ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

জলবায়ু ও পরিবেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি, আশ্রয়ণ প্রকল্পও পানিতে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি, আশ্রয়ণ প্রকল্পও পানিতে পাগলা নদী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আষাঢ়ের টানা বর্ষণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় পদ্মা আর মহানন্দায় পানি বেড়েই চলেছে। এর ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০ হাজার পরিবার।

পদ্মা ও মহানন্দার প্রভাবে পাগলা নদীতে পানি বাড়ায় সদ্য নির্মাণাধীন ৫০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ওই এলাকাগুলোতে প্রায় ১৮২ হেক্টর জমির ফসল সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো নিম্নাঞ্চল হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয় সূত্র।  

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৬৭ হেক্টর আউশ ধান আর ১২ হেক্টর শাক-সবজি, ৩ হেক্টর অনান্য ফসলসহ মোট ১৮২ হেক্টর জমিতে হওয়া ফসল ও শাকসবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাজাহানপুর, নারায়ণপুর, আলাতুলি, চড়বাগডাংগা আর শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর, পাকা ও উজিরপুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলা সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও চড়বাগডাংগা এবং শিবগঞ্জের দুর্লভপুর আর পাকা ইউনিয়ন।

শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তার ১০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ বিঘা জমির ধান ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে। এছাড়া আশপাশের ৫ গ্রামের কমপক্ষে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

পাকা এলাকার বাসিন্দা কৃষক সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, আমার এলাকায় পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বাড়ায় প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি।

উজিরপুর এলাকার সাইফ খান তোতা বাংলানিউজকে জানান, পদ্মায় পানি বাড়ায় উজিরপুরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩-৪ হাজার পরিবার।

পাগলা নদী

অপরদিকে, পাগলা নদী তীরবর্তী তর্ত্তিপুর এলাকায় নির্মাণাধীন ৫০টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

এছাড়াও নদীর বিপরীত দিকে সদ্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে বসবাসকারীরা আতঙ্কে রয়েছেন। পদ্মা ও মহানন্দার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে তাদের বাড়িগুলো ডুবে যাবার আশঙ্কা করছেন।

এদিকে, নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোমিন শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ায় গত ৪ দিন থেকে আমার এলাকার প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি।  

দেবিনগর এলাকার সাদিরুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, আমার এলাকায় মহানন্দার পানি বাড়ায় প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, শাজাহানপুর এলাকার আ. সালাম নামে এক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, তার ৩ বিঘা ধানি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।  এলাকাতে পানি বাড়ায় ৫-৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।  

এ ব্যাপারে পাউবো চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এখনো প্রধান ২ নদী মহানন্দা ও পদ্মার পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় ১০ সেন্টিমিটার ও মহানন্দায় ১১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বর্তমানে পদ্মায় ২২ দশমিক ৬ মিটার ও মহানন্দায় ২০ দশমিক ৪৫ মিটার পানি রয়েছে। বর্তমানে পদ্মায় ২২ দশমিক ৫০ মিটার ও মহানন্দায় ২১ দশমিক ৫০ মিটার বিপৎসীমা ধরা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে মহানন্দা নদী তার বিপৎসীমা অতিক্রম করতে এখনো অনেক সময় লাগবে। এছাড়াও কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।