ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

শিকারে বিপন্ন দেশি মেটেহাঁস

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৫
শিকারে বিপন্ন দেশি মেটেহাঁস ছবি : ওমর শাহাদাত/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): সুলভ থেকে এখন তারা দুর্লভ। ছিলো ঝাঁক ঝাঁক, কমে গিয়ে এখন পৌঁছেছে কয়েকটিতে।

এভাবে শিকার অব্যাহত থাকলে সেই কয়েকটিও কমে চলে যাবে একেবারে শূন্যের কোঠায়। দেশের অনেক জলাশয়, হাওর-বিলে এখন তো তাদের দেখাই পাওয়াই কঠিন! বসতি ধ্বংস ও শিকারিদের ফাঁদে আটকা পড়ে তাদের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন।

মিঠাপানির জলাশয়ের এ পাখিটির নাম দেশি মেটেহাঁস। কেউ কেউ আবার পাতিহাঁস নামেও চেনেন তাকে। ইংরেজিতে বলে Indian Spot-billed Duck। এক সময় বাংলার প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ওদেরই দখলে ছিল। আজ নেই। আজ সেই জলাভূমিগুলো মানুষের দখলে চলে যাওয়ার পর ওরা হারিয়ে যেতে বসেছে। তারমধ্যে যারা ভাগ্যক্রমে সামান্যসংখ্যায় টিকে রয়েছে ওদের জীবনও সেই কপাল পোড়াদের মতোই। কখন যে শিকারির লোলুপ দৃষ্টি গিলে খাবে তাদের!

কয়েক বছর আগে হাইল হাওরে নৌকাভ্রমণের সময় এক জোড়া মেটেহাঁস দেখেছিলাম। মাঝি নৌকার গতি কমিয়ে ভালো করে দেখার সুযোগ করে দিলো। দূরবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে যা দেখছি সেটি আসলে দেশি মেটেহাঁসের দৃশ্য। মিনিট দু-এক পরে কী মনে করে ওরা বিলের পানিতে ডুব দিলো। অপেক্ষা করতে লাগলাম। যদি আবার দেখা পাই। কিন্তু আর দেখা হলো না।   

দেশি মেটেহাঁসের সারাদেহে রয়েছে কালচে আভা। মাথা এদের কালচে ধূসর। তার উপরে হলুদ রঙে ছিটা। গলা ঘাড় চিবুক হালকা বাদামি। বুকে অসংখ্য বাদামি ছিটা। ঠোঁটের উপরের অংশ কড়া হলুদ। তবে এদের চোখটি বেশ সুন্দর! কাজলটানা! এরা আমাদের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও শীত মৌসুমে পরিযায়ীরা এসে ভিড় করে। আমাদের দেশে যেহেতু ওরা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে তাই শীতকাল ছাড়া দলে দলে আর তাদের দেখা যায় না।

পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ট্রেজারার ওমর শাহাদাত বাংলানিউজকে বলেন, দেশি মেটেহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। দেশের সব জলাভূমিতে এক সময় পাওয়া গেলেও এখন সেভাবে আর নেই ওরা। প্রায়ই এদের ডিম ও ছানা চুরি হয়। স্থানীয় কৃষক, জেলে ও কতিপয় দুষ্ট ছেলের দল এদের ডিম চুরি করছে নিয়মিতই। ওরা ডিম চুরি করে এনে খায়, নয়তো ঘরের পালা হাঁসের ডিমের সঙ্গে ডিম ফুটানোর চেষ্টা করে। প্রজনন সংকটসহ রয়েছে জলাভূমি সংলগ্ন তার আবাসস্থল ধ্বংস। এর ফলেই ওরা আজ নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে।

ডিম ফোটানো সম্পর্কে তিনি বলেন, গৃহপালিত হাঁসের ডিমের সঙ্গে দেশি মেটেহাঁসের ডিম ফুটানোর চেষ্টা করে অনেকে সফলও হয়। তবে বুনোহাঁস তার চিরায়ত স্বভাবের কারণে একটু বড় হলেই উড়ে চলে যায়। কিন্তু মুক্তি মেলে না সহজে। কারণ অভিভাবকহীন ছানা প্রাকৃতিক শত্রুর হাত থেকে বাঁচার কৌশল যে একেবারেই অজানা তাদের!

ওমর শাহাদাত আরও বলেন, ছেলে ও মেয়েহাঁসের চেহারায় বিশেষ পার্থক্য নেই। দৈর্ঘ্য ৬০ সেমি এবং ওজন প্রায় ১.৪ কেজি। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে লতাপাতা ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী। জুলাই-অক্টোবর মাসে প্রজনন ঋতুতে পানির কাছে মাটিতে লতা-পাতায় ঘাস, আগাছা ও পালকের বাসা করে ৭-৯টি সবুজ ও সাদায় মেশানো ডিম পাড়ে। মেয়েহাঁস একাই ডিমে তা দেয়। ২২ বা ২৪ দিনে ডিম ফোটে। ছেলে ও মেয়েহাঁস উভয়ে মিলে ছানা পাহারা দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।