সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
জলবায়ু তহবিলের টাকা যথাযথ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং সেই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে এই খাতে আরও টাকা বরাদ্দের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিবেশ অধিদপ্তর, টিআইবিসহ পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু তহবিলে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি করেছিল। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জলবায়ু তহবিলে ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ সালে প্রতি অর্থবছরে ৭০০ কোটি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪০০ কোটি, ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০০ কোটি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩০০ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরেও ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত ১০ বছরে জাতীয় বাজেটে আকার অনেক বেড়েছে। বেড়েছে প্রতিটি পণ্যের দাম। সেই সাথে ১০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিও বেড়েছে। তবে সেই তুলনায় জলবায়ু তহবিলে বরাদ্দের পরিমাণ একেবারেই অপ্রতুল।
জলবায়ু তহবিলের বর্তমান বরাদ্দ অপর্যাপ্ত কিনা- প্রশ্নে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্টের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন এবং অর্থ) আহমদ শাহ বলেন, যে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় তার মধ্যে ৩৪ শতাংশ বিভিন্ন ব্যাংকে রেখে দিতে হয়। অবশিষ্ট ৬৬ শতাংশ ব্যয় করা যায়। ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও ১৯৮ টাকা খরচ করা যাবে। আমরা এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের আবেদন করেছিলাম। সরকার বলছে ৩৫ শতাংশ জলবায়ু খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে। তবে তা অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে বৃদ্ধি করেছে, আমাদের জলবায়ু ট্রাষ্ট ফাণ্ডে না। সামগ্রিকভাবে জলবায়ু ট্রাষ্ট ফাণ্ডের টাকা বাড়েনি।
‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ (পবা)’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, জলবায়ু ফাণ্ডে প্রথমে ৭০০ কোটি করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো। সেটা কমতে কমতে একশো কোটিতেও এসেছে। এখন আবার ৩০০ কোটি করা হয়েছে। এর মুল কারণ হচ্ছে জলবায়ু তহবিলের টাকা ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারা, পাশাপাশি অনেক অনিয়মও হয়েছে। যার ফলেই ফাণ্ডে বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে সরকার। ফাণ্ড ব্যবহারে অনিয়ম বা দুর্নীতি থাকলে সেগুলোও দূর করতে হবে। যারা এই ফাণ্ড ব্যবহারে অনিয়ম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ১৬ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা গ্রহণযোগ্য না। সঠিকভাবে টাকা ব্যবহার না করার কারণে বরাদ্দ কমানো কোনও সমাধান না।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক এই অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোবহান।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু তহবিল গঠন সরকারের একটা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত ছিল, এখনও আছে। তহবিল গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে যে হারে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতো, তার তুলনায় বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যাও বেড়েছে। যে কারণে আমরা কমপক্ষে এক হাজার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি করেছিলাম। আরও বেশি দিতে পারলে ভালো হতো। আমি হতাশ হয়েছি, সরকার বাজেট প্রক্রিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে সত্যিকার অর্থে কোন গুরুত্ব দিতে পারলো না। এটি দেশবাসীকেও হতাশ করবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের জলবায়ু ট্রাষ্ট ফাণ্ডে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা আছে। এবার ৩০০ কোটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জলবায়ু ফাণ্ডে। জমাকৃত টাকার লভ্যাংশ এবং তার সাথে এবছরের বরাদ্দের টাকা মিলে কাজ করতে পারবো, অসুবিধা হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘন্টা, জুন ২৮, ২০১৯।
আরকেআর/এমআইএইচ/এমএমএস