মধ্যপ্রাচ্যে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয় শাবান থেকে
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় উপসাগরীয় দেশগুলো থাকে আনাবিলের আনন্দে ভরপুর। পরিবারের ছোট-বড় সবার মুখে থাকে দ্বীপ্তিমান হাসি।
শাবানের শেষভাগ থেকেই শুরু হয় রমজানের প্রস্তুতি। তাই পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে বিশেষ আয়োজনে মেতে ওঠে সবাই। শাবানের শেষ দশকে বিনোদনকেন্দ্র বা সাগর-নদীর তীর কিংবা কোনো সবুজ-শ্যামল গ্রামে আয়োজন করা হয় তা। ‘শাবানিয়া’ নামে পরিচিত এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রোযার মাসকে সাদরে বরণ করা হয়। বিদায় জানানো হয় আহারপর্ব। তাছাড়া রাস্তা-ঘাট ও সড়কগুলোতে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে টাঙানো হয় বড় বড় ব্যানার।
ফিলিস্তিনের মসজিদগুলোতে ইফতার-সাহরির ব্যবস্থা
ইসরাইলের অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন থাকলেও রমজানে ফিলিস্তিনের মসজিদ ও পথ-প্রান্তরে ইফতার, সাহরি ও বিশেষ খাবার হালুয়ার ব্যবস্থা থাকে। এতে অংশগ্রহণ করে নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মুসলিমরা। কোরআন তেলাওয়াত ও রাতব্যাপী সালাত আদায়ের এক মায়াবী পরিবেশ যুগ যুগ ধরে সেখানে বিরাজমান।
সিরিয়ায় রমজানে নতুন সাজ
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া রমজানে সেজে ওঠে নতুন সাজে। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে মুসলিমদের রমজানের শুভেচ্ছা জানানো হয়। নানা বর্ণের আলোর প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয় ও বাড়ির ফটক ও পথ-ঘাট। কিশোর-কিশোরীরা মেতে ওঠে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে। নানা রকম খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও হালুয়া যাতীয় বিশেষ খাবারের প্রতি এমনিতেই সবার চাহিদা। স্বাদে-গুণে অনন্য এ খাবারের প্রতি সবার আগ্রহও বেড়ে যায় এ মাসে।
মিশরে বিরাজকরে উৎসবমুখর পরিবেশ
রমজান মাস বরণে মিশরে বিরাজকরে উৎসবমুখর পরিবেশ। রমজানের চাঁদ দেখা গেলে শিশু-কিশোর এমনকি বড়রাও ফানুস হাতে নিয়ে গাইতে থাকে রমজানের গান। সুন্দর জামা পরে করে একে অপরের সঙ্গে দেখা করে। বলতে গেলে, পুরো রমজানব্যাপী ঈদের আমেজ বিরাজ করে তাদের মাঝে।
আলজেরিয়ায় আগেই বাড়ি-ঘর রং করা হয়
আলজেরিয়াতে রমজানের আসার আগেই নতুনভাবে রং করা হয় বাড়ি-ঘর। পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন রাখা ঘরের আঙিনা। শাবানের শেষ দিন সন্ধায় চাঁদের সন্ধানে থাকে সবাই। অনেক স্থানে এ সময় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করা হয়। অনেকে রমজান শুরু হলে ইশার নামাজ আদায় করে পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখতে যায়। অনেক পরিবারে বড়দের থেকে শুরু করে ছোটরা পালাক্রমে ইফতারের আয়োজন করে। এতে তৈরি হয় পারিবারিক বন্ধন ও ভালোবাসা। সবার বিরাজ করে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য।
মৌরিতানিয়ায় কোরআন খতমের জন্য সমবেত হয় সবাই
মৌরিতানিয়ার মুসলিমরা রমজানের প্রতিদিন পবিত্র কোরআন খতমের জন্য সমবেত হয়। প্রত্যেক এলাকায় তৈরি হয় প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। তাছাড়া পুরুষরা রমজানের আগেই কেটে ফেলে মাথার চুল। রমজানের প্রথম দিন থেকে নতুনভাবে চুল ওঠা শুরু করে। নিজেদের সন্তানদের বিয়ে দেয় রমজান মাসে। এ সময়ে দাম্পত্যজীবন শুরু করা সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে হয় তাদের কাছে।
চাঁদের ঘোষণা এলে তুর্কিরা আনন্দে মেতে ওঠে
তুরষ্কে রমজানের চাঁদের ঘোষণা এলে ঘরে ঘরে তৈরি হয় আনন্দরোল। আর ঘরে প্রবীণ বয়সের কেউ থাকলে উৎসবের মাত্রাও হয় খুব বেশি। মেশকের সুবাসে ভরে ওঠে চারিদিক। বাড়ি-ঘর, বাগ-বাগিচা ও পথে-ঘাটে ছেটানো হয় গোলাপের পানি। ফুলের সুঘ্রাণে মেতে ওঠে চারপাশ।
মরক্কোয় একে অপরকে ‘আওশির মাবরুকাহ’ জানায়
রমজানের চাঁদ দেখা গেলেই মরক্কোর সবাই একে অপরকে ‘আওশির মাবরুকাহ’ বলে শুভেচ্ছা দিতে থাকে। রমজানের প্রথমদিন সাত বার বাঁশি বাজিয়ে জানান দেয় সাহরির সময়। রমজানের প্রত্যেক দশক যেন বরকতময় হয় তাই আওশির মাবরুকাহ বলা হয়।
লাইবেরিয়ায় গান-বাজনা পরিহার করে সবাই
লাইবেরিয়ায় রমজান মাসে মিউজিকেল গান-বাজনা শোনা পরিহার করে সবাই। গান শুনলে মনে করা হয় সে রোযা রাখেনি। রমজানের আগমনে বিশেষ সুরে গান গায় পুরুষরা। তা শুনে সবার মাঝে তৈরি হয় রমজানের ভাবাবেগ।
পাকিস্তানের প্রতি ঘরে আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকে
রমজান মাসে পাকিস্তানের প্রতিটি ঘরেই থাকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা। আর প্রথমবার রোযা পালনকারীদের জন্য থাকে বিশেষ সম্মননা। বর-কনের মতো সমাদর করে সাদা কাপড় পরানো হয় তাদের।
ইন্দোনেশিয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি দেওয়া হয়
রমজানের প্রথম সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্বিবিদ্যালয়গুলো ছুটি দেওয়া হয়। আর বিভিন্ন সংস্থা ছাত্রদের নিয়ে আয়োজন করে নানা অনুষ্ঠান। রমজানের গুরুত্ববোধ তৈরিতে অনেক প্রোগ্রাম করা হয়। অসহায় ও দারিদ্রদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সেবামূলক এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় ছাত্রদের মাধ্যমে।
মালেশিয়ার ঘরগুলোয় থাকে বিশেষ আয়োজন
রমজানে মালেশিয়ার ঘরগুলোয় থাকে বিশেষ আয়োজন। ইফতার ও সাহরির সময় ঘুরে ঘুরে কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকে ঘরের নারীরা। পল্লিঅঞ্চলগুলোতে ইফতার করা হয় সম্মিলিতভাবে।
সুদানে রোজাদারদের বরণ করতে মানুষ অপেক্ষা করেন
সুদানে মসজিদ ও পথে-প্রাঙ্গণে থাকে ইফতারের ব্যবস্থাপনা। দূরের লোকরা সেখানে গিয়ে ইফতার সম্পন্ন করে। আবার যারা ইফতার তৈরি করতে পারেনি, তারাও সেখানে এসে ইফতার করে। সূর্যাস্তের আগ থেকেই মানুষকে ইফতারের জন্য ডাকা হয়। রোজাদারদের বরণ করতে পথে-ঘাটে থাকে অনেক দল।
ইরানের ধনাঢ্যরা দারিদ্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসে
রমজান মাসে ইরানের ধনাঢ্য বক্তিরা দারিদ্রদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। সবার জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় শহরের বড় বড় মসজিদগুলোতে। শুধু তেহরানের নগরজুড়ে একশটিরও বেশি মসজিদে থাকে ইফতারের ব্যবস্থা। সমাজকল্যাণ প্রকল্পের আওতায় তা বাস্তবায়ন করা হয়। ‘রহমানের অতিথিদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা’ লেখা থাকে মূল ফটকে।
রমজানবিষয়ক যেকোনো ধরনের লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
লেখক: গ্রন্থাকার, অনুবাদক ও আলেম
বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৯
এমএমইউ