ঢাকা, রবিবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ সফর ১৪৪৬

কর্পোরেট কর্নার

বিকাশের এক যুগ

আর্থিক লেনদেনে কোটি মানুষের জীবনের অনুষঙ্গ এখন বিকাশ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২৩
আর্থিক লেনদেনে কোটি মানুষের জীবনের অনুষঙ্গ এখন বিকাশ

ঢাকা: এক যুগ আগে কাউকে টাকা পাঠানো বা পরিষেবার বিল পরিশোধের জন্য লাইনে দাঁড়ানোর বিকল্প ছিল না। তখন কী কেউ ভেবেছিলেন, ঘরে বসে সুবিধাজনক সময়ে এসব আর্থিক সেবা পাওয়া যাবে।

আবার ব্যাংকে টাকা জমানো বা ব্যাংক থেকে তাৎক্ষণিক ছোট অঙ্কের ঋণ মিলবে মোবাইল ফোনেই। এখন লাইনের পরিবর্তে নিজের সুবিধাজনক সময়ে ঘরে বসেই মিলছে সব ধরনের ডিজিটাল আর্থিক সেবা। এক যুগ আগে চালু হওয়া মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) বিকাশ হয়ে উঠেছে এসব সেবা গ্রহণের প্রধান মাধ্যম। ফলে ছোট আর্থিক লেনদেন ও সেবা নিতে ভোগান্তি এখন ইতিহাস। আর্থিক সেবা চলে এসেছে সব শ্রেণির মানুষের হাতের মুঠোয়, যা জীবন সহজ করেছে। ডিজিটাল লেনদেনে নির্ভরতা বেড়েছে সব শ্রেণির মানুষের।  

বিকাশ এখন শুধু টাকা স্থানান্তর বা বিল পরিশোধের মাধ্যম না। কেনাকাটা, সঞ্চয়, বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোসহ আরও অসংখ্য সেবা যুক্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক সেবার মাধ্যম হয়ে উঠেছে বিকাশ। আর্থিক লেনদেনে জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। আয়োজনে বা প্রয়োজনে বিকাশ এখন প্রতিটি পরিবারের সদস্য। আরও অনেক প্রতিষ্ঠান একই ধরনের সেবা চালু করলেও মোবাইলে আর্থিক সেবা মানেই ‘বিকাশ করা’ এখন সুপরিচিত।  

বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে মোবাইল আর্থিক সেবা সহজলভ্য করতে এক যুগ ধরে ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট নিয়ে  বিকাশ তৈরি করেছে সবচেয়ে শক্তিশালী এজেন্ট নেটওয়ার্ক। এমএফএস সেবা দিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এ এজেন্টরা তাদের এলাকার নির্ভরযোগ্য মানুষ হয়ে উঠেছেন। ‘হিউম্যান এটিএম’ খ্যাত এজেন্টরা কেবল গ্রাহকদের নয়, এ ব্যবসার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের উন্নয়নেও সফল হয়েছেন। প্রশিক্ষিত বিকাশ এজেন্টদের মাধ্যমেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে অন্যান্য এমএফএস প্রতিষ্ঠানের সেবাও পৌঁছেছে। দেশের সাত কোটি গ্রাহকের প্রতিদিনের ডিজিটাল লেনদেন সঙ্গী হয়ে ওঠার পেছনে ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ, সব ধরনের ফোনে বিকাশ সেবা পাওয়া, সেবার মান, ধারাবাহিক বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন।  

বিকাশের এক যুগের এ পথচলা নিয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, ১২ বছরের পথচলায় সাত কোটি ভেরিফাইড কাস্টমারের যে বিশাল পরিবার সৃষ্টি হয়েছে, এরাই নির্ভরযোগ্য সহযোগী হিসেবে বিকাশের ওপরে তাদের আস্থা রেখে সেবাটি ব্যবহার করছেন। এ অর্জনের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা ও সরকারের দিকনির্দেশনা, যার পরিপ্রেক্ষিতে এ অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজটা সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের একটা যথার্থ সহযোগী হিসেবে বিকাশ কাজটা করতে পেরে পুরো দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা মনে করি এ সাফল্য আজকে শুধুমাত্র বিকাশের না এটা পুরো বাংলাদেশের, প্রতিটি বাংলাদেশি এ অর্জনের পেছনে ভূমিকা রেখেছেন।

অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন ২০১৪ সাল থেকে বিকাশের সেবা ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, আগে ছেলেকে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাংকে বা ডাক অফিসে গিয়ে লাইন দিতে হতো। পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল দিতেও আলাদা আলাদা লাইন দেওয়া লাগত। মাসে একাধিকবার মোবাইল রিচার্জ করতে এজেন্টের কাছে যেতে হতো। এজন্য স্কুল থেকে অনেক সময় ছুটিও নিতে হতো। সেই দিন আর নেই। অ্যাপ দিয়েই ব্যাংক থেকে বিকাশে টাকা নিয়ে আসি। ঘরে বসেই সব বিল দিয়ে দিই। বিকাশ দিয়ে নিজের ও স্ত্রীর মোবাইল রিচার্জ করি। মাঝে মধ্যে নাতি-নাতনিদের জন্য বিকাশেই টাকা পাঠাই। শেষ বয়সে এসে জীবনটা সহজ করে দিয়েছে বিকাশ।

বিকাশের গ্রাহকদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি নারী। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুবর্ণা মোস্তফা বলেন, বিকাশ এখন আমার দৈনন্দিন সব লেনদেন এত সহজ করে দিয়েছে যে আমার সময় বাঁচিয়ে নিজের মতো করে অন্য কাজেও লাগাতে পারি। বিকাশ ছাড়া এসব সেবা নিতে সময় নষ্ট হতো অনেক।  

এদিকে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নোবেল বলেন, আমার দৈনন্দিন প্রায় সব লেনদেনই বিকাশে হয়, বিকাশই আমার কাছে ক্যাশ টাকা।  

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে ২০১১ সালের ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত এমএফএস হিসেবে বিকাশ যাত্রা শুরু করে। এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর। নিরাপদে ও কম সময়ে নতুন নতুন ডিজিটাল আর্থিক সেবা দিয়ে এক যুগে মানুষের দৈনন্দিন লেনদেনে স্বাধীনতা ও সক্ষমতা এনে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।  

ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা এবং সীমিত ব্যাংকিং সুবিধায় থাকা জনগোষ্ঠীকে গত এক যুগে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নিয়ে এসেছে বিকাশ। প্রত্যন্ত গ্রাম হোক বা ছোট্ট গ্রাম্য বাজার কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র, বিকাশের মাধ্যমেই মূলধারার অর্থনৈতিক সেবায় যুক্ত হয়েছেন গ্রাহকরা। বিকাশের নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে ৪৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ফলে বিকাশ থেকে ব্যাংক বা ব্যাংক থেকে বিকাশ লেনদেন এখন গ্রাহকের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা আমূল বদলে দিয়েছে। এক সময় দোকানে গিয়ে মোবাইল রিচার্জ করাই ছিল একমাত্র মাধ্যম, এক যুগের ব্যবধানে এখন বাংলাদেশে সব ধরনের মোবাইল রিচার্জে বিকাশ হয়ে উঠেছে মানুষের প্রথম পছন্দের মাধ্যম।  

ছোট অঙ্কের বিল তবে পরিশোধে বড় ভোগান্তি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ সব ধরনের বিল পরিশোধ সাধারণের জন্য একদম সহজ করেছে বিকাশ। পাশাপাশি সব সরকারি সেবার ফি দেওয়াও চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত উপবৃত্তি, প্রধানমন্ত্রীর করোনাকালীন আর্থিক সহায়তা ভাতা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় খামারিদের প্রণোদনা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ভাতা এবং সেই সঙ্গে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকের বেতনসহ সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি উপকারভোগীর কাছে ভাতা ও প্রণোদনা পৌঁছে দিয়েছে বিকাশ। সরকারের বেতন-ভাতা-সহায়তা বিতরণের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ।  

বিকাশ এখন শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ না, বিদেশে বসেও বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে হিসাব খোলা যাচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৯০টির বেশি দেশ থেকে ৮০টির বেশি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান হয়ে দেশের ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয় এ রেমিট্যান্স। ২০২২ সালে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স আসে বিকাশে। ২০২৩ এর প্রথম ছয় মাসেই এ রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছাড়িয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা।

বিকাশের মাধ্যমে সঞ্চয়ী হিসাব খুলেছেন আফসানা বেগম। তিনি বলেন, প্রতি মাসে বাসার খরচের টাকা থেকে কিছুটা বাঁচিয়ে আগে জমা করতাম। এখন বিকাশের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা করছি। ফলে তিন বছর পর মুনাফাসহ ভালো পরিমাণ টাকা পাব। তখন ছেলের শিক্ষার পেছনে তা খরচ করা যাবে। এটা হবে পরিবারে আমার প্রথম আর্থিক সহায়তা। আমি সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছি। আফসানার মতো ১১ লাখ গ্রাহক বিকাশ অ্যাপ থেকে মাসিক সঞ্চয় সেবা নিয়েছেন। ক্ষুদ্র সঞ্চয় করার সব ভোগান্তি দূর হয়েছে এ সেবার মাধ্যমে।  

শুধু সঞ্চয় নয়, বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ঋণও মিলছে। এজন্য সিটি ব্যাংক ও বিকাশ যৌথভাবে ২০২১ সালে দেশের প্রথম ডিজিটাল ন্যানো লোন চালু করে। এখন বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলছে। এখন পর্যন্ত গ্রাহকরা ২৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন, যার মধ্যে ২৩০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ হয়ে গেছে।  

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেছবাহ উদ্দিন বলেন, কাকে কখন টাকা পাঠাতে কোথায় যেতে হবে, কেনাকাটার পেমেন্ট কীভাবে হবে, ট্রেনের টিকিট কাটতে স্টেশনে যেতে হবে, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে যেতে হবে, ঘরের বিল পরিশোধ করতে হবে, মাসিক সঞ্চয়ের কিস্তি জমা দিতে হবে- এসব কোনো লেনদেন নিয়েই এখন আর ভাবতে হয় না। বিপদেও বিকাশেই থাকে ভরসা। বিকাশ যুগে এসে ডিজিটাল লেনদেন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় ভরসার প্রতীক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২৩
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।