তার বিষণ্ণ মুখ কতবার দেখা গেছে-হিসাব রাখা একটু কঠিন। এমনিতেই স্বভাবে স্থির।
সংবাদ সম্মেলনে ঠিকঠাক কুলিয়ে উঠতে পারেন না। দল জেতে না। সবচেয়ে আপন ব্যাটটাও পর হয়ে গিয়েছিল ভীষণ। মুমিনুল এরপর বললেন, ‘দয়া করে আর না...’। নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেন, তবুও যেন তাকে ছাড়লো না অদৃশ্য চাপ। জায়গা হারিয়ে ফেললেন একাদশ থেকেও।
মন ভেঙে যাওয়া মুমিনুলের দেখা মিললো বহুবার, অনেক জায়গায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে, ভারতে, কক্সবাজারে, সিলেটে, সাভারে, চট্টগ্রামে...‘এ’ দলে, এনসিএলে ও অন্যান্য জায়গায়। মুমিনুলের বিষণ্ণ মুখ আপনি দেখেছেন এসব জায়গায়। সেই মুমিনুলই সৌরভ ছড়ালেন মিরপুরে এসে।
অপূর্ণতা থাকলো, আফসোসও। তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি। দলকেও দেওয়া হয়নি পথ দেখানো সংগ্রহ। তবুও মন ভাঙা মুমিনুল তার ডাকনামের মতো সৌরভই ছড়ালেন মিরপুরে। বাকিদের যখন বড্ড তাড়াহুড়ো, লড়াই, সংগ্রাম; মুমিনুল তখন স্থির, সচেতন।
মিরপুরে মধ্য বিকেলের একটি ঘটনাই যেমন। নুরুল হাসান সোহান কেবলই এসেছেন ক্রিজে। তার বুটে মাটি জমে ছিল। পাঁচ ঘণ্টা ক্রিজে থাকা মুমিনুল গেলেন সেসব ছাড়াতে। মুমিনুল এমনই নির্লিপ্ত। যেমন গত কয়েক মাস ছিল তার ব্যাটও।
০, ২৯, ০, ৪, ১৭, ১৫, ৬; মুমিনুলের রান যথাক্রমে ছিল এমন। ২৪৯ মিনিট। ১৫৭ বল, ১২ চার, ১ ছক্কা আর ৮৪ রানের ইনিংসে মুমিনুল ফিরে পেলেন নিজেকে। ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ফিরেছেন অশ্বিনের ক্যারম বলে। ছেড়ে দিতে যাওয়া বল ছুঁয়ে গেছে মুমিনুলের গ্লাভস। এরপর মাথা নিচু করে সোজা হাঁটা ধরেন সাজঘরে।
বছরের প্রথম দিনে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন, দলকে জিতিয়েছেনও সেই ম্যাচে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ম্যাচটিতে দলের বড় ভারও ছিল তার কাঁধে। এখন মুমিনুল অধিনায়ক নন, দলে থেকে বাদ পড়ে ফিরে আসা ক্রিকেটার।
এক ক্যালেন্ডার বদলে দিতে পারে কত কিছু— মুমিনুল কি সাজঘরে ফিরতে ফিরতে ভাবেন এমন? তবে এতটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন—তার নির্লিপ্ততায়, রান করার ধরনে, শটে থাকা টাইমিংয়ে এতটুকু বদলও আসেনি; এখন দরকার কেবল বিশ্বাসের।
বিশ্বাস থাকার সময়ে তিনি জাকির হাসানের মতো তরুণদের আদর্শ হয়ে উঠেন। রান করেন, রেকর্ড গড়েন টানা হাফ সেঞ্চুরির। দলকে জেতান, জেতেন নিজেও। মুমিনুল কি আত্মবিশ্বাসী হয়েই ফিরবেন আজকের পর? তাহলে বাংলাদেশের সাদা পোশাকের ক্রিকেটের শক্তিই আরেকটু বাড়ে!
বাংলাদেশ সময় :১৬৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
এমএইচবি/এএইচএস