হাজার বছরের ঐতিহ্য তারাবির জামাতে অংশ নিতে পারছে না মুসলিমরা। মিশ্র সংস্কৃতির দেশ মালয়েশিয়াতেও নেই রমজানের উৎসবমুখর পরিবেশ।
মালয়েশিয়ার সরকারপ্রধান তানশ্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিন চতুর্থবারের মতো লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়েছেন। গত ২৪ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে মালয়েশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং আগামী ১২ মে পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করেন। পাশাপাশি শর্তসাপেক্ষে কিছু শিথিলতার কথাও বলেন তিনি।
মালয়েশিয়ানরা ঐতিহ্যগতভাবে খানিকটা বোহেমিয়ান জাতি। ঘোরাফেরা, খাওয়া-দাওয়া আর কেনাকাটায় অভ্যস্ত তারা। এদের সাপ্তাহিক বাজারগুলোতে দেখা যায় বিভিন্ন প্রকারের খাবারের সমাহার। তৈরি খাবারের প্রতি তাদের বিশেষ আসক্তি রয়েছে।
রমজানে খাবারের বাজার আরো বিস্তৃত হয়। রমজানে ‘বাজার রমাদান’ নামে পৃথক বাজার বসে। বেশির ভাগ মালয়েশিয়ান দিন শেষে রোজগারের সমুদয় অর্থ ইফতারির বাজারে খরচ করে ফাঁকা মাঠে ইফতারিতে বসে যায় কোনো দ্বিধা ছাড়া। রমজানজুড়ে মসজিদের কাছাকাছি ফাঁকা মাঠের চতুর্দিকে চলে ‘বাজার রমজান’ আর সন্ধ্যা হলেই মাঠজুড়ে ইফতারির সে এক নয়নাভিরাম অসাধারণ দৃশ্য। কিন্তু এবার মালয়েশিয়ার রমজানের দৃশ্যটি একেবারেই ভিন্ন।
আমুদে জাতি হলেও মালয়েশিয়ানরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তারা ইফতারের জন্য কোনো ধরনের জমায়েতের চেষ্টা করছে না। কষ্ট হলেও ইফতার ও তারাবির নামাজ বাসায় আদায় করছে। এক মালয়েশিয়ান সহকর্মী মিস নুরুল শাহিদার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম। এবারের রমজান পরিস্থিতি নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একদিকে তারা যেমন অন্যান্যবারের মতো রমজান উপভোগ করতে না পেরে কষ্টে আছেন, অন্যদিকে তেমন অবসরে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতে পেরে তৃপ্ত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আগের রমজানগুলোয় সারা দিন অফিস করার ঝামেলায় ইবাদতে মনোযোগী হওয়া কষ্টকর ছিল। এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে সারা দিন বাসায় থাকতে হয়, সাহরি ও ইফতারি সাদামাটা হলেও ইবাদতে বেশি সময় দেওয়া যাচ্ছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবেই দিন কাটছে। শাহিদা মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সরকার তার অঙ্গীকার রক্ষা করে প্রত্যেককে ছয় শ রিংগিত অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশি প্রবাসীরাও এবারের রমজানে ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিচ্ছে। সাধারণত বিদেশের মাটিতে থাকা বাঙালিরা কষ্ট করে হলেও একত্রে তারাবির নামাজ পড়া, একটু আড্ডা দেওয়া আর সবাই মিলে ইফতারি করার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার তা হয়ে উঠছে না। ইফতার, তারাবি ও সাহরির সময় আমাদের বুক ভেঙে আসে। বেশি খারাপ লাগে তাদের জন্য যারা প্রবাসে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। বহু শ্রমিক খাবারের অর্থ জোগাড় করতে পারছে না। তারা না পারছে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে, না পারছে দেশে ফিরে যেতে। আল্লাহ এই দুঃসময় থেকে আমাদের মুক্তি দিন। আমিন।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি উতারা মালয়েশিয়া, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২০
এইচএডি/