ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

উজানের পানিতে যৌবনে ফিরেছে তিস্তা

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৭ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
উজানের পানিতে যৌবনে ফিরেছে তিস্তা তিস্তায় পানি বৃদ্ধি। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: পানির অভাবে প্রায় মৃত তিস্তা নদী উজানের ঢলে আবার ফিরে পেয়েছে হারানো যৌবন। একদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে তিস্তার পানি প্রবাহ।

 

শনিবার (২৯ মে) সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।



জানা গেছে, ভারতের সিকিম উপত্যকা থেকে সৃষ্ট তিস্তা নদী ভারতে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উজানে ভারতের অংশে সেদেশের সরকার বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর পানি এক তরফাভাবে ব্যবহার করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে কোনো পানি থাকে না। মরুভূমিতে পরিণত হয় তিস্তা। আবার বর্ষাকালে অতিবর্ষণের ফলে ভারতের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা আর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা।

এ দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করে দীর্ঘ দিন ধরে উভয় দেশের মধ্যে বৈঠক হলেও সুফল মেলেনি। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে বাংলাদেশের মানুষ। এত কিছুর পরেও তিস্তা নদীর পানির কোনো সুফল পায়নি বাংলাদেশ।  

কিছু দিন আগেও তিস্তা নদী পায়ে হেঁটে পারি দিতো মানুষ। পানির অভাবে তিস্তার তীরবর্তী অঞ্চলের কৃষি চাষাবাদ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। জীববৈচিত্র্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। খরস্রোতা তিস্তা যৌবন হারিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায়।  



শুক্রবার সকালে ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ বাড়তে শুরু করে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। মরুর বুকে জমে ওঠে পানি। হারানো যৌবন ফিরে পায় খরস্রোতা তিস্তা। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলদেশ ভরাট হওয়া তিস্তা নদীর দুই পাড়ের চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চরাঞ্চলের বেশ কিছু ভুট্টা, বাদাম ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানান সবজির ফসল ডুবতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব ফসলের ক্ষতির শঙ্কা করছেন কৃষকরা।  

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে ৫১ দশমিক ৫-১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। যা দিয়ে সেচ প্রকল্প কোনো রকম সচল রাখা হয়েছে। শুক্রবার সকালে হঠাৎ পানি প্রবাহ বেড়ে যায় তিস্তায়। সকাল ৯টা ও দুপুর ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। পরে শনিবার (২৯ মে) সকালে পানি প্রবাহ বেড়ে ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার হয়েছে। যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে পানি প্রবাহ খুব বেশি বাড়ার কোনো সম্ভবনা নেই।  



গোবর্দ্ধন চরের চাষি তাহাজুল ইসলাম, আজিজার রহমান বলেন, ধূ ধূ বালুতে প্রতিদিন দূর থেকে পানি নিয়ে সেচ দিয়ে বাদাম ও মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছি। সেই ক্ষেত শুক্রবার সকালে হঠাৎ পানি বেড়ে ডুবে গেছে। শনিবার সকালে পানি আরও বেড়েছে। তবে পানি যদি শিগগিরই নেমে যায় তাহলে সামান্য কিছু হলেও ফসল ঘরে তোলা যাবে। না হলে পুরো ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাবে।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন পরে শুক্রবার হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। শনিবার সকালে তা আরো ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। উজানের ঢেউ ও স্থানীয় বৃষ্টিপাতে এমনটি হয়েছে। তবে বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।