ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

‘রিন নামকরা নারী’র সঙ্গে নারী ফুটবলারদের পদচারণায় মুখর ঢাকা লিট ফেস্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৩
‘রিন নামকরা নারী’র সঙ্গে নারী ফুটবলারদের পদচারণায় মুখর ঢাকা লিট ফেস্ট

ঢাকা: নাম মানুষের পরিচয়ের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে যে নামে নারীর বেড়ে ওঠা, যে নাম নিয়ে তার পরিচয় তৈরির চেষ্টা; সেই নামটাই কখন যে বিভিন্ন সম্পর্কগুলোর আড়ালে হারিয়ে যায় তা আমরা টেরও পাই না।

এজন্যই নারীকে যখন তার স্বামী, সন্তান কিংবা বাবার পরিচয়ে পরিচিত হতে দেখি, তা সমাজের অধিকাংশের কাছে খুব স্বাভাবিকই মনে হয়।
 
নিজের নাম ও পরিচয় সৃষ্টিতে নারীদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্য নিয়ে ২০২২- এর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যাত্রা শুরু করেছিল ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড- এর অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ড রিন- এর বিশেষ প্ল্যাটফর্ম ‘রিন নামকরা নারী’। রিন- এর এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারদর্শী নারীদের দক্ষতা ও তাদের সংগ্রামের গল্পগুলো সবার সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যেন সবাই তাকে তার নিজের পরিচয়েই চিনতে পারে।
 
‘রিন নামকরা নারী’ প্ল্যাটফর্ম- এর কয়েকজন প্রতিভাবান নারীদের নাম ও উদ্যোগকে আরও একটু উজ্জ্বল করতে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’- এ থাকছে ‘রিন নামকরা নারী’ স্টল। চার দিনব্যাপী এ লিট ফেস্টে দেশ-বিদেশের নামকরা লেখক, সাহিত্যিক ও অংশগ্রহণকারীদের সামনে দেশের নামকরা নারীরা তাদের উদ্যোগকে তুলে ধরছেন ‘রিন নামকরা স্টল’- এর মাধ্যমে, তাদের উদ্যোগ নিয়ে সরাসরি পৌঁছাতে পারছেন অনেক মানুষের কাছে। কেউ এসেছেন তাদের গাছ নিয়ে, কেউ পাখির বাসা সাজানোর জিনিস নিয়ে, কেউ নিজের ইম্পোর্টেড কসমেটিকস নিয়ে আবার কেউ নিজস্ব বুটিকের জামা নিয়ে।

স্টলের মাধ্যমে নিজের উদ্যোগকে হাজার হাজার মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অনলাইন নার্সারি ব্যবসায়ী জেরিন তাসনীম চৌধুরী বলেন, ‘রিন- এর এই প্ল্যাটফর্ম আমাদের নারীদের জন্য অনেক জরুরি। কারণ, সবাই তো আমাদের নিজের নামে চেনে না। কারো সন্তান, কারো স্ত্রী এভাবেই আমাদের পরিচয়। তাই এ প্ল্যাটফর্ম নারীদের জন্য খুবই দরকার আমার মনে হয়। এখন দেখা যায় আমার অনলাইন পেজ আর রিন- এর এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমাকে আরও অনেক মানুষ আমার নিজের নামেই চিনছে। রিন- এর মাধ্যমে এখানে আসতে পারাটা আমার জন্য একটা আলাদা স্বীকৃতি। ’

ফেস্টে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা ‘রিন নামকরা নারী’- এর স্টল ঘুরে দেখেন এবং নারীদের জন্য তৈরি এই অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানান।  

এছাড়াও নিজের পরিচয় তৈরি করতে, পছন্দের ক্যারিয়ার বেছে নিতে সমাজে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় নারীকে। প্রতিকূলতা পেরিয়ে সফলভাবে নিজের নাম তৈরির এই অভিজ্ঞতাগুলো সবার সঙ্গে করতে ঢাকা লিট ফেস্টের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গত ৬ জানুয়ারি ‘রিন নামকরা নারী’ আয়োজন করেছিল ‘We Are the Champions’-শীর্ষক একটি প্যানেল।

এ প্যানেলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের নারীরা। এ আলোচনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের গোলকিপার ইতি রানী বলেন, ‘নিজের একটা পরিচয় তো সবাই চায়। হয়তো সবাই সেই পরিচয় তৈরি করতে পারে না কিন্তু চাওয়াটা সবারই থাকে। আমারও ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল নিজের একটা পরিচয় তৈরি করার। স্কুলে থাকতে যখন দেখতাম সাবিনা খাতুন, রুপনা চাকমাদের সবাই তাদের খেলার জন্য এক নামে চেনে তখন থেকে আমারও ইচ্ছে ছিল খেলোয়াড় হওয়ার। চাইতাম সবাই আমাকেও চিনুক। মেয়েদের আমাদের সমাজ কীভাবে দেখতো বা এখন কীভাবে দেখে এটা নিয়ে আলাদা করে আসলে বলার কিছু নেই। মেয়ে মানেই হাজারও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া। আগের চেয়ে আমাদের প্রতিবন্ধকতা হয়তো অনেকটা কমেছে কিন্তু পুরোপুরি এখনও শেষ হয়নি। আমিও অন্যদের মতোই সবকিছুর সঙ্গে লড়াই করেই আজ এখানে।  

তিনি বলেন, ছোট থাকতে সবাই আমাকে ‘মনোজিতে-র’ ছোট মেয়ে হিসেবে চিনতো। এখন সবাই আমার বাবা'কে ‘ইতি-র বাবা’ বলে চেনে। আমার পরিবারও খুব গর্ব করে বলে, এটা আমার মেয়ে ইতি। আমি চাই আমাদের এ গল্প অন্য মেয়েদেরও উৎসাহিত করুক নিজেদের পরিচয় তৈরি করার জন্য ‘

এছাড়াও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার শামছুন্নাহার জুনিয়র বলেন, ‘আমরা যখন সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে এসেছি  তখন বুঝেছি দেশের মানুষ ফুটবলকে কতটা ভালোবাসে, আমাদেরকে কতটা ভালোবাসে। শুরুটা একদমই এমন ছিল না। অনেক পথ আসার পর এখন সবাই আমাদের এই গল্পগুলো শুনছে। স্কুলে যখন মজার ছলেই ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম তখনও এতদূর আসার চিন্তা মাথায় ছিল না। যখন একটু বড় হলাম তখন পরিবার থেকে চাইতো না ফুটবল খেলি কারণ তারা ভাবতো এটা মেয়েদের খেলা না। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতে যেতাম। এ খেলার জন্য অনেক মার খেয়েছি বাসায়, অনেক বকাও খেয়েছি। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি ভালো করতে থাকি আর ২০১৭ সালে ন্যাশনাল টিমে ডাক পাই। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাই নাই। পরিবার এতে মানা করতো কারণ সমাজের অন্যদের থেকে অনেক কথা শুনতে হতো তাদের। কিন্তু আমি তাদের বুঝাতাম। আর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এখন বাসায় গেলে এলাকার সবাই ভিড় জমায় বাসায়। খুবই ভালো লাগে যখন দেখি সবাই আমাকে আমার নামে চেনে, আমার খেলা দেখে। ’

আলোচনায় অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, অ্যাসিটেন্ট কোচ মাহমুদা আক্তার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মো. আবু নাঈম সোহাগ। খেলোয়াড়দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রূপনা চাকমা, শামছুন্নাহার জুনিয়র, সোহাগী কিস্কু, সাথী বিশ্বাস, স্বপ্না রানী ও ইতি রানী। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাভিম শামা রিজওয়ানা।

নারীর নামকে তার পরিচয়ের মতোই উজ্জ্বল রাখতে রিন- এর এই প্রচেষ্টা। প্রতিটি নারীই যেন নিজের কাজের মাধ্যমে নিজের পরিচয় তৈরি করতে পারে এবং সবার কাছে অন্য কারো নয় বরং নিজের নামেই পরিচিত হতে পারে এই লক্ষ্য নিয়েই ভবিষ্যতে আরও কাজ করার আশা রাখে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রিন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।