষ্টি শুরু হলে পর এরা প্রিয়ার খোঁজ করতে থাকে। সঙ্গিনী পেয়ে গেলে তার সাথে এরা শারীরিক ভালোবাসায় জড়ায়। এরা বাহ্যিক নিষেক ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রজনন ঘটিয়ে ডিম পারে। অর্থাৎ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু দেহের বাহিরে মিলিত হয়। স্ত্রী ব্যাঙ প্রায় ৩০ হাজার ডিম্বাণু ছাড়ে।

কুনো ব্যাঙ শুকনো জায়গায় বেশি থাকে। শীতকালে এরা শীতনিদ্রায় (হাইবারনেশন) চলে যায়। কুনো ব্যাঙ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ প্রজাতিটিকে Least Concern অর্থাৎ ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।

বৃষ্টি কিংবা রোদ। দুটোতেই চলাচলে এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে তারা। এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কিংবা রোদের হাসি গায়ে মেখে কুনো ব্যাঙের ছানারা লম্ফ-ঝম্প দিয়ে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছে আমাদের চারপাশের সাথে। ওরা টিকে থাকুক আমাদের পরিবেশবন্ধু হয়ে।   

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।