ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ঊষর দেশকে সবুজ বানানোর গল্প, আমরা কোথায়?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
ঊষর দেশকে সবুজ বানানোর গল্প, আমরা কোথায়? নিজ দেশকে সবুজায়নের উদ্যোগ ‘গ্রিন লিগ্যাসি’ প্রকল্পের হয়ে গাছ লাগাচ্ছেন ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবিয়ি আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সভ্যতা মানুষকে অনেক কিছু দিয়েছে, কেড়েও নিয়েছে অনেক। এক সময়ের সৌম্য-শান্ত-সবুজ পৃথিবী আজ যান্ত্রিকতার করাল গ্রাসে হয়ে উঠেছে রুক্ষ, দূষিত। দিন দিন তা হয়ে উঠছে জীবনধারণের অনুপযোগী। এ কারণেই কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়- ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর/ লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর/ হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী/ দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি…।’

পরিবেশের এ কান্না আমরা শুনতে পাচ্ছি কি পাচ্ছি না- এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে, শুনতে পেয়েছে ইথিওপিয়া।

শুষ্ক-রুক্ষ দেশটি মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভরে উঠেছে সবুজে সবুজে। মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৩৫ কোটিরও বেশি গাছের চারা লাগিয়ে তারা বিশ্বের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।

বিজ্ঞানীদের মতে, কোনো দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। তবে, ইথিওপিয়ায় বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ মাত্র চার শতাংশেরও কম। অথচ ১৯ শতকের শেষ দিকেও এটি ছিল অন্তত ৩০ শতাংশ।

কয়েক বছরের ব্যবধানে এত বিপুল বৃক্ষনিধনের ফলও হাতেনাতে পেয়েছে আফ্রিকান দেশটি। খরা, ভূমিক্ষয়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ বৃদ্ধি, ফসলহানির মতো দুর্যোগ লেগেই আছে।  আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। বনভূমি ধ্বংসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেখানেও।  

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেন সারাদেশের মানুষ।   ছবি: সংগৃহীত

তবে, চূড়ান্ত সর্বনাশের আগেই শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে তাদের। বনাঞ্চল পুনরুদ্ধারে ‘গ্রিন লিগ্যাসি’ নামে একটি কার্যক্রম হাতে নেয় ইথিওপিয়া সরকার। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত সোমবার (২৯ জুলাই) সারাদেশের মানুষ সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযানে নামেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবিয়ি আহমেদ।  

তবে, এ কর্মসূচি যে জনগণের মধ্যে এত সাড়া ফেলবে, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভাবেননি। দিনশেষে দেখা যায়, মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬শ’ ৬০টি গাছ লাগিয়েছেন ইথিওপিয়ানরা। একে নতুন বিশ্বরেকর্ড বলে দাবি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

২০১৭ সালে ১২ ঘণ্টায় ৬ কোটি ৬০ লাখ গাছ লাগিয়ে রেকর্ড গড়েছিল ভারত। আপাতদৃষ্টিতে এ রেকর্ড ভাঙলেও ইথিওপিয়ার দৃষ্টি আরও বিস্তৃত। এ মৌসুমে ৪শ’ কোটি গাছ লাগানোর লক্ষ্য তাদের।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেয় স্কুলশিক্ষার্থীরাও।  ছবি: সংগৃহীত

শুষ্ক-রুক্ষ দেশ থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে ইথিওপিয়া। প্রশ্ন উঠেছে, তারা পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? 

২০১৮ সালে প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তথ্যমতে, এশিয়ার সবচেয়ে কম বনাঞ্চল সম্পন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে তৃতীয় অবস্থানে। এদেশের আগে আছে শুধু পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়া।  

গত চার দশকে বাংলাদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে পরিমাণ বন উজাড় হয়েছে তা উদ্বেগজনক। ২০১৮ সালের হিসাবে, বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১১ দশমিক ২ শতাংশ মাত্র। তবে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়াসহ সারাদেশেই বন উজাড়ের ধারা অব্যাহত থাকায় এর পরিমাণ যে এখন আরও কমেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পাহাড়ি বন কেটে তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি।  ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের শেষদিকে প্রকাশিত ‘গ্লোব্যাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক ২০১৯’ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আছে সাত নম্বরে।

এ পরিস্থিতির উন্নয়নে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মত পরিবেশবিদদের।  

সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় ইটিএইচ জুরিখের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর হারানো বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার করা গেলে তা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কার্বনের দুই-তৃতীংশই দূর করে দেবে। প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে প্রায় ১০ বিলিয়ন টন মনুষ্যসৃষ্ট কার্বন যুক্ত হচ্ছে। সেখানে, ওই সব পুনরুদ্ধার করা বনাঞ্চল ২০৫ বিলিয়ন টন কার্বন গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে।

সুতরাং, অপেক্ষা নয়, প্রয়োজন একটুখানি সদিচ্ছা! তাতে হয়তো আবারও সবুজে সবুজে ভরে উঠবে আমাদের প্রিয় এ দেশ, এ পৃথিবী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।