ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

টেপ টেনিসে শুরু, ‘সেরা স্বপ্ন’ ছাপিয়ে ছুটছেন নাওয়াজ

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস)  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২৩
টেপ টেনিসে শুরু, ‘সেরা স্বপ্ন’ ছাপিয়ে ছুটছেন নাওয়াজ

চট্টগ্রাম থেকে : সেদিনই কেবল বাংলাদেশে এসেছেন। রংপুর রাইডার্সের ক্যাম্পেও প্রথমবার।

এটা-ওটা মিলিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই মোহাম্মদ নওয়াজের। কখনো দলের ফেসবুক পেজের জন্য ভিডিও শ্যুট করতে হচ্ছে, একটু পর মেটাচ্ছেন কারো সেলফি তোলার আবদার। এর মধ্যে একজন এলেন নাওয়াজের এক বাংলাদেশি ভক্তের জন্য ভিডিও বার্তা নিতে।

তবুও এর ভেতর গিয়েই তাকে বলতে হলো, ‘আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই...’। পাকিস্তানি অলরাউন্ডার এতক্ষণ ধরে হাসিমুখেই সবার আবদার মিটিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের আবদারেও নিরাশ হতে হলো না তার কাছে। বললেন, ‘ভাই, একটু বোলিং করবো। এরপর বলি?’ নওয়াজকে জবাবে ‘ঠিক আছে...’ বলে শুরু হলো অপেক্ষা।

তিনি শুধু নিজেই বল করলেন না, রীতিমতো সব নেট বোলারের ‘ক্লাস’ নিতে শুরু করলেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় একাডেমির এসব ক্রিকেটাররাও ভীষণ মজা পাচ্ছিলেন, বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্ট। তাতেও সমস্যা নেই, কিন্তু ঝামেলা হলো একটু পর বাস ছাড়ার তাড়া দেবে; নওয়াজ চাইলেও মন মতো কথা বলতে পারবেন না।

কিন্তু নিজের শৈশব-কৈশোরের ছাপ যাদের মধ্যে দেখেন, নাওয়াজ তাদের ছেড়ে আসার তাড়া পেলেন না কিছুতেই। রাওয়ালপিন্ডির রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয়েছিল তার ক্রিকেট। একটু একটু করে স্বপ্ন বোনার শুরু এরপর। ডিকে আকবর ক্রিকেট একাডেমি, অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৯, জাতীয় দল, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ...মোহাম্মদ নাওয়াজ পাড়ি দিয়ে এসেছেন লম্বা পথ।

ওই গল্পই তিনি শোনাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আউটার মাঠে দাঁড়িয়ে, ‘আমার শুরুর দিনগুলো ছিল সাধারণ ছেলেদের মতোই। রাস্তায় খেলতে খেলতে বেড়ে উঠা। টেপ টেনিসে খেলতাম। কেন খেলা শুরু করলাম, জানি না। তবে এরপর ডিকে আকবর ক্রিকেট ক্লাবে সত্যিকারের ক্রিকেট বলে খেলি, তখন আমার বয়স প্রায় ১৫ বছর। এরপর আস্তে আস্তে...। ’

নাওয়াজ লম্বা পথে ছুটেছেন অনেক দূর। পাকিস্তানের হয়ে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, টেস্ট; সবই খেলে ফেলেছেন। পারফর্মও করেছেন প্রায়ই। তবুও তার জীবনে বোধ হয় আলাদা ২০২২ এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার জেতা।

ওই ম্যাচে ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট, ব্যাটারের নাম বললে বোধ হয় নাওয়াজের উইকেটের মূল্য বোঝা যাবে আরেকটু ভালোভাবে- সূর্যকুমার যাদব আউট হয়েছিলেন তার বলে। এরপর ব্যাট হাতে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ২০ বলে ৪২ রানের ঝড়। ম্যাচসেরার পুরস্কার দিতে খুব ভাবতে হয়নি সেদিন।

নাওয়াজের কাছে কত বড় এই অর্জন? প্রশ্নটা করতেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘পাকিস্তানের যেকোনো ছেলেকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই দেখবেন বলবে, এমন কিছু করতে পারা তার সেরা স্বপ্ন। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম না। ওই ম্যান অব দ্য ম্যাচটা আমাকে ক্রিকেটার হিসেবেও বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। ’

‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সবাই দেখে। পুরো ক্রিকেট দুনিয়াতেই এটা অনেক বড় ম্যাচ। সেদিন আমি শুরুতে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবে জানতাম, খেলাটা কতটা দামী। আমি পারফর্ম করলে, কত বড় হবে ব্যাপারটা সেটাও বুঝতে পেরেছি অবশ্যই। ’

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রায় লাখখানেক দর্শকের সামনে বছরখানেক আগের অবিশ্বাস্য ওই ম্যাচ কিংবা যেকোনো সময়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানে বাড়তি রোমাঞ্চ। যুগের পর যুগ ধরেই। দূর দেশে দাঁড়িয়েও টের পাওয়া যায় বেশ স্পষ্ট। জার্সি গায়ে পুরো পৃথিবীর ওই রোমাঞ্চ কতটুকু ছুঁয়ে যায় ক্রিকেটারদের?

নাওয়াজ বলছিলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ যখনই হয়, পুরো দুনিয়ার মানুষই দেখে। আমার জন্য কেন, দুই দেশের যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই বিশাল বড় ম্যাচ। আমি একবার ম্যাচে সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারও পেয়েছিলাম। সবসময়ের উজ্জ্বল স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটি হয়ে থাকবে এটা। ’

স্বপ্নের সীমানা নাকি আকাশ ছুঁয়ে যায় কখনো কখনো, মনীষিরা বলেন এমন। নাওয়াজের জন্য ওই স্বপ্নের দড়ি টপকে যাওয়া হয়েছে বহু আগেই। রাউয়ালপিন্ডিতে সাদা-কালো টিভি পর্দায় ছোটবেলায় দেখেছেন অনেক ম্যাচ। এখন তিনি প্রায়ই মাঠ থেকে নেন ওই রোমাঞ্চের স্বাদ। এই অনুভূতি আদতে কেমন?

প্রশ্নটা শুনে নাওয়াজ বললেন, ‘আমার মনে হয় খেলতে নামা ও টিভিতে দেখা ব্যাপারটা অনেকটা একই রকম। যখন আপনি খেলা দেখবেন, স্নায়ুচাপটা টিভির এই পাড়ে থেকেও অনুভব করতে পারবেন। আর খেলোয়াড় হিসেবে যখন মাঠে যাবেন, শুরুতে কিছুটা নার্ভাসনেস থাকবে। যখন খেলা শুরু হবে, তখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে এমনিতেই। ’

স্নায়ুচাপ সামলে দেওয়ার কাজটা ভালোই পারেন নাওয়াজ। পেশোয়ার জালমির হয়ে একটা ম্যাচের কথাই ধরুন। প্রথম তিন ওভারেই দিয়ে দিয়েছিলেন ৪৬ রান। নাওয়াজের ওপরই গুরু দায়িত্ব পড়ে শেষ ওভারে ছয় রান না দেওয়ার। তিনি সেটা পারলেনও!

‘আমি চাপ অনুভব করেছি, কিন্তু ইতিবাচক চাপ...’ নাওয়াজ বলেন এমন। চাপ মানে ভয়, হতাশা ঘিরে ধরার শঙ্কা। ইতিবাচক চাপ আবার কেমন? নাওয়াজের কাছে জিজ্ঞাসার জবাব এলো এমন, ‘আমার মনে হয় ইতিবাচক চাপ হচ্ছে, এই ম্যাচে আমাকে ভালো করতে হবে। এর বাইরে তেমন কিছু নিয়ে না ভাবা। ’

তাড়াহুড়োয় নাওয়াজের অনেক কথাই শোনা হলো না। হোটেলে ফিরতে বাস তৈরি, সবাই উঠেও পড়েছেন। যেতে যেতে নাওয়াজ বললেন, ‘দোয়া করবেন ভাই...’। তাকে বলা হলো না, আপনার শক্ত মানসিকতা ধরে রাখলে- সাফল্য বা ব্যর্থতা কখনোই নামিয়ে দিতে পারবে না; সেরা স্বপ্ন ছাপিয়ে ছুটতেই পারেন চাইলে।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৫৮ ঘণ্টা, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩
এমএইচবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।