পরিবেশের এ কান্না আমরা শুনতে পাচ্ছি কি পাচ্ছি না- এ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে, শুনতে পেয়েছে ইথিওপিয়া।
বিজ্ঞানীদের মতে, কোনো দেশের মোট আয়তনের অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। তবে, ইথিওপিয়ায় বর্তমানে বনভূমির পরিমাণ মাত্র চার শতাংশেরও কম। অথচ ১৯ শতকের শেষ দিকেও এটি ছিল অন্তত ৩০ শতাংশ।
কয়েক বছরের ব্যবধানে এত বিপুল বৃক্ষনিধনের ফলও হাতেনাতে পেয়েছে আফ্রিকান দেশটি। খরা, ভূমিক্ষয়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ বৃদ্ধি, ফসলহানির মতো দুর্যোগ লেগেই আছে। আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। বনভূমি ধ্বংসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সেখানেও।
তবে, চূড়ান্ত সর্বনাশের আগেই শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে তাদের। বনাঞ্চল পুনরুদ্ধারে ‘গ্রিন লিগ্যাসি’ নামে একটি কার্যক্রম হাতে নেয় ইথিওপিয়া সরকার। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত সোমবার (২৯ জুলাই) সারাদেশের মানুষ সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযানে নামেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবিয়ি আহমেদ।
তবে, এ কর্মসূচি যে জনগণের মধ্যে এত সাড়া ফেলবে, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভাবেননি। দিনশেষে দেখা যায়, মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬শ’ ৬০টি গাছ লাগিয়েছেন ইথিওপিয়ানরা। একে নতুন বিশ্বরেকর্ড বলে দাবি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ সালে ১২ ঘণ্টায় ৬ কোটি ৬০ লাখ গাছ লাগিয়ে রেকর্ড গড়েছিল ভারত। আপাতদৃষ্টিতে এ রেকর্ড ভাঙলেও ইথিওপিয়ার দৃষ্টি আরও বিস্তৃত। এ মৌসুমে ৪শ’ কোটি গাছ লাগানোর লক্ষ্য তাদের।
শুষ্ক-রুক্ষ দেশ থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে ইথিওপিয়া। প্রশ্ন উঠেছে, তারা পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
২০১৮ সালে প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের তথ্যমতে, এশিয়ার সবচেয়ে কম বনাঞ্চল সম্পন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আছে তৃতীয় অবস্থানে। এদেশের আগে আছে শুধু পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়া।
গত চার দশকে বাংলাদেশে বনাঞ্চলের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে পরিমাণ বন উজাড় হয়েছে তা উদ্বেগজনক। ২০১৮ সালের হিসাবে, বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ১১ দশমিক ২ শতাংশ মাত্র। তবে, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় দেওয়াসহ সারাদেশেই বন উজাড়ের ধারা অব্যাহত থাকায় এর পরিমাণ যে এখন আরও কমেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত বছরের শেষদিকে প্রকাশিত ‘গ্লোব্যাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেস্ক ২০১৯’ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আছে সাত নম্বরে।
এ পরিস্থিতির উন্নয়নে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মত পরিবেশবিদদের।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় ইটিএইচ জুরিখের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর হারানো বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার করা গেলে তা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কার্বনের দুই-তৃতীংশই দূর করে দেবে। প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে প্রায় ১০ বিলিয়ন টন মনুষ্যসৃষ্ট কার্বন যুক্ত হচ্ছে। সেখানে, ওই সব পুনরুদ্ধার করা বনাঞ্চল ২০৫ বিলিয়ন টন কার্বন গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে।
সুতরাং, অপেক্ষা নয়, প্রয়োজন একটুখানি সদিচ্ছা! তাতে হয়তো আবারও সবুজে সবুজে ভরে উঠবে আমাদের প্রিয় এ দেশ, এ পৃথিবী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৯
একে