আহাওয়াবিদেরা বলছেন, দেশে মৌসুমি বায়ু অর্থাৎ, বর্ষা দেরিতে আসা ও কম সক্রিয় থাকার কারণে প্রাণীরা গরমে কাহিল ছিল। জুলাইয়ের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ সভার পর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন মাসে সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন ও গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ১ দশমিক ৮, শূন্য দশমিক ৬ ও ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, জুন মাসে দেশে গড়ে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে।
গত ১৭ জুন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ১০ ও ১১ মে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) এক সপ্তাহের বেশি সময় পরে ৯ জুন টেকনাফ হয়ে প্রবেশ করে। বর্ষাকাল বাংলাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বিলম্বে বিস্তার লাভ করায় ও কম সক্রিয় থাকায় দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃস্টিপাত হয়েছে। সে কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ অনেক স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
জুন মাসে স্বাভাবিক গড় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা থাকলেও রেকর্ড করা হয়েছে ২৭৩ দশমিক ৯ মিলিমিটার। অর্থাৎ, ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তবে স্বাভাবিক ১৮ দিনের স্থলে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩০ দিন।
জুনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মৌসুমি বায়ু দেরিতে আসায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম ছিল। বৃষ্টিপাত কম থাকার কারণে সানি (উজ্জ্বল দিন) ওয়েদার বিরাজ করেছে ও তাপমাত্রা বেশি হয়ে গেছে সারাদেশে। এ কারণে গড়ে তাপমাত্রা বেশি ছিল। তবে গত বছর এরকম ছিল না। অতীতে এরকম হয়েছে।
তিনি জানান, এখন মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হচ্ছে, তাপমাত্রা আর বাড়বে না। ক্রমেই কমে যাবে।
এদিকে জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে সার্বিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে ২-৩টি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে অন্তত একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
বন্যা
নদ-নদীর অবস্থায় বলা হয়েছে, মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে জুলাই মাসের মধ্যভাগ ও শেষার্ধে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
জুলাই মাসের প্রথমার্ধে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে ১-২টি মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে অন্তত একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
জুলাইয়ে স্বাভাবিক ৫১৯ মিলিমিটার হলেও ৪৯০-৫৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২২ দিনের স্থলে হতে পারে ২০-২৫ দিন।
সাগরে ৩ নম্বর সংকেত
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুছ জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা উপকূলীয় এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকার উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
সারাদেশে বৃষ্টি
মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় থাকায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আর দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৯
এমআইএইচ/এএ