ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বনকে ঘিরেই বাঁচামরা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
বনকে ঘিরেই বাঁচামরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে ফিরে: বনের সঙ্গে তাদের নাড়ির বন্ধন। অনেকটা জন্ম-জন্মান্তরের।

কোথাও এতোটুকু কৃত্রিমতা নেই। নেই শহুরে হয়ে ওঠার দায়ভার। প্রিয় মা-বাবার হাত ধরেই প্রিয় বনকে চেনা। বনের মায়া-মমতাকে বুঝে উঠতে শেখা।

আদিবাসীদের কণ্ঠস্বর ছুঁয়ে নিজস্ব ভাষার যে শব্দধ্বনি প্রতিনিয়ত মুখগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে তাতেও রয়েছে বনের ভাষারই টান। বনকে ঘিরে প্রাণের আকুলতায় মায়ের ভাষার যথার্থ মর্যাদা তাদের কণ্ঠেই পরম মাধুর্যে ধরা দেয় বারবার।

‘কুবলাই’। শব্দটির সঙ্গে আমি পরিচিত সেই শৈশব থেকে। কারণ চা-বাগানে চা গাছের মায়া-মমতায় আমারও বেড়ে ওঠা। চা বাগানের দুর্গম পাহাড়েই আদিবাসীদের বসবাস। ‘কুবলাই’ একটি খাসিয়া শব্দ। এর অর্থ সালাম বা নমস্কার। এ শব্দ দিয়েই তারা সম্মান জানায় সবাইকে।  

আমি যখন ঝিমাই পুঞ্জিবাসীদের ‘কুবলাই’ বললাম তারা প্রত্যেকেই আন্তরিকতার হাসি উপহার দিলেন। প্রতিউত্তরে ‘কুবলাই’ শব্দটি বিনিময় করলেন সহাস্যে। এর নামই চিরসবুজ বনের শাশ্বত ভালোবাসা।

হাজার-হাজার পান গাছ আর নানা প্রজাতির ছোটবড় গাছেদের ঘিরে যে পুঞ্জির অস্তিত্ব তা বনের নিবিড় সংস্পর্শে বেড়ে ওঠার কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয়। সরলতা ও আন্তরিকতার সবটুকু রঙ এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে তাদের প্রাণে।    

সোমবার (০৩ আগস্ট) যখন কুলাউড়ার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জিতে গিয়ে পৌঁছলাম তখন বিকেলের আলো প্রায় নিভে যাচ্ছিল। অন্ধকার করে মেঘেরা সচল রয়েছে আকাশের ভাঁজে ভাঁজে। মনে হচ্ছিল একটু পরই বোধহয় বর্ষণ শুরু হবে। অশান্ত বর্ষণ।  

যেতে যেতে হঠাৎই চোখে পড়লো খাসিয়াদের থাকার জন্য তৈরি একটি দালান। তার ছাদে রেলিং নেই। নিচে গভীর খাদ। দালটির ছাদে খেলা করছিলো তিনটি শিশু! আমি সামনে যাওয়া মাত্রই তারা শোয়া থেকে বসে পড়লো। ছাদে শিশুদের ওই অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের আশঙ্কা আর পুরো খাসিয়াপল্লীর মানবেতর অবস্থা মিলেমিশে একাকার মনে হলো! 

খাসিয়া শব্দ ‘‌‌জিংহাই’ থেকে নামকরণ হয়েছে ঝিমাই পুঞ্জির। জিংহাই শব্দের অর্থ অনেক দূর। ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জির বাহাত্তরটি পরিবার এখন রয়েছেন উচ্ছেদ আতঙ্কে। শান্তির ঘুমে নেই তাদের। মন জুড়ে গভীর উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ।

পাশেই রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থার চা বাগান। সেই চা বাগান খাসি পরিবারগুলো মুখের নির্মল হাসি-আনন্দকে কেড়ে নিতে মরিয়া। তারা মুছে দিতে চাইছে খাসি পরিবারগুলোর অস্তিত্ব। তবে কি ঝিমাইবাসীর সুখ-শান্তি-নিরাপত্তা আজ ‘‌‌জিংহাই’?  অর্থাৎ অনেক দূরে?

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৫
বিবিবি/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।