ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

ফেসবুক-টুইটার থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
ফেসবুক-টুইটার থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায় সম্ভব

ঢাকা: গুগল, ফেসবুক, টুইটারসহ বড় ই-আন্তর্জাতিক কোম্পানি আয়কর দেয় না। বাংলাদেশে এ সব প্রতিষ্ঠানের অফিস না থাকায় তাদের কাছে থেকে রাজস্বও আদায় করা যাচ্ছে না।

এ সব প্রতিষ্ঠানের কাছে পুরোপুরি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হলে ২০২৬ সাল নাগাদ বাড়তি রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে তা আসবে বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) ‘ট্যাক্সিং দ্যা ডিজিটাল ইকোনোমি: ট্রেড-অবস অঅ্যান্ড অপরচুনিটি’ শীর্ষক সেমিনারে সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান মূল প্রবন্ধে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। আমাদের অর্থনীতির বড় অংশ ডিজিটাল অর্থনীতি হবে। এই অবস্থায় অভ্যন্তরীণ সম্পদের মাধ্যমে কীভাবে রাজস্ব বাড়াতে পারি, এ বিষয়ে আমাদের পথ নকসা করতে হবে। এটা বাস্তবতা, বরং আরও আগে করার প্রয়োজন ছিল।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মসূচি অনুযায়ী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৪ শতাংশ করতে হবে। এর জন্য অতিরিক্ত দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে। বাড়তি এ রাজস্ব আদায় করতে হলে গুগল, ফেসবুক, টুইটারের মতো প্রতিষ্ঠানকে রাজস্বের অধীনে আনতে হবে। দেশের বড় ই-কোম্পানিগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের নীতি অনুসরণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। তিনি বলেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশে হলে শতভাগ ডিজিটাইজড করে। শতভাগ পেপারলেস কার্যক্রম হবে। রাজস্ব আদায় থেকে প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যন্ত সব কিছু অটোমেশন হবে। এর ফলে প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগিয়ে প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরি হবে। রাজস্ব আদায়েও কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে। গুগল, ফেসবুক, টুইটারের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি রাজস্বের আওতায় আনা না গেলেও আগামী আনা যাবে।

তিনি আরও বলেন, এক সময় ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে মানুষ ঠাট্টা করতো। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবতা। দেশ যখন অটোমেশন হবে, প্রযুক্তি নির্ভর হবে। এতে রাজস্ব খাতের দক্ষতা বাড়বে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ডিজিটাল ইকোনোমিক আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও কর অনুপাত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক বড় বড় কোম্পানি, যাদের উপস্থিতি আছে কিন্তু রাজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে নেই। ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, এমন অবস্থান থেকে এ সব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত যে প্রস্তুতি দরকার সেটাও নিতে হবে।

সেমিনারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দক্ষতার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিশেষ অতিথি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আহসান আদিলুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বলছে, গুগল, ফেসবুকের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে বিলিয়নের বেশি টাকা নিয়ে গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে ১৫৫ কোটি টাকা। এসব অর্থের জন্য তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় জরুরি।

ক্রসবর্ডার জায়ান্ট কোম্পানিগুলোকে ট্যাক্সের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস’র (বেসিস) পরিচালক হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম। তিনি বলেন, বহুজাতিক এ সব কোম্পানি এদেশ থেকে ব্যবসা করছে, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করছে। এর বিপরীতে তারা কিছু ভ্যাট দিলেও পুরো রাজস্ব দিচ্ছে না। ফলে তাদের ট্যাক্সের আওতায় আনা জরুরি। বছরের পর বছর ট্যাক্স অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। এখন সময় এসেছে যৌক্তিকিকরণ। যে সব প্রতিষ্ঠানের কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার প্রয়োজন, এখনই তা ভাবতে হবে।  

উদ্যোক্তা হুমায়ুন কবির বলেন, যারা ট্যাক্স দেন এনবিআর তাদেরই ধরে। যারা ট্যাক্স দেন না তাদের এনবিআর ধরে না। কারণ হলো তাদের সাথে কোনো না কোনোভাবে আঁতাত আছে। এসবের শেষ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।